এয়ার সেপারেশন কলাম থেকে বিস্ফোরণ

সীতাকুণ্ড অক্সিজেন প্ল্যান্টে ২৪ ঘণ্টা পর উদ্ধার অভিযান শেষ ঘটনাস্থলে পরিদর্শনে তদন্ত টিম ও বিস্ফোরক অধিদপ্তর আহত আরেকজনের মৃত্যু

সীতাকুণ্ড প্রতিনিধি | সোমবার , ৬ মার্চ, ২০২৩ at ৬:২৫ পূর্বাহ্ণ

সীতাকুণ্ডের কদমরসুলে সীমা অক্সিজেন প্ল্যান্টে বিস্ফোরণের ঘটনায় ২৪ ঘণ্টা পর উদ্ধার অভিযান সমাপ্ত ঘোষণা করেছে ফায়ার সার্ভিস ও প্রশাসন। গত শনিবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে দুর্ঘটনার পর থেকে ফায়ার সার্ভিসের ৯টি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণ ও উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করে। রাতে ২টি ইউনিট

 

ঘটনাস্থলে ছিল। গতকাল সকাল ৯টার দিকে উদ্ধার অভিযানে কাজ শুরু করে। বিকাল ৫টার দিকে অভিযান সমাপ্ত ঘোষণার পর ফায়ার সার্ভিস সদস্যরা দুর্ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন। এদিকে এয়ার সেপারেশন কলাম থেকে বিস্ফোরণ হয়েছে বলে জানাল বিস্ফোরক অধিদপ্তর।

বিস্ফোরণের ঘটনায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন প্রবেশ লাল শর্মা (৪০) নামে আহত একজনের মৃত্যু হয়েছে। তিনি ভাটিয়ারীর ৬ নং ওয়ার্ডের মৃত মতিলাল শর্মার ছেলে। গত রাত সাড়ে ১০টায় তার মৃত্যু হয় বলে নিশ্চিত করেছেন চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার

জেনারেল শামীম আহসান। নিউরোসার্জারি বিভাগ থেকে গতকাল সন্ধ্যায় তাকে আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয়েছিল। তিনি মাথায় আঘাত পেয়েছিলেন। এ নিয়ে বিস্ফোরণে মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়াল সাতে।

কদমরসুল এলাকায় ঢাকাচট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে সীমা অক্সিজেন লিমিটেড নামের প্ল্যান্টে গত শনিবার বিকালে হঠাৎ বিস্ফোরণ ঘটে। এতে শনিবার নিহত হয়েছিলেন ৬ জন। আহত হন ৩০ জন।

ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক আবদুল মালেক সাংবাদিকদের বলেন, দুর্ঘটনাস্থলে আগুন নেই। তবুও তাদের দুটি ইউনিট দুর্ঘটনা এলাকায় রেখেছিলেন। এখন আর দুর্ঘটনা হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। ফলে তাদের উদ্ধার কার্যক্রম সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে।

তিনি বলেন, বিস্ফোরণে ক্ষতিগ্রস্ত কারখানাটির ফায়ার সার্ভিসের লাইসেন্সের শর্ত অনুসারে সেফটির ব্যবস্থা যথাযথ ছিল। কিন্তু পুরো কারখানা সেফটি প্ল্যানের আওতায় আনতে একটি সেফটির আবেদন করেছিল কর্তৃপক্ষ। সেটির অনুমোদনের সব প্রক্রিয়া প্রায় শেষ। দুইএক দিনের মধ্যে সেটি হয়তো পেয়ে যাবে

কারখানা কর্তৃপক্ষ। এরই মধ্যে ঘটনাটি ঘটেছে। এখানে মেশিনের ক্রটির জন্য হোক বা যেকোনো কারণে হোক বিস্ফোরণ ঘটেছে। তবে আগুনের কারণে বিস্ফোরণটি হয়নি বরং বিস্ফোরণের কারণেই আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে।

এদিকে গতকাল সকাল ৯টার দিকে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে বিস্ফোরক অধিদপ্তরের একটি টিম। পরিদর্শন শেষে বিস্ফোরক অধিদপ্তরের পরিদর্শক মো. তোফাজ্জল হোসেন বলেন, প্ল্যান্ট থেকে যে কলামের মাধ্যমে অক্সিজেন সিলিন্ডারে ভরা হয়, সেটি বিস্ফোরিত হয়েছে। অক্সিজেন ছাড়াও কার্বন ডাইঅক্সাইড

