এবার গর্জে উঠল সাগরিকা

ক্রীড়া প্রতিবেদক | শুক্রবার , ১০ মার্চ, ২০২৩ at ৪:৪৮ পূর্বাহ্ণ

গত জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত বিপিএলের প্রথম দিন এবং শেষ দিনে কিছু দর্শক দেখা গিয়েছিল সাগরিকাস্থ জহুর আহমদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে। মাঝের ম্যাচগুলোতে বলতে গেলে স্টেডিয়াম ছিল একেবারেই ফাঁকা। এবারের ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজের শেষ ম্যাচটি চট্টগ্রামে হলেও দেখা যায়নি দর্শকদের। হয়তো আগেই ঢাকায় দুই ম্যাচে হেরে সিরিজ হেরে আসায় হয়তো দর্শকরা মাঠমুখি হয়নি। তবে চট্টগ্রামে দারুণ খেলেছে সাকিবতামিমরা। শেষ ম্যাচে ইংলিশদের হারিয়েছে দুর্দন্ড প্রতাপে।

ওয়ানডে সিরিজের শেষ ম্যাচে ইংলিশদের হারানোর সুখ স্মৃতি নিয়ে গতকাল টিটোয়েন্টি সিরিজ শুরুর করেছিল সাকিব আল হাসানের দল। যা ইংলিশদের বিপক্ষে প্রথম কোন দ্বিপাক্ষিক টিটোয়েন্টি সিরিজ। এই ম্যাচে দর্শক হবে কিনা তা নিয়ে সংশয়ে ছিল আয়োজকরা। কারন এম এ আজিজ স্টেডিয়াম এবং সাগরিকাস্থ বিটাক মোড়ে স্থাপিত টিকিট কাউন্টারে গত দুই দিন তেমন ভীড় দেখা যায়নি। কিন্তু গতকাল জহুর আহমদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে দেখা গেল ভিন্ন দৃশ্য। বিকেল তিনটায় ম্যাচ শুরুর শিডিউল থাকলেও তার অনেক আগে থেকেই দর্শকরা ভীড় করতে থাকে স্টেডিয়ামে। সময় গড়ানোর সাথে সাথে সে ভীড় বাড়তে থাকে। ম্যাচ শুরুর আগেই স্টেডিয়ামের বেশির ভাগ গ্যালারি ভর্তি হয়ে যায় দর্শকে। ইংল্যান্ড দল যখন ব্যাট করছিল তখনো মাঠের বাইরে বিপুল সংখ্যক দর্শক অপেক্ষা করছিল মাঠে প্রবেশে অপেক্ষায়।

ইংল্যান্ডের ইনিংস শেষ হতেই জহুর আহমদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের গ্যালারী পূর্ণ হয়ে যায় কানায় কানায়। চারদিক থেকে তখন ভেসে আসছিল টাইগার টাইগার গর্জন। বিশেষ করে বাংলাদেশ যখন ব্যাট করতে নামে তখন দর্শকরা মুহুর্মুহু করতালিতে সমর্থন যোগাতে থাকে বাংলাদেশ দলের ব্যাটারদের। শুরুতে সেই ২০১৫ সালের পর দলে ফেরা রনি তালুকদার দর্শকদের আনন্দ দিচ্ছিলেন তার ঝড়ো ব্যাটিংয়ে। বিপিএলে ভালো খেলার পুরষ্কার হিসেবে দলে ফিরেছেন রনি তালুকদার। গতকাল তিনি শুরুটাও করেছিলেন যথারীতি ঝড়ো গতিতে। যদিও খুব বেশিক্ষণ উইকেটে থাকতে পারেননি তিনি। ১৪ বলে ২১ রান করে ফিরেছেন। তবে যতক্ষণ উইকেটে ছিলেন ততক্ষণ সাগরিকার দর্শকদের আনন্দ দিয়ে গেছেন এই ওপেনার। আর দর্শকরাও তাকে সমর্থন দিয়ে গেছেন অকৃত্রিমভাবে।

