সময়োপযোগী নতুন মৌলিক নীতি গ্রহণ করতে হবে

| সোমবার , ৩ এপ্রিল, ২০২৩ at ৫:২৩ পূর্বাহ্ণ

সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম)-এর সাম্প্রতিক জরিপে দেখা গেছে, ছয় মাসের ব্যবধানে খাদ্য কিনতে খরচ বেড়েছে ১৭ দশমিক ২ শতাংশ। শহরাঞ্চলে এই খরচ ১৯ শতাংশ এবং পল্লী অঞ্চলে ১৫ দশমিক ৫ শতাংশ। গত বুধবার রাজধানীর মহাখালীর ব্র্যাক সেন্টারে আয়োজিত ‘কেমন আছে নিম্ন আয়ের মানুষ’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে তথ্য উপস্থাপন ও বিশ্লেষণ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ও সানেমের নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান। এই জরিপে আরো বলা হয়, গত ছয় মাসে একটি পরিবারের খরচ বা ব্যয় বেড়েছে ১৩ দশমিক ১ শতাংশ। গ্রাম এলাকায় এটি ১২ দশমিক ৪ শতাংশ এবং শহর এলাকায় ১৩ দশমিক ৯ শতাংশ।

অর্থনীতিবিদদের মতে, বেকারত্ব ও দারিদ্র্য মূলত একসঙ্গে বাস করে। এরা মুদ্রার এপিঠ আর ওপিঠ। একে অন্যের সহযাত্রী। বেকারত্ব নানা ধরনের সমাজ ব্যাধি ও অর্থনৈতিক সংকটের জন্ম দেয়। ফলে সার্বিক আর্থসামাজিক ও রাজনৈতিক অবক্ষয় ঘটে। বাংলাদেশের সামাজিক প্রেক্ষাপটে বেকারত্ব বৃহত্তর পারিবারিক পরিমন্ডলে অর্থ সঞ্চয়ে ধস নামায়। সঞ্চয় কমে গিয়ে বিনিয়োগের অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়। বিনিয়োগ কমে গেলে আমদানিরপ্তানি কমে যায়, উৎপাদন কমে যায়, ভোগ্যপণ্যের চাহিদা কমে যায়, রাজস্ব কমে যায় ইত্যাদি। এতে গ্রামের চাহিদা কমে যায়। আর সেই সুবাদে বেকারত্ব বেড়ে যায়। বেড়ে যায় অপরাধমূলক ঘটনা। পরিণামে সামাজিক মূলধনের লোকসান ঘটে। নৈতিক ও বৈষয়িক উভয় রকমের দারিদ্র্যই জটিল আকার ধারণ করে। অন্যদিকে দেশের রাজনৈতিকঅর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিতভাবেই আর্থসামাজিক উন্নয়নের পথ সুগম করে। স্থিতিশীল পরিবেশে বিনিয়োগ বৃদ্ধি পায়, উৎপাদন বাড়ে, নতুন কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয় এবং আয়ের সুষম বন্টন নিশ্চিত হয়। এ প্রক্রিয়ায় দেশে গণতান্ত্রিক চর্চা বৃদ্ধি পায়, সমাজে শান্তি ও নিরাপত্তা ফিরে আসে। ফলে বিনিয়োগ ত্বরান্বিত হয়, জাতীয় সম্পদ বৃদ্ধি পায়, আর্থসামাজিক উন্নয়নের মাধ্যমে দারিদ্র্য হ্রাস পায়।

অর্থনীতিবিদ বলেন, বাংলাদেশসহ অনেক উন্নয়নশীল দেশ রয়েছে যে দেশগুলি বর্তমানে অর্থনৈতিক বা আর্থসামাজিক সংকটে নিপতিত। তবে আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলিকে এখন বিশ্বায়নের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সময়োপযোগী নতুন মৌলিক নীতি গ্রহণ করতে হবে। অর্থনীতিবিদ ড. মইনুল ইসলাম সম্প্রতি দৈনিক আজাদীতে লিখেছেন, ‘আয়বৈষম্য নিরসন না করলে শ্রমজীবী প্রান্তিক জনগণের দারিদ্র্য নিরসন হবে না। তিনি বলেছেন, ক্রমবর্ধমান আয় বৈষম্য সমস্যা মোকাবেলা করা দুরূহ, কিন্‌্‌তু অসম্ভব নয়। রাষ্ট্রের শীর্ষ নেতৃত্বের সদিচ্ছা এক্ষেত্রে সর্বাগ্রে প্রয়োজন। দক্ষিণ কোরিয়া, তাইওয়ান, গণচীন, ভিয়েতনাম, বিউবা, ইসরাইল এবং শ্রীলংকায় রাষ্ট্র নানা রকম কার্যকর আয় পুনর্বন্টন কার্যক্রম গ্রহণ ও সফলভাবে বাস্তবায়নের মাধ্যমে জিনি সহগ বৃদ্ধিকে শ্লথ করতে বা থামিয়ে রাখতে সক্ষম হয়েছে। এই দেশগুলোর মধ্যে কিউবা, গণচীন ও ভিয়েতনাম এখনো নিজেদেরকে সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র বলে দাবি করে, বাকি দেশগুলো পুঁজিবাদী অর্থনীতির অনুসারী হয়েও শক্তিশালী বৈষম্য নিরসন নীতিমালা গ্রহণ করে চলেছে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশকেও কার্যকর নীতি অনুসরণ দরকার বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। একথা অনস্বীকার্য যে, আমাদের দেশ সামগ্রিকভাবে এগিয়ে চলেছে ব্যাপক সাফল্য নিয়ে। ২০২০ সালে আইএমএফ ঘোষণা করেছে যে, বাংলাদেশেরও মাথাপিছু জিডিপি ভারতের চাইতে বেশি হয়ে গেছে। ২০২৩ সালে বাংলাদেশের মাথাপিছু জিডিপি পাকিস্তানের চাইতে ৮০ শতাংশ বেশি হয়ে গেছে। তাই ড. মইনুল ইসলামের মতো বেশিরভাগ অর্থনীতিবিদই স্বীকার করছে যে, ‘বাংলাদেশের অর্থনীতি অনুন্নয়ন ও পরনির্ভরতার ফাঁদ থেকে মুক্ত হয়ে টেকসই উন্নয়নের পথে যাত্রা করছে। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে আমাদের এমন পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে, যাতে দেশের মানুষের আয়ব্যয়ের সমন্বয় সাধিত হয়। ব্যয় বৃদ্ধি সঙ্গে সঙ্গে আয়েরও যেন বৃদ্ধি ঘটেসেই ব্যবস্থা দরকার।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে