হাসপাতালে স্বজনদের আর্তনাদ

আহতদের বেশিরভাগের আঘাতজনিত সমস্যা

‘‘আজাদী প্রতিবেদন | রবিবার , ৫ মার্চ, ২০২৩ at ৫:৪৫ পূর্বাহ্ণ

সীতাকুণ্ডে বেসরকারি সীমা অক্সিজেন প্ল্যান্টে বিস্ফোরণের ঘটনায় গতকাল রাত ১২টা পর্যন্ত ৬ জন নিহতের তথ্য পাওয়া গেছে। ৬ জনের মরদেহ চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের লাশঘরে রাখা হয়েছে। ৬ জনের মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করেছেন চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল

 

শামীম আহসান। নিহত ৫ জনের পরিচয় পাওয়া গেলেও অপর একজনের পরিচয় পাওয়া যায়নি বলে জানান তিনি।

আহত : বিস্ফোরণের ঘটনায় আহত অন্তত ২৫ জনের তথ্য পাওয়া গেছে। তবে গত রাত ১১টা পর্যন্ত চমেক হাসপাতালে ২০ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। আহতদের ক্যাজুয়াল্টি, নিউরোসার্জারি, নাককান ও গলা, চক্ষু বিভাগ ও অর্থোপেডিক বিভাগে ভর্তি করা হয়েছে।

আহতদের মাঝে কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক জানিয়ে চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম আহসান আজাদীকে বলেন, আহত ২০ জন বিভিন্ন ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। সবচেয়ে বেশি রোগী ভর্তি রয়েছে ক্যাজুয়াল্টি ওয়ার্ডে। তবে নিউরোসার্জারিতে থাকা কয়েকজনের মস্তিষ্কে

আঘাতজনিত রক্তক্ষরণ রয়েছে। অনেকটা আশঙ্কাজনক বলা যায়। অবশ্য বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটলেও এবার দগ্ধ বা পোড়া রোগী পাওয়া যায়নি বলে জানান তিনি। আহতদের বেশিরভাগেরই আঘাতজনিত সমস্যা। দগ্ধ রোগী আসেনি।

হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. রাজিব পালিত জানান, আহতদের মাঝে ক্যাজুয়াল্টি ওয়ার্ডে ৮ জন, অর্থোপেডিক ও চক্ষু ওয়ার্ডে ৩ জন করে, নিউরোসার্জারি বিভাগে ৩ জনকে ভর্তি করা হয়। এর মাঝে নিউরোসার্জারি থেকে একজনকে রাতে আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয়েছে। এছাড়া নাককান ও

গলা বিভাগে ৩ জন ভর্তি হলেও প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে একজন চলে গেছেন। সব মিলিয়ে ১৯ জন চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

হাসপাতাল প্রশাসনের প্রস্তুতি : বিস্ফোরণের ঘটনার পর বিকেল থেকেই আহত রোগী আসা শুরু হয় চমেক হাসপাতালে। সাইরেন বাজিয়ে একের পর এক অ্যাম্বুলেন্স ঢুকতে থাকে জরুরি বিভাগে। রোগী আসা শুরু হতেই উৎসুক মানুষের ভিড়ও বেড়ে যায়। সামাল দিতে বেগ পেতে হয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে।

এদিকে, ঘটনা জানার পরপর বিভিন্ন ওয়ার্ডের চিকিৎসকনার্সদের হাসপাতালে ডেকে আনা হয় জানিয়ে চমেক হাসপাতাল পরিচালক বলেন, ঘটনা জানার পরই আমরা ডাক্তারনার্স, কর্মচারী সবাইকে প্রস্তুত করে রাখি। চিকিৎসার সব ধরনের ব্যবস্থা নিয়ে রাখা হয়। স্টোর খোলে ওষুধপত্রের যাবতীয় ব্যবস্থা করা হয়। এর আগে যেহেতু বিস্ফোরণের ঘটনায় আমাদের অভিজ্ঞতা রয়েছে, সেজন্য আমরা সার্বিকভাবে প্রস্তুতি রাখতে পেরেছি।

সন্ধ্যার পরপর চমেক অধ্যক্ষ প্রফেসর ডা. সাহেনা আক্তারকে সাথে নিয়ে আহতদের খোঁজ খবর নেন হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম আহসান। এ সময় সহকারী পরিচালক ডা. রাজিব পালিত, ডা. রুমা ভট্টাচার্য, সেবা তত্ত্বাবধায়ক (ভারপ্রাপ্ত) নুরুন নাহার সাথে ছিলেন। পরে বিভাগীয় স্বাস্থ্য

পরিচালক ডা. মোহাম্মদ মহিউদ্দিন আহতদের দেখতে যান।

স্বজনদের আর্তনাদ : বিস্ফোরণে নিহতদের স্বজনদের আর্তনাদে হাসপাতালের পরিবেশ ভারী হয়ে ওঠে। জরুরি বিভাগের লাশঘরে রাখা হয় মরদেহ। পাশের একটি কক্ষে বসেছিলেন স্বজনরা। সেখানে কিছুক্ষণ পরপর বিলাপ করতে দেখা যায় নিহত ফরিদের স্ত্রী রাশেদা আক্তারকে। কথা বলে জানা যায়, ফরিদ গাড়ির

হেলপার হিসেবে ১২ বছর ধরে কাজ করছিলেন। তাদের কাজ সিলিন্ডার আনানেওয়া। প্রতিদিনই সকাল ৮টার দিকে বাসা থেকে বের হতেন ফরিদ। গতকালও বের হয়েছিলেন একই সময়ে। বিস্ফোরণের সময় গাড়ি প্ল্যান্টেই ছিল। তিনি গাড়িতে ছিলেন। তবে ওই সময় চালক গাড়িতে না থাকায় তিনি বেঁচে গেছেন।

ফরিদের তিন মেয়ে। বড় মেয়ের বয়স ১৩ বছর। সবচেয়ে ছোটটির বয়স চার। সংসারের একমাত্র অবলম্বন ও উপার্জনক্ষম স্বামীকে হারিয়ে তিন মেয়েকে নিয়ে চোখেমুখে অন্ধকার দেখছেন স্ত্রী রাশেদা।

অঙিজেন প্ল্যান্টে বিস্ফোরণের পর প্রায় আধ কিলোমিটার দূরে একটি লোহার টুকরো ছিটকে এসে পড়ে মারা যান শামসুল আলম। তার স্বজনরাও বসেছিলেন সে কক্ষে। বাবার এমন আচমকা মৃত্যু মেনে নিতে পারছেন না ছেলে রায়হান। সেখানে বসেই ক্ষণে ক্ষণে আর্তনাদ করে উঠছিলেন তিনি। এমন মৃত্যু কিছুতেই মানতে পারছেন না তার পরিবারের সদস্য ও স্বজনরা। তিন মাস আগে তার এক ছেলেও মারা যায় বলে স্বজনরা জানিয়েছেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধলোহার টুকরো আধ কিমি দূরে গিয়ে প্রাণ নিল শ্রমিকের
পরবর্তী নিবন্ধনির্বাচনে আসতে বিএনপিতে শত শত সাত্তার তৈরি হয়ে আছে : তথ্যমন্ত্রী