ভাড়ার উপর অর্পিত পঞ্চবার্ষিক কর মূল্যায়নের ধারা থেকে সরে আসার জন্য চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) বিরুদ্ধে গণতান্ত্রিক পন্থায় আন্দোলনের যত ধরনের কর্মসূচি রয়েছে সব প্রয়োগ করেছে চট্টগ্রাম করদাতা সুরক্ষা পরিষদ। তবু সিটি মেয়র ‘কর্ণপাত না করায়’ বাধ্য হয়ে ‘নগর ভবন ঘেরাও’ কর্মসূূচি ঘোষণা করা হয়েছে বলে বলে জানিয়েছেন সংগঠনটির নেতৃবৃন্দ। আগামীকাল বুধবার এ কর্মসূচি পালিত হবে। এর আগে সকাল ১১টায় নগরের কদমতলীতে জড়ো হয়ে মিছিল সহকারে নগর ভবনের দিকে রওয়ানা হবেন তারা।
গতকাল সোমবার চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে লিখিত বক্তব্যে এ তথ্য জানায় করদাতা সুরক্ষা পরিষদের নেতৃবৃন্দ। লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন পরিষদের মুখপাত্র কাজী শহীদুল হক স্বপন। উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের সভাপতি মো. নুরুল আবছার, সহ–সাধারণ সম্পাদক জান্নাতুল ফেরদৌস পপি, মো. হাসান, আব্দুল মালেক, ইসমাইল মনু ও মীর মুহাম্মদ ইসলাম।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, চসিক ২০১৬–১৭ অর্থবছরে পঞ্চবার্ষিক কর মূল্যায়ন প্রক্রিয়ায় দীর্ঘদিনের প্রচলিত নিয়ম আয়তনের ভিত্তিতে গৃহকর নির্ধারণ বাদ দিয়ে স্থাপনার আয়ের উপর গৃহকর নির্ধারণ করে। এতে গৃহমালিকদের হোল্ডিং ট্যাক্স রাতারাতি তিনশ থেকে এক হাজার গুণ বৃদ্ধি পায়। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, স্থাপনার উপর ভাড়া ভিত্তিক গৃহকর নির্ধারণের এই ধারাটি স্বৈরাচার আমলে করবিধি–১৯৮৬ এ অসাংবিধানিকভাবে যুক্ত করা হয়। ধারাটি আজ পর্যন্ত বাংলাদেশের কোনো সিটি কর্পোরেশনের কোনো নির্বাচিত মেয়র কোনো শহরে প্রয়োগ করেছেন, এমন কোন নজির নেই! অথচ চসিক বাংলাদেশে প্রথম এই কালো আইন প্রযোগের মাধ্যমে নগরবাসীর পকেট থেকে হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার এক ঘৃণ্য পরিকল্পনা নিয়ে মাঠে নামে।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, অতিরিক্ত করের নোটিশ পেয়ে নগরে বসবাসরত মধ্যবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত গৃহমালিকগণ কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়ে। তারা প্রতিকারের কোনো পথই খুঁজে পাচ্ছিল না। এমন পরিস্থিতিতে চট্টগ্রাম করদাতা সুরক্ষা পরিষদের ব্যানারে ধারাবাহিক আন্দোলেনের সূচনা হয়। আন্দোলনের তীব্রতায় স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় হোল্ডিং ট্যাঙ আদায় স্থগিত ঘোষণা করে।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, বর্তমানে দ্রুত সময়ে স্থাপিত আপিল বোর্ডের মাধ্যমে কর্পোরেশনের রাজস্ব বিভাগ করদাতাদের কাছ থেকে প্রায় ২০০ কোটি টাকা ঘুষ বাণিজ্য করে ফেলে। যা করদাতা সুরক্ষা পরিষদের ‘গণশুনানি’ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রমাণ করে দেয়।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, আইনের বিধান অনুযায়ী ধার্য্যকৃত কর এর আপিল আবেদনের ক্ষেত্রে সিটি মেয়র সর্বোচ্চ ১৫ শতাংশ কর ছাড় প্রদানের ক্ষমতা রাখেন। এরপর আপিলের সুযোগ রয়েছে বিভাগীয় কমিশনারের হাতে। বিভাগীয় কমিশনারও সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় প্রদানের ক্ষমতা রাখেন। তাহলে কোন আইনে মেয়র ধার্য্যকৃত কর এর ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় প্রদান করছেন? সরকার কি কর ছাড়ের ক্ষেত্রে উনাকে ইন্ডিমিনিটি দিয়েছেন ? যদি তিনি ইন্ডিমিনিটি না পেয়ে থাকেন তাহলে এই আপিল আবেদনের সুযোগ গ্রহণকারী করদাতাগণ আগামীতে অনাদায়ী কর এর আইনি ঝামেলার মুখোমুখি হবেন কি না সে বিষয়ে মেয়রের পক্ষ থেকে সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা দাবি করেন সুরক্ষা পরিষদের নেতৃবৃন্দ।
সংবাদ সম্মেলে নেতৃবৃন্দ বলেন, মেয়র মহোদয়ের প্রতি আমাদের উদাত্ত আহ্বান থাকবে, সময় ক্ষেপণ না করে আপনি এই অন্যায় কর আদায়ে আপনার অপরাগতার কথা মন্ত্রণালয়কে অবিহিত করুন। অসাংবিধানিকভাবে যুক্ত কালো আইনের ধারা বলে নির্ধারিত ভাড়া ভিত্তিক এসেসমেন্ট বাতিলের উদ্যোগ নিন। সুরক্ষা পরিষদের সভাপতির বিরুদ্ধে আরোপিত মামলা প্রত্যাহার করুন। তাহলে এই আন্দোলন থেকে সরে দাঁড়াব।