জীবনের প্রয়োজনে বাংলা ভাষাভাষী প্রচুর মানুষ ছড়িয়ে আছে বিশ্বব্যাপী! আজকাল পৃথিবীর বুকে এমন কোন দেশ পাওয়া যাবেনা যেখানে বাঙালি নেই! ভিন্ দেশে অবস্থানের কারণে তারা যেমন ভিন্ন সংস্কৃতির সাথে খাপ খাইয়ে জীবনযাপন করছে তেমনি পাশাপাশি তারা মাতৃভাষার চর্চা করছে! আমাদের মতো
বয়েসি যারা তারা বাংলাকে মনেপ্রাণে লালন করে, ধরে রাখে বুকের ভেতর! নানান কাজে ব্যস্ত থাকার সাথে সাথে প্রবাসীরা বাংলা চর্চা করে! শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা, বিভিন্ন দিবসকে সামনে রেখে নানান সভা সেমিনারের আয়োজন করা, গল্প কবিতা গান সহ সাহিত্য চর্চা, অনলাইন ম্যাগাজিন, বাংলা
চ্যানেল, কবিতা পাঠের আসর আরো কতো, বলে শেষ করা যাবেনা! আর এটা আমার কাছে খুবই যৌক্তিকও মনে হয়! কিন্তু যে শিশুগুলো এদেশে জন্মেছে, বাসায়ও আঞ্চলিক কথা বলেনালআর স্কুলে বা বাইরে বন্ধুদের সাথে তো প্রশ্নই আসে না, সেই ধরনের শিশুদের বাংলা চর্চা কঠিন বৈকি! ২০১৯ এখানে স্থায়ী
ভাবে চলে আসার পর এখানকার এক স্পেশাল স্কুলে আমি কাজ করার সুবাদে (যে প্রতিষ্ঠানটি হোম অফিসের সমর্থনে আর সহযোগিতায় এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে বাংলাভাষাকে) এমন কিছু চমৎকার শিশুর সহচার্যে এসেছি যারা জন্মগত সূত্রে বাঙ্গালী শুধু, কিন্তু সম্পুর্ণ ইংরেজী কায়দায় বেড়ে ওঠা এই শিশুরা ও তাদের মা
বাবারা যে কি যত্ন আর ভালোবাসা দিয়ে বাংলা চর্চা করছে, তা দেখে গর্বে মন ভরে ওঠে! এরা বাংলা পড়তে জানেনা! সপ্তাহের পাঁচদিন স্বাভাবিক স্কুলের পাশাপাশি শনি রবি বারে এরা বাংলা চর্চার জন্য আমার স্কুলে আসে! আমি তাদের মুখে মুখে কবিতা শেখাই! এরা আঞ্চলিক উচ্চারণ কে কতো কষ্টে পরাস্ত করে প্রমিত বাংলা বলার চেষ্টা করে! বাংলা আর বাঙালিদের সব দিবসই তারা উদযাপন করে, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করে, নাচে গানে কবিতায় স্কুলের অঙ্গনকে
মুখরিত করে তোলে! মাঝে মাঝে এরা আমাকে রিকোয়েস্ট করে কবিতাগংলোকে ইংরেজিতে লিখে দিতে! রবীন্দ্রনাথ নজরুল সুকুমার রায়সহ সব কবির কবিতাই তারা স্টেজে দাঁড়িয়ে চমৎকার আবৃত্তি করে! দেখে আমার এতো ভালো লাগে যে মনটা গর্বে ভরে ওঠে! মাত্র একুশে ফেব্রুয়ারি গেলো!ওরা যে কি
অসাধারণ একুশের গান কবিতা আর নাচে সবাইকে মাতিয়ে রাখলো! তারপর রাত বারোটা এক মিনিটে শহীদ মিনারে কনকনে বরফ ঠাণ্ডাকে উপেক্ষা করে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে তবেই বাড়ি গেলো! প্রবাসের এই শিশুদের মাতৃভাষা চর্চা সত্যি মনমুগ্ধকর!