প্রবর্তক সংঘ এবং মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে অবিস্মরণীয় এক নাম

জোনাকী দত্ত | শনিবার , ৮ এপ্রিল, ২০২৩ at ৫:৫৭ পূর্বাহ্ণ

১৯০২ সালের ৭ জুলাই চট্টগ্রামের পটিয়া থানার ধলঘাট গ্রামে পিতা মহেন্দ্রলাল চৌধুরী ও মা মনোরমা চৌধুরীর প্রথম সন্তান বীরেন জন্মগ্রহণ করেন। ছেলেবেলা থেকেই তিনি ছিলেন সত্যনিষ্ঠ ও আধ্যাত্মিক চেতনায় উজ্জীবিত। মহেন্দ্রলাল চৌধুরী বিলাতি দ্রব্য বর্জন আন্দোলনে যোগ দিয়ে এলাকার জনগণের মধ্যে ব্রিটিশ বিরোধী চেতনা গড়ে তোলেন। বীরেন তাঁর পিতার প্রভাবে নিজের অতি প্রিয় শান্তিপুরী ধুতিতে আগুন লাগিয়ে দেয়।

 

তাঁর লেখাপড়া শুরু ধলঘাটের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। তিনি ১৯১৪ সালে চট্টগ্রাম শহরের কলেজিয়েট স্কুল থেকে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। এরপর চট্টগ্রাম কলেজ থেকে আই.এ পাশ করে দর্শনশাস্ত্রে অনার্স নিয়ে বি.তে ভর্তি হন। প্রবর্তক পত্রিকার মাধ্যমে ফরাসী শাসিত চন্দননগরের শ্রী মতিলাল রায় দেশবাসীর

কাছে একশত সর্বত্যাগী যুবক চেয়েছিলেন। তাঁর ডাকে সাড়া দিয়ে চট্টগ্রামের অন্যান্য ত্যাগী যুবকদের সাথে বীরেনও মিলিত হয়েছিলেন। ১৯২১ সালে কলকাতার চন্দননগর এবং চট্টগ্রামের শাকপুরাতে প্রবর্তকের যাত্রা শুরু হয়। ১৯৩৩ সালের ৭ জুলাই প্রবর্তক সংঘের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক হেমচন্দ্র রক্ষিতের

অকাল প্রয়াণের পর মহৎকর্মী শ্রী বীরেন্দ্রলাল চৌধুরী প্রবর্তক সংঘের সম্পাদকের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তিনি ১৯৩৬ সালে প্রবর্তক আশ্রমে প্রবর্তক প্রেস, ১৯৩৯ সালে প্রবর্তক ব্যাংক, ১৯৪৪ সালের ৯ জানুয়ারি অনাথ বালকদের জন্য শিশুসদন স্থাপন করেন। ক্রমান্বয়ে আবাসিক অনাথ মেয়েদের জন্য মৈত্রেয়ী ভবন,

ছেলেদের জন্য শংকর ভবন, আবাসিক ছাত্রদের জন্য মতিলাল ভবন তৈরি হয়। চিকিৎসার জন্য প্রতিষ্ঠিত হয় আরোগ্য নিকেতন। ১৯৭১ এর ১৫ মার্চ মুক্তিযোদ্ধারা পাকসৈন্যদের বাধা দেওয়ার জন্য আশ্রমের পাহাড়ে অবস্থান নেন। ২৯ মার্চ তাঁদের সেবার কাজে নিয়োজিত থাকাকালীন সাত জন ছাত্র

পাকসেনার গুলিতে আহত হন। এই সংকটের সময় দাদামণি অক্লান্ত পরিশ্রম করেন। তিনি আশ্রমবাসীদের নিরাপত্তার জন্য সবাইকে ধলঘাট হাইস্কুলে পাঠিয়ে দেন। সকলে বলা সত্ত্বেও তিনি আশ্রম ত্যাগ করেননি। তাঁর প্রতিজ্ঞা, যে আশ্রম তিনি তিলে তিলে গড়ে তুলেছেন সে আশ্রমের মাটিতেই তিনি জীবন দেবেন।

৩০ মার্চ দুপুর দু’টায় পাকসেনারা সমগ্র আশ্রম দখল করে। তখন দাদামণির সাথে ছিলেন শিক্ষক তারাশঙ্কর কর, কর্মী স্বপন সরকার, আনসার দলপতি মো. নুরুল আফসার এবং দারোয়ান দুর্গাচরণ। এই পাঁচজনকে কিভাবে হত্যা করেছিল তা জানা যায়নি এবং তাঁদের মৃতদেহও পাওয়া যায়নি। বিশ্বের মানচিত্রে

বাংলাদেশ আজ স্বাধীন রাষ্ট্র। প্রবর্তক সংঘ থেকে অনেক মূল্যবান সম্পদ এবং মহান মানুষেরা হারিয়ে গেলেও এখনো প্রবর্তক সংঘ তার সেবার মহিমায়, সগৌরবে, নানা চড়াই উৎরাই এর মধ্য দিয়ে উন্নতির অগ্রযাত্রায় পৌঁছে যাচ্ছে। বীরেন দাদামণি এই সংঘ এবং মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে অবিস্মরণীয় হয়ে থাকবেন। তাঁর ৫২তম প্রয়াণ দিবসে এই বীর শহীদসহ সকল শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করছি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধজলতরঙ্গ
পরবর্তী নিবন্ধবুনো ইচ্ছেগুলো একান্তই আমার