চট্টগ্রাম নগরীতে জলাবদ্ধতা সমস্যা নতুন নয়। এখানে এক সময় অনেক পুকুর ও দিঘি থাকলেও দিন দিন কমছে এর সংখ্যা। ফলে গ্রীষ্মকালে বিশুদ্ধ পানির সংকট তৈরি হয়। আর বর্ষাকালে জলাবদ্ধতার সমস্যা প্রকট হয়। জলাবদ্ধতা সমস্যা নিরসনে গ্রীষ্মকালে পুকুর বা দিঘির প্রয়োজনীয়তা মিটাতে নগরীর ঐতিহ্যবাহী জোড়া দিঘি ও বলুয়ার দিঘির গুরুত্ব অনেক।
সেই দুই দিঘিকে পরিবেশবান্ধব ও দখলমুক্ত রাখতে এক মাস্টার প্ল্যানের কথা জানিয়েছেন প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের নবীন গবেষক দল। তাদের গবেষণা মতে, চট্টগ্রামে দিঘি দখল ও ভরাটের প্রবণতা কমবে। নিশ্চিত হবে পানি ব্যবস্থাপনা ও নগরায়ন সুবিধা। গত সোমবার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) আয়োজিত গবেষণা, উদ্ভাবন ও প্রকাশনা মেলায় এমন উদ্ভাবন তুলে ধরেন প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্কিটেকচার বিভাগের নবীন গবেষক দল।
প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্কিটেকচার বিভাগের সহকারী অধ্যাপক কুহেলি চৌধুরীর তত্ত্বাবধানে এই গবেষণা কাজে অংশ নিয়েছেন চারজন শিক্ষার্থী। চবিতে দিনব্যাপী আয়োজিত মেলায় প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দুটি প্রজেক্ট নিয়ে অংশগ্রহণ করেছেন তারা। স্টলে চিত্রে সাজানো গবেষণা পরিকল্পনা দর্শনার্থীদের বুঝিয়ে দিয়েছেন তারা। গবেষক দল জানায়, এই দিঘিগুলোর আশেপাশের এলাকায় বিভিন্ন ধরনের অপরিকল্পিত আবাসন ব্যবস্থার কারণে সেগুলো দখলের হুমকিতে আছে। গবেষক দলের লক্ষ্য হচ্ছে, মানুষের মাঝে সচেতনতা তৈরি করে জোড়া দিঘি ও বলুয়ার দিঘিকে দখলমুক্ত রাখা। গবেষণায় নগরীর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সাথে আলোচনা করে সঠিক নীতি প্রণয়নের মাধ্যমে দিঘিসমূহের সঠিক ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করার চেষ্টার কথা বলা হয়েছে। এর ফলে নগরীর প্রধান সমস্যা জলাবদ্ধতা নিরসন হবে, বন্যার প্রকোপ কমবে। অপরদিকে পরিবেশবান্ধব পুকুর ও দিঘি ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে নগরীর বিভিন্ন ধরনের দূষণ রোধ করা সম্ভব হবে। এর ফলে যথাযথ নগরায়ন সুবিধা নিশ্চিত করা যাবে।
গবেষক দলের সদস্য নাওশাদ বলেন, নগরীর আগ্রাবাদ এলাকার পার্শ্ববর্তী যে এলাকা আছে সেটা নিয়ে আমরা কাজ করেছি। এটা জলাবদ্ধতার জন্য পরিচিত এলাকা। আমরা এই দুটি দিঘির ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে নগরীর পুকুর দখল, জলাবদ্ধতা ও দূষণ রোধে এমন একটা প্রস্তাবনা দিয়েছি যাতে সবাই উপকৃত হবে। বেঁচে যাবে মৃতপ্রায় পুকুর ও দিঘি। তিনি বলেন, আগ্রাবাদ এলাকায় এমন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা গেলে সেখানে পানির সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।
গবেষণা কাজের তত্ত্বাবধায়ক ও প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক কুহেলি চৌধুরী বলেন, চট্টগ্রামে এক সময় সাড়ে ১৬ হাজার পুকুর ও দিঘি ছিল। কিন্তু প্রতিনিয়ত দূষণ ও দখলের ফলে দিঘির সংখ্যা দাঁড়িয়েছে প্রায় ১ হাজারে। আমরা নগরীকে দূষিত করছি। দিঘি দখল করে নিয়েছি। ভরাট করে দালানের ওপর দালান তৈরি করছি। এটা আদর্শ নগরায়নের অন্তরায়।
তিনি বলেন, চট্টগ্রাম নগরীর জলাবদ্ধতা ও দূষণ রোধ করে পরিবেশ বাঁচাতে জোড়া দিঘি ও বলুয়ার দিঘি নিয়ে কাজ করেছি। এর ফলে নগরীর পুকুর ও দিঘি দূষণমুক্ত থাকবে। সঠিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে নগরায়ণের সুবিধা নিশ্চিত করা যাবে।












