সচেতনতার মাধ্যমে অগ্নি-দুর্ঘটনার ঝুঁকি কমিয়ে আনা সম্ভব

| শনিবার , ৮ এপ্রিল, ২০২৩ at ৫:৫৪ পূর্বাহ্ণ

সম্প্রতি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে। ভয়াবহ এক আতঙ্কের নাম আগুন। তাই আগুনকে বলা হয় সর্বভূক। কোনো কিছু বুঝে ওঠার আগেই ঘটে যাচ্ছে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা। অগ্নিকাণ্ডে নিমিষেই ছাই হয়ে যায় তিল তিল করে গড়ে তোলা অনেক মূল্যবান সম্পতি। সেই সাথে ঘটে প্রাণহানি। চোখের সামনে জলজ্যান্ত প্রাণ পুড়ে ছাই হয়ে যায়। পুড়ে যায় বাড়ি, গাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।

 

গত ৬ এপ্রিল দৈনিক আজাদীতে ‘অগ্নিঝুঁকিতে নগরীর ছোটবড় ২৯ মার্কেট’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, নগরীর ছোট বড় ২৯ মার্কেট অগ্নিঝুঁকিপূর্ণ চিহ্নিত করে প্রায় চার বছর আগে সতর্কীকরণ ব্যানার সাঁটিয়ে দেয় ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর চট্টগ্রাম। এসব

মার্কেটের ব্যবসায়ীদের অগ্নিনিরাপত্তা সরঞ্জাম কেনা ও ফায়ার লাইসেন্স নেয়ার জন্যও উদ্বুব্ধ করা হয়। কিন্তু এত বছর পেরিয়ে গেলেও সেই আগের অবস্থায় রয়েছে বলছেন ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষ। এমনকি সিংহভাগ ব্যবসায়ীর কাছে ফায়ার এক্সটিংগুইসার বা অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্রও নেই।

ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা জানান, নগরীর ঝুঁকিপূর্ণ মার্কেটের তালিকা তৈরি করার পর থেকে ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা বারবার সেসব মার্কেটে ধর্না দিয়েছেন। এছাড়া বিভিন্ন সময় ব্যবসায়ীদের চিঠি পাঠানোর পরেও কাঙ্ক্ষিত সাড়া পাওয়া যায়নি। তারা বারবার উদাসীনতার পরিচয় দিয়েছেন। তবে বর্তমানে

চট্টগ্রাম ফায়ার সার্ভিসের যান্ত্রিক সক্ষমতা বেড়েছে। ইতিমধ্যে যুক্ত হয়েছে তিনটি টার্ন টেবিল লেডার (টিটিএল)। এই গাড়িগুলোতে দীর্ঘ একটি মই থাকে। এই মইয়ের মাধ্যমে ১৭তলা থেকে সর্বোচ্চ ২০তলা ভবন পর্যন্ত পানি ছিটানো সম্ভব হবে। এছাড়া রাসায়নিক অগ্নিকাণ্ড নির্বাপনে রয়েছে দুটি বিশেষায়িত গাড়ি। এর

মধ্যে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা রয়েছে। যার মাধ্যমে কাছ থেকে ফোম দিয়ে আগুন নেভানো সম্ভব। এছাড়া ২১ হাজার লিটার পানির ধারণক্ষমতা সম্পন্ন আরেকটি বিশেষায়িত গাড়িও যুক্ত রয়েছে ফায়ার সার্ভিসের বহরে। প্রতিবেদনে ফায়ার সার্ভিসের তালিকাভুক্ত অগ্নিঝুঁকিপূর্ণ ২৯ মার্কেটের নাম উল্লেখ করা হয়েছে।

অতি সম্প্রতি রাজধানীর ফুলবাড়িয়ার বঙ্গবাজারে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। আগুন নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসের ৫০টি ইউনিটের সঙ্গে যোগ দিয়েছিলেন সেনা ও বিমান বাহিনীর সদস্যরা। তবু ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ব্যবসায়ীদের সব পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। এ অগ্নিকাণ্ডে প্রায় ৪ হাজার দোকান পুড়ে গেছে। বিশেষজ্ঞরা

বলেন, দেশে দিন দিন বেড়ে চলছে অনাকাঙ্ক্ষিত বিস্ফোরণ ও অগ্নিদুর্ঘটনা। আগুনে দগ্ধ হয়ে প্রাণ হারাচ্ছে অনেক মানুষ এবং এরই সঙ্গে আগুনে পুড়ে শত শত কোটি টাকার সম্পদ নষ্ট হচ্ছে। কিন্তু এ ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের সম্পর্কে আমরা বেশির ভাগ মানুষই অসচেতন। মানবজীবনে দুর্ঘটনা সম্পূর্ণরূপে এড়িয়ে চলা

সম্ভব নয়। কিছুটা প্রাকৃতিক কিংবা দৈববলেই বিভিন্ন ধরনের দুর্ঘটনার সম্মুখীন হতে হয় আমাদের। সেই উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবিলাও করতে হয়। কিন্তু যখন কোনো দুর্ঘটনা নিজেদের উদাসীনতার কারণে সংঘটিত হয় এবং এর পুনরাবৃত্তি ঘটতেই থাকে, তখন তা একটি জাতির জন্য চরম দুর্ভাগ্যজনকই বটে।

ক্ষয়ক্ষতি যেমনই হোক না কেন, আগুন কিন্তু সবসময় মারাত্মক। কারণ ছোট ছোট আগুনে মানুষ না পুড়লেও পুড়ছে মানুষের স্বপ্ন।

ভবন নির্মাণে অনিয়ম, অবৈধ গ্যাস বা বিদ্যুৎ সংযোগ ও তদারকির অভাবসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা ও সচেতনতার অভাবেও এসব বিস্ফোরণ ও অগ্নিকাণ্ডের আশঙ্কাকে বিশেষজ্ঞরা উড়িয়ে দেন না। তাঁরা বলেন, সেবা সংস্থাগুলোর নিয়মিত পর্যবেক্ষণ, পরীক্ষণ ও মেরামত এবং সংশ্লিষ্ট সকলের সচেতনতার মাধ্যমে এসব দুর্ঘটনার ঝুঁকি কমিয়ে আনা সম্ভব।

আগুন লাগার যত কারণই থাকুক, অনেক সময় দেখা যায় আমাদের অবহেলা জনিত কারণে ঘটে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা। তবে বেশিরভাগ অগ্নিকাণ্ড ঘটছে বৈদ্যুতিক ত্রুটির কারণে। তাই অগ্নিকাণ্ড থেকে বাঁচতে এখন সবার আগে যেটা প্রয়োজন, সেটা হলো আমাদের সচেতনতা। আমরা যদি সচেতন না হই বা সুষ্ঠু

পরিকল্পনা গ্রহণ না করি আগামীতে আমাদের জন্য আরও ভয়াবহ অবস্থা অপেক্ষা করছে। জীবনযাপনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সচেতনতার বিকল্প নেই। সচেতনতা বা সতর্কতাই সব নিরাপত্তা দিতে পারে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে