ডিসেম্বরেই গাড়ি চলাচলের টার্গেট

দ্রুত এগিয়ে চলেছে নির্মাণ কাজ, ৭০ শতাংশ শেষ

হাসান আকবর | বুধবার , ৫ এপ্রিল, ২০২৩ at ৪:৪৪ পূর্বাহ্ণ

নগরীর এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের ুপর দিয়ে আগামী ডিসেম্বর মাসে গাড়ি চলবে। মন্ত্রণালয় থেকে অক্টোবরের মধ্যে কাজ শেষ করার নির্দেশনা প্রদান করা হয়। অবশ্য সিডিএ নভেম্বরের মধ্যে কাজ শেষ করে ডিসেম্বরে যান চলাচল শুরু করার টার্গেট নিয়েছে। নানা প্রতিকূলতায় দীর্ঘদিন আটকে থাকা প্রকল্পটি শেষ করার জন্য সংশ্লিষ্টরা রাতেদিনে কাজ করছেন।

প্রকল্পটির বাস্তবায়নকারী সংস্থা চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের ৭০ শতাংশের বেশি কাজ শেষ হয়েছে। বাকি কাজ অক্টোবরের মধ্যে সম্পন্ন করার লক্ষ্য নিয়ে অগ্রসর হচ্ছে তারা। পতেঙ্গা থেকে কাঠগড় পর্যন্ত এলাকায় এক্সপ্রেসওয়ের রাস্তা তৈরির কাজ চলছে। রাতেদিনে চলছে কার্পেটিং। এদিকে টাইগারপাস এলাকায় পিলার তৈরি এবং লালখান বাজার এলাকায় পাইলিংয়ের কাজ চলছে। পতেঙ্গার দিক থেকে কার্পেটিং সম্পন্ন করে ইপিজেড, বন্দর, বারিক বিল্ডিং ও আগ্রাবাদ হয়ে আসতে আসতে লালখান বাজারে স্প্যান বসে যাবে। সবকিছু মিলে দ্রুত প্রকল্পটির কাজ শেষ করার জন্য চেষ্টা চালাচ্ছে সিডিএ।

সংশ্লিষ্ট বলছেন, লালখান বাজার থেকে পতেঙ্গার টানেল রোড পর্যন্ত ১৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মিত হলে শহরের যে কোনো অংশ থেকে ২০২৫ মিনিটে বিমানবন্দরে পৌঁছানো সম্ভব হবে। লালখান বাজার থেকে পতেঙ্গা বিচ পর্যন্ত বলা হলেও মূলত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে শুরু হচ্ছে বহদ্দারহাট থেকে। বহদ্দারহাট ফ্লাইওভার থেকে নেমে মুরাদপুরলালখান বিদ্যমান ফ্লাইওভারের সাথে নির্মাণাধীন এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে যুক্ত করা হচ্ছে। জমিয়তুল ফালাহ মসজিদের পাশে ফ্লাইওভার দুটি যুক্ত হচ্ছে। এতে করে মুরাদপুর থেকে ফ্লাইওভারে ওঠা কোনো গাড়ি পতেঙ্গা সৈকত বা টানেল রোড পর্যন্ত পৌঁছে যাবে। পতেঙ্গা থেকে শহরে আসা গাড়িগুলো টাইগারপাস হয়ে লালখান বাজারে ম্যাজিস্ট্রেট কলোনির সামনে নিচে নামবে। যাদের মুরাদপুর, বহদ্দারহাট কিংবা ওই রোড ধরে অন্য কোথাও যাওয়া দরকার তারা লালখান বাজার থেকে আবার ফ্লাইওভারে চড়তে পারবে।

টাইগারপাসে পাহাড় না কাটার জন্য এক্সপ্রেসওয়ের চার লেনের মধ্যে দুই লেইন নিচে নামিয়ে দিয়ে ডিজাইন করা হয়। মূল ফ্লাইওভার থেকে পরে বিভিন্ন পয়েন্টে লুপ ও র‌্যাম্প নামানো হবে। এগুলো করতে আরো কিছুদিন সময় লাগলেও মূল ফ্লাইওভারে ডিসেম্বরে গাড়ি চলাচল শুরু হবে বলে সিডিএর নির্বাহী প্রকৌশলী এবং প্রকল্প পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার মাহফুজুর রহমান জানিয়েছেন।

২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণ কাজ উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শুরুতে ৩ হাজার ২৫০ কোটি ৮৩ লাখ টাকা ব্যয় নির্ধারণ করে প্রকল্পটির কাজ শুরু করা হয়। পরে ডিজাইন পরিবর্তনে নতুন ভূমি অধিগ্রহণসহ জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাওয়ায় ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ৪ হাজার ২শ ৯৮ কোটি টাকায়। শুরুতে প্রকল্পটি নিয়ে সমস্যা না হলেও পরে দফায় দফায় সংকট তৈরি হয়। বন্দর এলাকায় বন্দরের নিরাপত্তার জন্য ফ্লাইওভারের ডিজাইন পাল্টাতে হয়। বন্দরের কাছ থেকে নতুন করে জমি নিতে হয়। এসব কাজের জন্য প্রকল্পটি দীর্ঘদিন আটকে থাকে। বিদ্যুৎ, গ্যাস ও টেলিফোনসহ সার্ভিস লাইন সরানোর কাজ আটকে থাকা।

এরপর নতুন সংকট তৈরি করে দেওয়ানহাট ওভারব্রিজ। দেওয়ানহাটে রেললাইনের উপর ব্রিজের উচ্চতা এবং রেলওয়ের অনুমোদন নিয়ে দীর্ঘদিন প্রকল্পটি ঝুলে থাকে। সেই অনুমোদন পাওয়ার পর নতুন সংকট সৃষ্টি করে টাইগারপাসের পাহাড়। পাহাড়ের সৌন্দর্য রক্ষার জন্য উপর দিয়ে ফ্লাইওভার নির্মাণের বিরোধিতা করেন অনেকে। আবার ডিজাইন পাল্টানো হয়। চার লেনের ফ্লাইওভারের দুই লেন উপরে এবং দুই লেন নিচে নামিয়ে নতুন করে ডিজাইন করা হয়। অবশেষে সব সুরাহা করার পর কাজে গতি পায়।

ইতোমধ্যে দফায় দফায় সময় বাড়ানো হয়েছে। খরচও বেড়েছে। শেষ পর্যন্ত মূল এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণ কাজ আগামী অক্টোবরনভেম্বরের মধ্যে শেষ হবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীরা।

এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের প্রকল্প পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার মাহফুজুর রহমান বলেন, আমরা দ্রুত কাজ শেষ করার উদ্যোগ নিয়েছি। কোথাও কাজ থেমে নেই। সমন্বিতভাবে পুরো অংশে কাজ করছি। পতেঙ্গার দিকে থেকে কাজ শেষ করে ক্রমান্বয়ে শহরের দিকে আসছি। প্রত্যাশিত সময় আগামী ডিসেম্বরে যান চলাচল শুরু করতে পারব বলে আশা করছি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধএবার ইউপিডিএফ সদস্যকে গুলি করে হত্যা
পরবর্তী নিবন্ধসিলেটে বয়ের কাজ, এক মাস পর প্রধান আসামি গ্রেপ্তার