বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া রাজনীতি করতে পারবেন কি না, সেই প্রশ্নে ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের হঠাৎ ‘উতলা’ হয়ে ওঠার কারণ জানতে চেয়েছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তার ভাষায়, খালেদা জিয়াকে নিয়ে সরকার এখন ‘নাটক’ করছে। আর তাকে নিয়ে আওয়ামী লীগ নেতাদের সামপ্রতিক আলোচনার উদ্দেশ্যও ‘ভালো নয়’।
গতকাল সোমবার দুপুরে এক আলোচনা সভায় বিএনপি মহাসচিব ফখরুল বলেন, বেগম খালেদা জিয়া অত্যন্ত অসুস্থ। আজকেও তিনি হাসপাতালে যান। তার স্বাস্থ্য পরীক্ষা নিরীক্ষা করার জন্য। তাকে নিয়ে (সরকার) বিভিন্নভাবে নাটক শুরু করেছেন। তাদের মন্ত্রীরা একবার বলে যে, খালেদা জিয়া রাজনীতি করতে পারবেন না। আরেকজন বলে যে, তার রাজনীতি করতে বাধা নেই। এর মাজেজা কী ভাই? হঠাৎ করে আপনাদের এত দরদ উথলে উঠল কেন যে, আপনারা বেগম খালেদা জিয়ার রাজনীতি করার ব্যাপারে একেবারে পাগল হয়ে গেলেন? খবর বিডিনিউজের।
মির্জা ফখরুল নিজেই এর উত্তর দিয়ে বলেন, উদ্দেশ্য একেবারেই খারাপ, তাদের উদ্দেশ্য খারাপ। তারা দেশের মানুষকে বিভ্রান্ত করতে চায়, তারা দেশের মানুষের দৃষ্টি ভিন্ন দিকে নিয়ে যেতে চায়। আমাদের দৃষ্টি একদিকেই, আমাদের অধিকার ফেরত চাই, আমাদের ভোটের অধিকার ফেরত চাই, এই সরকারকে আমরা আর দেখতে চাই না। এই সরকারকে এই মুহূর্তে পদত্যাগ করতে হবে এবং পদত্যাগ করে সংসদ বিলুপ্ত করতে হবে। ওই সমস্ত কথা বলে জনগণকে ভিন্ন পথে মন ভোলানো যাবে না।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি পাঁচ বছরের কারাদণ্ড হয় খালেদা জিয়ার। সেদিনই কারাবন্দি হন তিনি। ওই বছরের ৩০ অক্টোবর উচ্চ আদালত সাজা বাড়িয়ে ১০ বছর করে। এর মধ্যে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় বিএনপি নেত্রীর আরও সাত বছরের সাজা হয়। তাকে জামিনে মুক্ত করার সব চেষ্টাই বিফলে গেলে পরিবারের পক্ষ থেকে ‘মানবিক আবেদন নিয়ে’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে যান খালেদা জিয়ার ছোট ভাই শামীম ইস্কান্দার। সেই আবেদনে সাড়া দিয়ে ২০২০ সালের ২৪ মার্চ শর্ত সাপেক্ষে সাজা স্থগিত করে সরকার নির্বাহী আদেশে ছয় মাসের জন্য মুক্তি দেয় খালেদা জিয়াকে। পরে সব মিলিয়ে ছয় দফা এর মেয়াদ বাড়ানো হয়।
মুক্তি পাওয়ার পর থেকে গত তিন বছরে খালেদা জিয়া কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচিতে যাননি। এমনকি বাসার পাশে নিজের রাজনৈতিক কার্যালয়েও তাকে দেখা যায়নি। রাজনীতি নিয়ে তার কোনো বক্তব্য বা দিক নির্দেশনা প্রকাশ্যে আসেনি। এমনকি জাতীয় দিবস বা উৎসব পার্বণেও কোনো বার্তা দেননি।
রাজনীতি থেকে বিএনপি নেত্রী কেন দূরে, এ বিষয়টি নিয়ে এতদিন দল বা সরকারের পক্ষ থেকে কিছু বলা না হলেও সমপ্রতি আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদকের এক মন্তব্যে সেই আলোচনা সামনে আসে। ক্ষমতসীন দলের নেতাদের এ ধরনের আলোচনার উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলে সোমবারের আলোচনা সভায় মির্জা ফখরুল বলেন, খালেদা জিয়ার যখন রাজনীতি করার সময় আসবে, উনি রাজনীতি করবেন। সে কারাগারেই থাকুক, জেলে থাকুক আর সেখানেই থাকুক, তিনি অবশ্যই রাজনীতি করবেন। কারণ তিনি এদেশের জনগণের সবচাইতে জনপ্রিয় নেত্রী এবং গণতন্ত্রের সবচেয়ে বড় মাতা।
সুতরাং আপনাদের (সরকার) এ নিয়ে কথা বলার প্রয়োজন নেই। তার সিদ্ধান্ত তিনি নেবেন, দল নেবেন। আপনারা আগ বাড়িয়ে এসব। আর এত যদি চান, তাহলে খালেদা জিয়াকে নিশঃশর্ত মুক্তি দিন। তাকে দিয়েছেন ছয় মাসের সাজা স্থগিত, ছয় মাসের সাজা স্থগিত। আর বলছেন যে তিনি সব কিছু করতে পারবেন। এই সমস্ত কথা বলে মানুষকে বোকা বানিয়ে কোনো লাভ হবে না।
সরকারের উদ্দেশে ফখরুল বলেন, আপনারা আসল জায়গায় আসুন। জনগণের যে অসুখ, সেটার দিকে তাকান। জনগণের অসুখ একটাই যে, তারা ভোট দিয়ে তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করতে পারে না। জনগণের পার্লামেন্ট নাই। তারা কথা বলতে পারে না। সেজন্য আমাদের সবচেয়ে বড় যে দাবি এই সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে। সংসদ ভেঙে দিতে হবে এবং নতুন তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করতে হবে যার মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন গঠন হবে এবং সকলের অংশ গ্রহন নতুন নির্বাচন হবে, নতুন সরকার গঠন হবে।
তাঁতী দলের আহ্বায়ক আবুল কালাম আজাদের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব হাজী মজিবুর রহমানের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ, প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক এবিএম মোশাররফ হোসেন, সাবেক সাংসদ জিএম সিরাজ, উলামা দলের আহ্বায়ক শাহ নেছারুল হক, নজরুল ইসলাম তালুকদার মৎস্যজীবী দলের আবদুর রহিম, ডেমোক্রেটিক লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইফুদ্দিন মনিসহ তাঁতী দলের নেতারা বক্তব্য দেন।