অগ্নিকাণ্ডের ৩১ ঘণ্টা পর সীতাকুণ্ডের ছোট কুমিরা এলাকার ইউনিটেক্স স্পিনিং লিমিটেড কারখানার তুলার গুদামের আগুন নিভেছে। গতকাল রোববার বিকাল পৌনে ৫টায় গুদামের আগুন পুরোপুরি নিভে গেলে অগ্নিনির্বাপণ কাজ সমাপ্ত ঘোষণা করেন চট্টগ্রাম ফায়ার সার্ভিসের উপ–সহকারী পরিচালক আব্দুল হামিদ মিয়া।
তিনি জানান, রোববার সকাল থেকে মৃদুভাবে তুলার ভেতরে জ্বলতে থাকা আগুন নেভাতে কাজ করেন ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা। এরপর দুপুর থেকে তারা ডাম্পিংয়ের কাজ করেন। বিকালে আগুন পুরোপুরি নিভে গেলে তারা অগ্নিনির্বাপণ কাজ সমাপ্ত ঘোষণা করেন। এরপর ফায়ার সার্ভিসের সবক’টি ইউনিটকে সেখান থেকে তুলে নেওয়া হয়। তারপরও অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে কুমিরা ফায়ার সার্ভিসের ৫ সদস্যের একটি দলকে ঘটনাস্থলে রেখেছি। সেই সাথে রাখা হয়েছে ফায়ার সার্ভিসের পানিভর্তি একটি গাড়ি।
এদিকে ওই গুদামের ইউনিয়ন পরিষদের ট্রেড লাইসেন্সসহ সরকারি কোনো কাগজপত্র নেই বলে জানিয়েছেন স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান। সীতাকুণ্ড মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তোফায়েল আহমেদ শনিবার বলেছিলেন, এই গুদাম নির্মাণে মালিকপক্ষ কোনো নিয়ম মানেনি।
দুপুর ২টার দিকে দেখা যায়, পুড়ে যাওয়া তুলা থেকে ধোঁয়া বেরুচ্ছে। ফায়ার সার্ভিসে সদস্যরা ধোঁয়া উঠতে থাকা তুলার উপর পানি ছিটাচ্ছেন। যেদিকে সামান্য আগুন রয়েছে সেখানেও পানি ছিটাচ্ছেন। পুরো গুদাম ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। ভেঙে পড়েছে গুদামের অবকাঠামো। আগুন নেভানো সহজ করার জন্য ভাঙা হয়েছে গুদামের ভবনের দেয়াল। গুদামজুড়ে পুড়ে যাওয়া তুলা ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে।
গত শনিবার সকাল সোয়া ১০টায় হিগুরী পাড়া এলাকার নেমসন ডিপো সংলগ্ন ইউনিটেঙ স্পিনিং লিমিটেডের তুলার গুদামে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য ফায়ার সার্ভিসের ৯টি ইউনিট, সেনাবাহিনীর ৪টি, নৌবাহিনীর ৪টি, বিমানবাহিনীর ২টি, বিজিবির ৪টি ফায়ার ফাইটিং ইউনিটসহ ২৩ ইউনিটকে কাজ করতে হয়েছে।
জেলা প্রশাসক আবুল বাশার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান বলেন, গুদামটিতে ঝালাইয়ের কাজ করার সময় আগুন লাগে। এরপর মুহূর্তেই আগুন চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। শনিবার সন্ধ্যায় তিনি ঘটনাস্থলে এসে আগুনের ভয়াবহতা দেখে সেনা, বিমান ও নৌবাহিনী এবং বিজিবির ফায়ার ইউনিটের সহযোগিতা চান।
চট্টগ্রাম ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক আবদুল মালেক বলেন, সকাল ১০টা ৩০ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। এরপর চলে ডাম্পিংয়ের কাজ। বিকাল ৪টা ৪৫ মিনিটের দিকে আগুন পুরোপুরি নিভে যায়। এরপর ফায়ার সার্ভিসের ইউনিটগুলো তুলে নেয়া হয়।
ইউনিটেঙ স্পিনিং লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ফারহান আহমেদ বলেন, অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে ছাই হওয়া গুদামটিতে তাদের সুতা কারখানার জন্য বিদেশ থেকে আমদানি করা ২ হাজার ৭০০ টন তুলা ছিল, যার সবগুলোই পুড়ে গেছে। আগুনে গুদামের পাশাপাশি তাদের সংরক্ষিত সব তুলা পুড়ে শত কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।
সীতাকুণ্ড উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. শাহাদাত হোসেন বলেন, তারা তদন্ত কাজ শুরু করছেন। ওয়েল্ডিং থেকে আগুনের সূত্রপাত–বিষয়টিকে সামনে রেখে কাজ শুরু করবেন বলে জানান তিনি।
এ ঘটনা তদন্তে স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক বদিউল আলমকে প্রধান করে ১০ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে জেলা প্রশাসন। তাদের পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
সীতাকুণ্ডের কুমিরা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোরশেদ হোসেন চৌধুরী বলেন, সিপি কারখানাটি বন্ধ হওয়ার পর স্থানীয় জাহাজভাঙা কারখানা এস এল স্টিলের মালিক লোকমান হোসেন সেটিকে কিনে নেন। কিন্তু তিনি ব্যবসা করার জন্য ইউনিয়ন পরিষদের ট্রেড লাইসেন্সসহ সরকারি কোনো কাগজপত্র নেননি। পরে তিনি গুদামটিকে ইউনিটেঙ স্পিনিং মিলস লিমিটেডের কাছে ভাড়া দেন।