মানবতার কল্যাণে ঐশী বিধান কোরআন মজিদ

আ ব ম খোরশিদ আলম খান | বুধবার , ৫ এপ্রিল, ২০২৩ at ৪:৪৬ পূর্বাহ্ণ

এখন চলছে পবিত্র রমজান মাসের দ্বিতীয় পর্ব মাগফেরাত। রোজাদাররা আগের পাপ মোচনের জন্য এই মাগফেরাতে আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ জানাবেন। বছরের এই একটি মাস রমজানের মুহূর্তগুলো কাটে ঈমানদার জনতার উচ্ছ্বাসমুখরতায়, অতীব উৎসাহউদ্দীপনায়। মানুষের সঙ্গে মহান স্রষ্টা আল্লাহর সংযোগসম্পর্ক নৈকট্য সুদৃঢ় হয় পবিত্র রমজানের সিয়াম সাধনা এবং নানামুখী ইবাদতবন্দেগির উসিলায়। ইবাদতআরাধনার বহু উপায় আছে। এই উপায় এবং ইবাদত বন্দেগি কীভাবে করা হবে তার সঠিক পদ্ধতি ও রূপরেখা পেশ করেছেন হযরত মুহাম্মদ মুস্তফা (.)। আল্লাহপাক তো মানুষ সৃষ্টির একটি বড় কারণ হিসেবে স্বয়ং ঘোষণা দিয়ে রেখে গেছেন ‘ওয়ামা খালাকতুল জিন্না ওয়াল ইনছা ইল্লা লিয়া’বুদুন’– ‘আমি মানুষ ও জ্বিন জাতিকে আমার ইবাদতের জন্যই পাঠিয়েছি।’ মহান প্রভু আল্লাহর ইবাদত যথাযথ উপায়ে সঠিক নিয়মে করার বাস্তব নির্দেশনা রয়েছে মহানবীর (.) বাণী ও হাদিস শরিফে বেশ উজ্জ্বলভাবে। মহানবী (.) ইসলামের প্রবর্তক এবং ইসলামি জীবন দর্শনের মডেল ও রূপকার হিসেবে যা কিছু মানুষের জন্য করণীয় নির্ধারণ করেছেন তাই আল্লাহর নৈকট্য লাভের জন্য যথেষ্ট। কিছু ইবাদতের কথা কোরআন মজিদে আল্লাহপাক সরাসরি মানুষের উদ্দেশ্যে বলেছেন। যেমন নামাজ রোজা হজ জাকাত ইত্যাদি অতি আবশ্যকীয় ইবাদত বা করণীয়গুলো কোরআন মজিদে সরাসরি নির্দেশিত আল্লাহর পক্ষ থেকে। এর বাইরেও বহু করণীয় আছে। আল্লাহর সন্তুষ্টি ও নৈকট্য অর্জনের অনেক পথপদ্ধতি রয়েছে। যা মানুষের সামনে নানাভাবে পেশ করেছেন মহানবী (.)। কোরআন মজিদের নির্দেশ এবং মহানবীর (.) প্রদর্শিত যাবতীয় কাজ ও করণীয় নিয়েই ইসলামের ভিত্তি প্রতিষ্ঠিত। মানুষকে হেদায়েতের পথে, সৎ কাজে ও কর্তব্যে দায়িত্বনিষ্ঠ হওয়ার জোরালো আহ্বান রয়েছে ঐশী গ্রন্থ কোরআন মজিদে। আল্লাহপাক বলেন, তিব ইয়ানাল্লিকুল্লি শাইয়্যিনপ্রত্যেক বস্তু, প্রতিটি বিষয়ের সুস্পষ্ট বর্ণনা রয়েছে কোরআন মজিদে। সুরা ইয়াসিনে আল্লাহপাক কোরআন মজিদকে অভিহিত করেছেনওয়াল কুরআনিল হাকিম– ‘বিজ্ঞানময় কোরআন’ হিসেবে। আজ শুধু মুসলিম মনীষীরা নয়অন্য ধর্মবিশ্বাসী জ্ঞানীগুণী পণ্ডিত, বিজ্ঞানী ও বিদগ্ধজনের মধ্যে কোরআন মজিদের ব্যাপক পঠনপাঠনঅধ্যয়নগবেষণা শুরু হয়েছে। কোরআন মজিদের অধ্যয়নে এসব জ্ঞানপিপাসু রহস্যসন্ধানী মানুষের মাঝে নিত্যনতুন চিন্তা, জিজ্ঞাসা ও রহস্যের দুয়ার দিনে দিনে উন্মুক্ত হচ্ছে। দারুণ বিস্ময়, কৌতূহল, রহস্যভেদী মন নিয়ে কোরআন মজিদের প্রতিটি বর্ণ, শব্দ ও বাক্যের তাৎপর্য অনুধাবনে বিশ্বের বিদ্বৎ সমাজ আজ বহু দূর এগিয়েছে। কোরআন মজিদ কেবল মুসলমান সমপ্রদায়ের ধর্মগ্রন্থ তা নয়, সর্বমানবতার কল্যাণের জন্যই কোরআন অবতীর্ণ হয়েছে।

কোরআন মজিদকে বলা হয়েছে– ‘হুদাল্লিন্নাছ’ তথা মানবজাতির পথপ্রদর্শক। যদিও একটি সমপ্রদায় কুরআন মজিদকে ধর্মগ্রন্থ হিসেবে মানে, কিন্তু সকল জাতিগোষ্ঠী নির্বিশেষে কোরআনের নির্দেশনা অনুসরণে জীবনকে সুন্দর ও সমৃদ্ধ করতে পারে। কোরআনের হেদায়তের বাণী সর্বজনীন ও উন্মুক্ত। ইসলাম একটি জীবনমুখী বাস্তববাদী জীবন ব্যবস্থা হিসেবে এর বিশ্বজনীন আবেদন ও প্রাসঙ্গিকতা এখন প্রশ্নাতীত। আর ইসলামি জীবন দর্শনের সেরা গাইডবুক হচ্ছে ঐশী গ্রন্থ পবিত্র কোরআন মজিদ। ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ, দেশ, রাজনীতি, অর্থ ব্যবস্থা, শাসন ব্যবস্থা থেকে শুরু করে মানুষকে ঘিরে যা কিছু দুনিয়ায় আবর্তিত সব কিছুরই অনুপুঙ্খ বর্ণনা ও করণীয় নিয়ে কোরআন মজিদ প্রেরিত হয়েছে মানুষের মাঝে। কোরআন মজিদ তেলাওয়াতে রয়েছে অশেষ সওয়াব বা পুণ্য। প্রতিটি অক্ষরের বিনিময়ে দেয়া হয় দশটি পুণ্য। প্রিয়নবী (.) বলেছেন ‘তোমরা সব সময় কোরআন মজিদ পড়ো। কারণ যারা সর্বদা কোরআন শরিফ তেলাওয়াত করে কিয়ামতের মুসিবতের দিনে কোরআন শরিফ তার জন্য সুপারিশ করে জান্নাতে নিয়ে যাবে।’ কোরআন মজিদ পড়তে হবে ধীরে সুস্থে, প্রতিটি শব্দ বর্ণ বাক্য স্পষ্টভাবে উচ্চারণ করতে হবে। কোরআন মজিদ পড়ার বিষয়ে আল্লাহর নির্দেশওয়ারাত্তিলিল কুরআন তারতিলা অর্থাৎ ‘তোমরা যথাশুদ্ধভাবে কোরআন শরিফ পড়ো।’ [সূরা মুয্‌যাম্মিল] তাই সহি শুদ্ধভাবে এবং অর্থসহ কোরআন তেলাওয়াতে আমাদের সচেষ্ট হতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধডোনাল্ড ট্রাম্প গ্রেপ্তার
পরবর্তী নিবন্ধবঙ্গবাজারের আগুনে ঈদের স্বপ্ন ছাই