এমনিতেই টিটোয়েন্টি ক্রিকেট মানে চার আর ছক্কার ফুলঝুড়ি। বিনোদনের এক পরিপূর্ণ প্যাকেজ। তাই দর্শকরা হুমড়ি খেয়ে পড়ে টিটোয়েন্টি ম্যাচ দেখতে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে এত দর্শক দেখা যায়নি জহুর আহমদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে। সবশেষ ভারতের বিপক্ষে সিরিজে বেশ দর্শক হয়েছিল এই স্টেডিয়ামে। বিপিএলেও তেমন দর্শকের দেখা মেলেনি। তবে গতকাল যেন গর্জে উঠল জহুর আহমদ চৌধুরী স্টেডিয়াম। বাংলাদেশ দলের পতাকা, দলের জার্সি আর রং বেরং এর ফেস্টুন নিয়ে দর্শকরা যেন রাঙিয়ে দিয়েছিল স্টেডিয়ামকে। চট্টগ্রামে সুযোগ সুবিধা তেমন নেই কিংবা চট্টগ্রামে দর্শক হয় না তেমন সব কথা বলে গত কয়দিন ধরে ঢাকার কয়েকটি মিডিয়ায় সংবাদ প্রচার হচ্ছিল। আর সে সব সংবাদের যেন জবাব দিল চট্টগ্রামের দর্শকরা। ক্রিকেটকে কতটা ভালোবাসে চট্টগ্রামের দর্শকরা সেটা বারবার প্রমাণ করেছে। গতকাল যেন আরো একবার প্রমাণ করল। অনেক দর্শক ফিরে গেছেন মাঠে ঢুকতে না পেরে। তারপরও তাদের মনে যেন অতটুকু কষ্ট নেই। যারা মাঠে প্রবেশ করতে পেরেছে তারা নিজেদের ভাগ্যবান মনে করছেন। বাংলাদেশ দলের সু সময়ে যেমন ছিল চট্টগ্রামের দর্শকরা তেমনি দুঃসময়েও থাকবে তেমন প্রতিশ্রুতিও দিয়ে রাখলেন।

তাইতো এগিয়ে চলো টাইগার, গর্জে উঠো টাইগার, চট্টগ্রামের মাটি বাংলাদেশর দুর্জয় ঘাটি, নানা প্লেকার্ড নিয়ে মাঠে এসে প্রিয় দলকে সমর্থন জুগিয়েছে। তবে সবচাইতে বড় কথা ক্রিকেটের প্রতি ভালোবাসার টানে দর্শকরা ছুটে এসেছে স্টেডিয়ামে। নানা ঝক্কি ঝামেলা পোহাতে হলেও ক্রিকেটকে ভালো বেসে মাঠে গর্জে উঠেছে চট্টগ্রামের দর্শকরা। যদিও এই ম্যাচে দর্শকদের একটা অপ্রাপ্তি ছিল। তা হচ্ছে এই ম্যাচে বাংলাদেশ দলে ছিল না চট্টগ্রামের কোন ক্রিকেটার। তামিম ইকবাল টিটোয়েন্টি অবসর ঘোষণার পর শেষ প্রতিনিধি হিসেবে ছিলেন ইয়াসির আলি রাব্বি। এবারের সিরিজে তিনিও নেই। তারপরও ক্রিকেটের প্রতি চট্টগ্রামের মানুষের ভালোবাসার নিদর্শন হয়ে থাকল গতকালের ম্যাচটি। চট্টগ্রামের দর্শকদের এমন পঙ্গপালের মতো মাঠে ছুটে যাওয়া বৃথা যায়নি। দর্শকদের মন ভরিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা। দারুণ এক জয় উপহার দিয়েছে সাকিবরা। এমন একটি জয় দেখতে যে মুখিয়ে থাকে ক্রিকেট পাগল দর্শক। তাই দর্শকদের মাঠে যাওয়াটা স্বার্থক হয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধএমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষা আজ
পরবর্তী নিবন্ধআউটার স্টেডিয়ামে মেলা বন্ধ করল জেলা প্রশাসন