দু’জন ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার এবং মানবিক বিভাগ থেকে পাস করা একজন সুপারভাইজার মিলে পরিচালনা করতেন চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের সীমা অক্সিকো অক্সিজেন লিমিটেড।
আজ সোমবার (৬ মার্চ) দুপুরে চট্টগ্রাম নগরীল সার্কিট হাইজে ‘চট্টগ্রাম জেলার ভারী ও মাঝারি শিল্প প্রবণ এলাকার দুর্ঘটনা হ্রাসকল্পে মহাপরিকল্পনা প্রণয়নের’র জন্য আয়োজিত মতবিনিময় সভায় এক প্রশ্নের জবাবে এমনটাই জানিয়েছেন কোম্পানিটির এমডি মো. মামুন উদ্দিন।
গত শনিবার বিকালে ওই কারখানায় ভয়াবহ বিস্ফোরণে এ পর্যন্ত সাতজনের প্রাণ গেছে। তাদের মধ্যে একজনের মৃত্যু হয়েছে লোহার টুকরা প্রায় আধা কিলোমিটার দূরে উড়ে গিয়ে। এখনও চিকিৎসাধীন আছেন ২০ জন।
আজ সভার শুরুতে জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান জানতে চান, কত সাল থেকে সীমা অক্সিকো অক্সিজেন লিমিটেড ব্যবসা করছে?
জবাবে কোম্পানির এমডি মামুন বলেন, “১৯৯৬ সালে এটা প্রতিষ্ঠিত, আমার বাবা আহমদ শফী প্রতিষ্ঠা করেন। তখন থেকে চালু আছে। সরকারি সব কমপ্লায়েন্স মেনেই কারখানাটা চালু রেখেছি। কী কারণে হঠাৎ করে পরশু দিন ব্লাস্ট হয়েছে আমরা এখনও… ইয়ে করতে পারতেছি না। তদন্ত কমিটি গতকাল পরিদর্শন করে এসেছে। উনারা তদন্ত করলেই আসল কারণটা বুঝতে পারবেন।”
সেখানে কত শ্রমিক কাজ করতেন এবং কী উৎপাদন হতো, এ প্রশ্নের উত্তরে মামুন উদ্দিন বলেন, “ওই শিফটে ১৪-১৫ জন শ্রমিক ছিল। দুইজন অপারেটর ছিল। অ্যাডমিনে দু’জন ছিল। একজন সুপারভাইজার ছিল। সব মিলিয়ে ১৯ জন।”
তাহলে এত লোক কীভাবে হতাহত হলো এমন প্রশ্নের উত্তরে সীমা অক্সিজেনের এমডি বলেন, “অনেক পথচারী আহত হয়েছেন।”
প্ল্যান্টে কী উৎপাদন করা হয়- জেলা প্রশাসকের এই প্রশ্নের জবাবে মামুন বলেন, “আমরা ইন্ডাস্ট্রিয়াল গ্রেডের অক্সিজেন প্রস্তুত করি। আমি অ্যাকাউন্টিংয়ে মাস্টার্স করেছি।”
ডিসি ফখরুজ্জামান জানতে চান, “আপনাদের ওখানে ইঞ্জিনিয়ার বা মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার কেউ আছেন যারা প্ল্যান্টটি পরিচালনা করেন?”
জবাবে মামুন বলেন, “অপারেটররা ডিপ্লোমা হোল্ডার। উনারা ২৭ বছর ধরে ওই প্ল্যান্টটা চালাচ্ছেন। সেজন্য এক্সপেরিয়েন্স আছে।”
কীভাবে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার একটি অক্সিজেন প্ল্যান্ট চালাচ্ছে জেলা প্রশাসক এমনটা জানতে চাইলে মামুন বলেন, “এটা তো দুর্ঘটনা। এটাতে কারও হাত নেই। কেন হয়েছে জানি না। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন ভালো বলতে পারবেন এটা কীজন্য হয়েছে।”
এ সময় ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশের চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার মো. সোলায়মান জানতে চান, “প্ল্যান্টটি (যন্ত্রপাতি) চীন থেকে ইমপোর্ট করা। ইন্সটলেশনের পর প্রকৌশলীরা আর কখনও এসেছিলেন? আপনারা কীভাবে মাত্র ২ জন ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার এবং মানবিক থেকে পাস করা একজন স্টুডেন্ট (সুপারভাইজার) দিয়ে একটা অক্সিজেন প্ল্যান্ট চালাচ্ছেন?”
জবাবে মামুন উদ্দিন বলেন, “চীন থেকে সাপ্লাই দেওয়ার পর কমিশনিং এবং প্রডাকশন পর্যন্ত প্রায় তিন মাস উনারা এখানে ছিলেন। এরপর আরও দুই মাস থেকে যারা অপারেটিং করবে তাদের ট্রেনিং দিয়েছেন। তারপর আর আসেননি। উনারা প্রায় (ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার ও সুপারভাইজার) ২০ বছর ধরে চালাচ্ছিলেন।”