চট্টগ্রাম জেলার ভারী ও মাঝারি শিল্পপ্রবণ এলাকায় দুর্ঘটনা রোধে মহাপরিকল্পনা প্রণয়নে জরুরি মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে দুর্ঘটনা রোধে ১৩টি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। গতকাল সোমবার সকালে সার্কিট হাউসের সম্মেলন কক্ষে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান সভায় সভাপতিত্ব করেন। অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) রাকিব হাসানের সঞ্চালনায় জরুরি মতবিনিময় সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন, ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ–৩, চট্টগ্রামের এসপি মোহাম্মদ সুলাইমান, সীতাকুণ্ড উপজেলা চেয়ারম্যান এস এম আল মামুন, জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরী, জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুদীপ্ত সরকার, মহানগর মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মোজাফফর আহমদ, সীতাকুণ্ড উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. শাহাদাৎ হোসেন, সীতাকুণ্ড থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) তোফায়েল আহমদ, সোনাইছড়ি ইউপি চেয়ারম্যান মনির আহমদ ও ভাটিয়ারি ইউপি চেয়ারম্যান মো. নাজিম উদ্দিন প্রমূখ। ফায়ার সার্ভিস, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর, বিস্ফোরক পরিদর্শন, চেম্বার, এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, বিকেএমইএ প্রতিনিধি, শিপ ব্রেকার্স, বিভিন্ন কলকারখানার মালিক, পরিচালক, কর্মকর্তা ও শিল্পউদ্যোক্তাবৃন্দ সভায় উপস্থিত ছিলেন।
সভায় গ্রহণ করা ১৩ সিদ্ধান্ত হলো– উপজেলাগুলোর খাসজমি ধ্বংস করে কল–কারখানা করা যাবেনা। শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। দক্ষ শ্রমিক নিয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। মাস্টারপ্ল্যান ভিত্তিক ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স কর্তৃক ৩ টা ক্যাটাগরি করে ঝুঁকিপূর্ণ কলকারখানার তালিকা করতে হবে। প্রতি মাসে জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে সংশ্লিষ্ট সকল অফিসকে সংযুক্ত করে একটি সভা আয়োজন করে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। সকল কারখানায় পরিদর্শনকারী প্রতিষ্ঠান কর্তৃক নিয়মিত তদারকি নিশ্চিত করতে হবে। বেশিরভাগ কারখানায় অভিজ্ঞ ইঞ্জিনিয়ারের স্থলে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার দিয়ে কাজ করানো হচ্ছে। এসব ক্ষেত্রে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার জন্য চট্টগ্রামের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে কেমিস্ট্রি, ফিজিঙ, মেকানিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং, ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ থেকে অভিজ্ঞ শিক্ষকদের নিয়ে কমিটি করে মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে। গ্যাস প্ল্যান্টে গ্যাস তৈরি এবং ব্যবস্থাপনার ম্যানুয়েল তৈরি করে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা। এছাড়া ফায়ার সেফটির সরঞ্জামাদির মেয়াদ–উত্তীর্ণ কিনা সেটা ফায়ার সার্ভিস কর্তৃক নিয়মিত তদারকি নিশ্চিত করতে হবে। নতুন কারখানা স্থাপন ও চালুর জন্য প্রয়োজনীয় শর্তাবলি শতভাগ পূরণ ছাড়া যেন উৎপাদনে যেতে না পারে সে ব্যাপারে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। কারখানার শ্রমিকদের কর্মশালার মাধ্যমে নিয়মিত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। আহত নিহতের বাইরেও আরো যেসব ক্ষতিগ্রস্থ আছে তাদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে এবং যেকোন বিষয় নজরদারির জন্য স্থানীয় প্রশাসন ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিকে দায়িত্ব প্রদান করতে হবে। সভায় উপস্থিত সকলকে উদ্দেশ্যে করে জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান বলেন, বিএম ডিপোর দুর্ঘটনার পরও আমরা সতর্ক হয়নি, চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল সম্প্রতি ঘটে যাওয়া সীমা অঙিজেন প্ল্যান্টের দুর্ঘটনা। এসব দুর্ঘটনা রোধে আমাদের সকলকে সজাগ থাকতে হবে। যার যেটি কাজ সেটি গুরুত্ব দিয়ে করতে হবে। জেলা প্রশাসক আরো বলেন, জেলায় দুর্ঘটনা রোধে সম্প্রতি আমরা অনেগুলো অভিযান পরিচালনা করেছি এবং জেল জরিমানা করেছি। অভিযানে গিয়ে দেখা যায়, প্রতিষ্ঠানগুলোতে ফায়ার সেফটি প্ল্যান নেই। এটি খুবই দুঃখজনক। জেলা প্রশাসনসূত্র জানায়, মতবিনিময় সভায় সীতাকুণ্ডের সীমা অঙিজেন প্ল্যান্টে বিস্ফোরণের ঘটনায় যারা নিহত হয়েছে তাদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করা হয় এবং যারা আহত হয়েছেন তাদের দ্রুত সময়ের মধ্যে সুস্থতা কামনা করা হয়।