বাঁকখালী নদী ভরাট করে গড়ে তোলা সেই আবাসিক এলাকা উচ্ছেদ

গুঁড়িয়ে দেয়া হলো ২শ পাকা স্থাপনা

কক্সবাজার প্রতিনিধি | বুধবার , ১ মার্চ, ২০২৩ at ১০:১১ পূর্বাহ্ণ

কক্সবাজার শহরের বাঁকখালী নদী ভরাট করে অবৈধভাবে গড়ে তোলা সেই কথিত আবাসিক এলাকা অবশেষে উচ্ছেদ করেছে প্রশাসন। কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) মো. আবু সুফিয়ানের নেতৃত্বে গতকাল মঙ্গলবার সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত দীর্ঘ ৮ ঘণ্টা ধরে এ অভিযান চলে। অভিযানে ছোটবড় প্রায় দুইশ পাকা স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন অধিদপ্তরের (বিআইডব্লিউটিএ) সহযোগিতায় চালানো অভিযানে র‌্যাব, পুলিশ, পরিবেশ অধিদপ্তর ও বন বিভাগের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

কক্সবাজার শহরের পেশকারপাড়া থেকে নূনিয়াচরা পর্যন্ত বাঁকখালী নদী তীরের প্রায় ৬শ হেক্টর ম্যানগ্রোভ উদ্ভিদের বাগান ধ্বংস করে সাম্প্রতিককালে গড়ে তোলা হয়েছে কয়েকশত পাকা স্থাপনা। এরমধ্যে রয়েছে প্রভাবশালীদের কথিত আবাসিক এলাকাও। উপকূলীয় বনবিভাগের মতে, মাত্র কয়েক বছর আগেও এই আবাসিক এলাকা ছিল প্রায় ২০৬ প্রজাতির পশুপাখির আবাসস্থল। কক্সবাজার জেলা প্রশাসক কার্যালয় থেকে মাত্র ২০০ গজের মধ্যেই বাঁকখালী নদীতীরের বন নিধন করে গড়ে তোলা হয়েছে আবাসিক এলাকা।

অভিযানের নেতৃত্ব দেয়া অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) মো. আবু সুফিয়ান বলেন, কক্সবাজারের ঐতিহ্যবাহী বাঁকখালী নদী দখল করে হঠাৎ করে বিভিন্ন স্থাপনা গড়ে তোলা হয়েছে। এসব অবৈধ স্থাপনার বিরুদ্ধে কক্সবাজার জেলা প্রশাসন সবসময় সোচ্চার রয়েছে। এরপরও মঙ্গলবারের অভিযানে হাইকোর্টের নির্দেশনা বাস্তবায়ন করা হয়েছে। তিনি জানান, অভিযানের প্রথম দিন ছোটবড় অন্তত ২০০ অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে সব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হবে।

তবে অভিযোগ রয়েছে, অভিযান চলাকালে হাইকোর্টের নির্দেশনা উপেক্ষা করে সবার সামনে কঙবাজার পৌরসভার গাড়িতে করে নদীতে বর্জ্য ফেলা হলেও তা প্রতিরোধ করা হয়নি। এ প্রসঙ্গে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বলেন, বিকল্প জায়গা নির্ধারণ না করা পর্যন্ত বাঁকখালী নদীতে বর্জ্য ফেলা আমরা বন্ধ করতে পারি না।

বিআইডব্লিউটিএর উপপরিচালক (নদী বন্দর) নয়ন শীল বলেন, বাঁকখালী নদী রক্ষায় নদীতে অবৈধভাবে গড়ে তোলা স্থাপনাগুলো উচ্ছেদ করার নির্দেশনা ছিল সরকারের। এজন্য পর্যাপ্ত বরাদ্দও রয়েছে। কিন্তু নানা কারণে দীর্ঘদিন ধরে এসব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা সম্ভব হয়নি। তারপরও মঙ্গলবার জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় অবৈধ স্থাপনাগুলো উচ্ছেদ করা সম্ভব হয়েছে। আশা করি পর্যায়ক্রমে বাকি স্থাপনাগুলোও উচ্ছেদ করা সম্ভব হবে।

বাঁকখালী নদীর এ অবৈধ স্থাপনাগুলো উচ্ছেদ করে নদী সংরক্ষণ করতে এবং অবৈধ দখল ও দূষণ থেকে রক্ষা করে নদীকে তার পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) ২০১৪ সালে হাইকোর্টে একটি রিট দায়ের করে। ওই মামলার প্রেক্ষিতে ২০১৪ সালে বাঁকখালী নদীর দখলদারদের একটি তালিকা তৈরি করে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করতে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। একই সাথে নদীর যেকোনো অংশ বা নদীর তীর কাউকে ইজারা দেওয়া থেকে বিরত থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়। পাশাপাশি বাঁকখালী নদীকে কেন প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা হিসেবে ঘোষণা করা হবে না এবং সিএস ম্যাপ অনুযায়ী নদীর সীমানা নির্ধারণ করে অবৈধ দখলদার ও দূষণকারীর কাছ থেকে কেন নদীকে সংরক্ষণ করা হবে নামর্মে রুল নিশি জারি করেন। পরবর্তীতে ২০১৫ সালের ৬ জানুয়ারি মামলার শুনানিকালে আদালত কঙবাজার পৌরসভার মেয়রকে বাঁকখালী নদীতে বর্জ্য না ফেলতে নির্দেশ প্রদান করেন। একই সাথে বর্জ্য ফেলার জন্য উপযুক্ত স্থান খুঁজে বের করারও নির্দেশ দেওয়া হয়।

বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, বাঁকখালী নদী রক্ষায় উচ্চ আদালতের দেওয়া নির্দেশনা দীর্ঘদিন ধরে বাস্তবায়ন না হওয়ায় সম্প্রতি বেলার পক্ষ থেকে হাইকোর্টে কঙবাজারের জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার আবেদন করেছি। এ আবেদনের প্রাথমিক শুনানিতে কঙবাজারের জেলা প্রশাসক বেশ কয়েকবার সময় নিয়েছেন। সর্বশেষ গত রোববার আবারও এক সপ্তাহের সময় নিয়েছেন।

এদিকে শহরের কস্তুরাঘাটে উচ্ছেদ অভিযান চলাকালে উপস্থিত সাংবাদিকদের উপর চড়াও হন বাঁকখালী নদীর অবৈধ দখলদারদের তালিকাভুক্ত, মহেশখালীর শাপলাপুরের চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল খালেক। তিনি লাঠি নিয়ে এক সাংবাদিকের ওপর চড়াও হলে পরে পুলিশ এসে তাকে নিবৃত্ত করে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধআমদানি করা স্ক্র্যাপ লোহার সঙ্গে এলো দুটি মর্টার শেল
পরবর্তী নিবন্ধ২৬ কোটি টাকার খেলাপি মামলা ব্যবসায়ী দম্পতির বিরুদ্ধে পাঁচ মাসের আটকাদেশ