ও নাইট্রোজেনের সিলিন্ডার দেখা গেছে। প্ল্যান্টের চারটি পয়েন্টে সিলিন্ডারে গ্যাস ভরার ব্যবস্থা রয়েছে। প্রাথমিকভাবে মনে হয়েছে, সেখানে অক্সিজেন সিলিন্ডারের বিস্ফোরণ হয়নি।

বিস্ফোরণের ঘটনায় জেলা প্রশাসকের গঠন করা সাত সদস্যের তদন্ত টিম গতকাল বিকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। এ সময় তদন্ত কমিটির প্রধান অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট রাকিব হাসান বলেন, ঘটনার পর থেকে প্রতিটি দপ্তরে খোঁজখবর নেওয়া হয়েছে। রোববার দুপুরে তদন্ত কমিটির মিটিং হয়েছে।

ঘটনাস্থল থেকে বিস্ফোরণের কিছু আলমত জব্দ করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, ইয়ার সেপারেশন কলাম যেটি রয়েছে, সেখান থেকে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটতে পারে। তবে এটার জন্য অধিকতর তদন্ত প্রয়োজন।

তিনি বলেন, অক্সিজেনের বোতলের পাশে কার্বন ডাইঅক্সাইড সিলিন্ডারের বোতলও দেখেছি। কিন্তু এই বোতল রাখা তাদের অনুমোদন নেই। দ্রুত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে। আগামীতে এ রকম দুর্ঘটনা যাতে না ঘটে সে বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া হবে। প্ল্যান্ট চালানোর ক্ষেত্রে মালিক বা শ্রমিকদের

কোনো গাফিলতি ছিল কিনা তদারকি করা হচ্ছে। যদি গাফিলতির প্রমাণ মিলে তাহলে তাদেরও আইনের আওতায় আনা হবে। এখনও পর্যন্ত বিস্ফোরণের ঘটনা উদঘাটনে যতটুকু তথ্য সংগ্রহের প্রয়োজন তা জোগাড় হয়নি।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) সুদীপ্ত কুমার, সীতাকুণ্ড উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. শাহাদাত হোসেন, চট্টগ্রাম ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের উপপরিচালক মো. আবদুল হালিম, সীতাকুণ্ড মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তোফায়েল আহমেদ, চট্টগ্রাম বিস্ফোরক পরিদর্শক সহকারী এস এম শাখাওয়াত হোসেন এবং কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক সুভাংকর দত্ত।

সীমা অক্সিজেন প্ল্যান্টের মালিক মোহাম্মদ মামুন উদ্দিন বলেন, অক্সিজেন প্ল্যান্ট পরিচালনার ক্ষেত্রে সরকারি যেসব দপ্তর থেকে অনুমোদন প্রয়োজন হয় তা সব নেওয়া হয়েছে। ১৯৯৬ সালে প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে এই কারখানাটি দক্ষ জনবল দ্বারা পরিচালিত হয়ে আসছে। উৎপাদন হচ্ছে অক্সিজেন। আমাদের কোনো

গাফিলতি ছিল না। কী কারণে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে তা আল্লাহ ভালো জানেন। দুর্ঘটনার পর থেকে আমরা আহত ও নিহতদের খোঁজ খবর নিচ্ছি। যারা মারা গেছেন তাদের পরিবারকে সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষা নেই। শ্রমিক আইন ও সরকারি নীতিমালায় তাদের প্রাপ্য বুঝিয়ে দেওয়া হবে। সরকারি প্রাপ্য ছাড়াও তাদের পরিবারকে প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে অর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে।

সকাল সাড়ে ১১টায় কারখানায় আসেন প্ল্যান্টের ব্যবস্থাপক আবদুল আলীম। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, বিস্ফোরণে ৫০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। অক্সিজেন রিফুয়েলিং প্ল্যান্টে কেন দুর্ঘটনা ঘটেছে তা এ মুহূর্তে বলা যাচ্ছে না। প্রতিষ্ঠানটির পক্ষে ফায়ার সার্ভিস, বিস্ফোরক পরিদপ্তরসহ সব সংস্থার ছাড়পত্র,

সনদ রয়েছে। নিহত ও আহতদের পরিবারকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করা হচ্ছে। প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে। যেসব ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, সেগুলো সংস্কার করে দেওয়া হবে।

সীতাকুণ্ড মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তোফায়েল আহমদ বলেন, বিস্ফোরণে ঘটনায় যদি মালিক বা শ্রমিক পক্ষের কোনো গাফিলতি পাওয়া যায় তাহলে তাদের ছাড় দেওয়া হবে না।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণার অপেক্ষায় বাঙালি
পরবর্তী নিবন্ধ৮ বাংলাদেশি গ্রেপ্তার