ঢাকা থেকে লজ্জা নিয়ে এসে চট্টগ্রাম থেকে মাথা উঁচু করে ফিরেছে বাংলাদেশ দল অনেকবার। আরো একবার বাংলাদেশ দলকে লজ্জার হাত থেকে রক্ষা করল চট্টগ্রাম। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ঢাকায় দুটি ম্যাচে হেরে সিরিজ খুইয়ে চট্টগ্রামে আসে টাইগাররা। সামনে তখন ৯ বছর পর দেশের মাটিতে হোয়াইট ওয়াশ হওয়ার চোখ রাঙানি। ৭ বছর পর দেশের মাটিতে কোন ওয়ানডে সিরিজ হেরেছে বাংলাদেশ। বাকি ছিল হোয়াইট ওয়াশ হওয়া। তবে বাংলাদেশের ক্রিকেটের লাকি গ্রাউন্ড চট্টগ্রাম সে লজ্জা থেকে বাঁচিয়েছে বাংলাদেশ দলকে। প্রায় সাত বছর পর ইংল্যান্ডের বিপক্ষে জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। সবশেষ ২০১৬ সালের অক্টোবরে মিরপুরে ইংলিশদের হারিয়েছিল টাইগাররা। এরপর অবশ্য গত সাত বছরে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে এই সিরিজের আগের দুটি ম্যাচসহ মাত্র পাঁচটি ম্যাচ খেলেছে বাংলাদেশ দল।
গতকাল জহুর আহমদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে ইংল্যান্ডকে ৫০ রানে হারিয়েছে বাংলাদেশ দল। টাইগারদের এই জয়ে একেবারে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন সাকিব আল হাসান। তিনি কেন বিশ্বসেরা সেটা বার বার প্রমাণ দিয়েছেন। এবারে আরো একবার দিলেন। ব্যাট হাতে হাফ সেঞ্চুরির পাশাপাশি বল হাতে নিয়েছেন ৪ উইকেট। শুধু তাই নয় প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে ওয়ানডে ক্রিকেটে তিনশ উইকেটের মালিকও হলেন সাকিব এই ম্যাচে।
তবে সবচাইতে বড় বিষয় হচ্ছে অন্তত দলকে হোয়াইট ওয়াশের লজ্জা থেকে বাঁচিয়েছেন সাকিব। ৭১ বলে ৭৫ রান করার পাশাপাশি বল হাতে ১০ ওভারে ৩৫ রান খরচায় ৪ উইকেট নিয়েছেন সাকিব। সিরিজ হারলেও শেষ ম্যাচে জয়ের তৃপ্তি নিয়ে মাঠ ছাড়ে তামিমের দল।
টসে জিতে ব্যাট করতে নামা বাংলাদেশের শুরুটা একেবারেই সিদ্ধান্তের বিপরীত। ব্যর্থতার বলয়ে ঘুরপাক খেতে থাকা লিটন দাশ পারলেন না রানের খাতা খুলতে। অধিনায়ক তামিমও পেলেন না ছন্দ খুঁজে। তার ১১ রানের বিদায়ে ১৭ রানে নেই বাংলাদেশে দুই ওপেনার। এরপর অবশ্য হাল ধরেন শান্ত এবং মুশফিক। রানের গতি কম থাকলেও গড়েন ৯৮ রানের জুটি। রান আউট হওয়ার আগে শান্ত করেন ৭১ বলে ৫৩ রান। এরপর মুশফিক ফিরলেন হাফ সেঞ্চুরি করে। তার ৯৩ বলে ৭০ রানের ইনিংসটা থামে আদিল রশিদের বলে বোল্ড হয়ে। মাহমুদউল্লাহ যেন এলেন আর গেলেন। এরপর আফিফও পারেননি সাকিবকে বেশিক্ষন সঙ্গ দিতে। দুজন ৪৯ রান যোগ করলেও সেখানে আফিফের অবদান মাত্র ১৫। এরপর দলকে টেনে নিয়ে গছেন সাকিব একাই। যদিও শেষ পর্যন্ত টানতে পারেননি। ৪৯ তম ওভারের চতুর্থ বলে জোফরা আর্চারকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে এবোরে সীমানায় জেসন রয়ের ক্যাচে পরিনত হন ৭১ বলে ৭৫ রান করা সাকিব। পরের বলেই মোস্তাফিজকে এলবিডব্লিউর ফাদে ফেলে বাংলাদেশকে থামিয়ে দেন ২৪৬ রানে। জবাবে ব্যাট করতে নেমে ১৯৬ রানে অল আউট হয় ইংলিশরা।
শুরুতে জেসন রয় এবং ফিল সল্ট দুই ওপেনার মিলে ৫৪ রান তুলে নেন ৯ ওভারে। নবম ওভারের শেষ বলে সাকিবের আঘাত। ফেরালেন ফিল সল্টকে। মাহমুদউল্লাহর ক্যাচে পরিণত হয়ে ফেরার আগে ২৫ বলে করেন ৩৫ রান। পরের ওভারে এবাদতের গতিতে কাবু ডেভিড মালান। রানের খাতা খোলার আগেই মাহমুদউল্লাহর দ্বিতীয় ক্যাচে পরিণত হয়ে ফিরেন মালান। পরের ওভারে আবার সাকিবের আঘাত। এবার তার শিকার আরেক ওপেনার জেসন রয়। সরাসরি বোল্ড হয়ে ফিরেন ইংলিশ ওপেনার ৩৩ বলে ১৯ রান করে। বিনা উইকেটে ৫৪ থেকে তিন ওভারেই ৫৫ রানে ৩ উইকেট। জেমস ভিঞ্চ এবং স্যাম কারেনের প্রতিরোধের দেওয়াল ভাঙ্গেন মেহেদী হাসান মিরাজ। ২৩ রান করা কারেনকে লিটন দাশের ক্যাচে পরিনত করেন মিরাজ। প্রথম স্পেলের ৫ ওভারে ২ উইকেট নেওয়া সাকিব দ্বিতীয় স্পেলে বল করতে এসে আবার আঘাত হানেন। এবার তার শিকার জেমস ভিঞ্চ। উইকেটের পেছনে মুশফিকের ক্যাচে পরিণত করে ভিঞ্চকে ফেরান সাকিব। ৩৮ রানে থামেন এই ইংলিশ ব্যাটার। এরপর মঈন আলি সরাসরি বোল্ড হয়ে গেলেন ২ রান করে। এবার উইকেট শিকারির তালিকায় নাম লেখালেন তাইজুল। তিনি ফেরালেন জস বাটলারকে। ২৪ বলে ২৬ রান করেন তিনি।
তাইজুলের ঘুর্নির সামনে কাবু হলেন আদিল রশিদও। বোল্ড হয়ে ফিরলেন এই লেগ স্পিনার। নিজের নবম ওভারে বল করতে এসে আবার সাকিবের আঘাত। প্রতিটি স্পেলেই উইকেট নিয়েছেন সাকিব। এবার তার শিকার রেহান আহমেদ। দারুন এক ক্যাচ নেন মেহেদী হাসান মিরাজ। এই উইকেটের মাধ্যমে ওয়ানডে ক্রিকেটে তিনশ উইকেটের মাইলফলক স্পর্শ করেন সাকিব। তার তিনশ তম শিকার রেহান আহমেদ। ইংলিশ বধের শুরুটার মত শেষটাও করতে পারতেন সাকিব। আর তাতে আরো একবার ওয়ানডেতে ৫ উইকেট হয়ে যেতো সাকিবের। কিন্তু নিজের স্পেলের শেষ বলে আম্পায়ার আউট দিলেও রিভিউ নিয়ে বেঁচে যান অর্চার। তবে পরের ওভারে বল করতে এসে মোস্তাফিজ প্রথম বলেই ফিরতি ক্যাচ নিয়ে ওকসকে ফেরালে বাংলাদেশের জয় নিশ্চিত হয়ে যায়। তবে ম্যাচ সেরার দৌড়ে সাকিবের আশে পাশেও যেন কেউ ছিলনা।