১৯ দিন পেরিয়েছে। আগামীকাল মঙ্গলবার পর্দা নামবে বইমেলার। শেষ হবে ২১ দিনের আয়োজন। তাই বইমেলায় বাজছে বিদায়ের সুর। মেলা শুরুর পর থেকে অনেক বইপ্রেমী এতদিন স্টলে স্টলে ঘুরে সংগ্রহ করেছেন বইয়ের তালিকা। এর মধ্যে কোনটি কিনবেন তা বাছাই করেছেন। এখন মেলা শেষের পথে। তাই আর অপেক্ষার সুযোগ নেই। শেষ মুহূর্তে এসে পছন্দের বই কিনতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন তারা। প্রকাশকরাও জানিয়েছেন, বিক্রি বেড়েছে। আজ সোমবার আরো বাড়বে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন তারা।
নগরের এম এ আজিজ স্টেডিয়াম সংলগ্ন জিমনেশিয়াম মাঠে চলছে বইমেলা। এবার মেলায় রয়েছে ১৪০টি স্টল। গল্প, উপন্যাস, ছড়া–কবিতা, প্রবন্ধ, ভ্রমণকাহিনিসহ সাহিত্যের প্রায় সব শাখার বইয়ে সাজানো এসব স্টল। মেলা উপলক্ষে দেশের প্রতিষ্ঠিত লেখক থেকে শুরু করে তরুণ লেখকদের অনেক বই বেরিয়েছে। এদের ভিড়ে বাংলা সাহিত্যের খ্যাতিমান লেখকদের সাড়া জাগানো বইগুলো সমানতালে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া অনুবাদের বইয়েরও কাটতি রয়েছে এবার। এদিকে এবার প্রকাশিত বইগুলোর মধ্যে পাঠকপ্রিয়তার তালিকায় রয়েছে বাদল সৈয়দের গল্পগ্রন্থ ‘নোনাজল’, নেছার আহমদের প্রবন্ধের বই ‘সপরিবারে বঙ্গবন্ধু’, রহমান রনির থ্রিলার উপন্যাস ‘জনি ১১’ এবং শামসুদ্দীন শিশির ও আবু মোশাররফ রাসেলের যৌথ সংকলন ‘স্কুলবেলার ছড়া–কবিতা’। গতকালই মেলায় এসেছে ‘স্কুলবেলার ছড়া–কবিতা’। প্রথম দিনে পাঠকের নজর কেড়েছে গ্রন্থটি। মূলত প্রথম থেকে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত সব শ্রেণিতে পাঠ্য হওয়া ছড়া ও কবিতার সংকলন গ্রন্থটি। এ গ্রন্থে স্থান পাওয়া ছড়া ও কবিতাগুলো আশি ও নব্বই দশকে পাঠ্য ছিল। বর্তমানে পাঠভুক্ত নয়। ফলে গ্রন্থটি হাতে নিয়েই স্মৃতিকাতর হয়ে পড়েন পাঠক, ফিরে যান ছেলেবেলায়। বইটি পাওয়া যাচ্ছে আপন আলো ও চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের স্টলে।
আবু মোশাররফ রাসেল আজাদীকে বলেন, স্কুলজীবনের কোনো ছড়া শিশুকে আনন্দ দেয়, কোনো ছড়া তাকে ভাবিয়ে তুলে গভীর কোনো বিষয়ে। কোনো কবিতা তাকে জীবনচলার পথে বাধা ডিঙানোর শিক্ষা দেয়, কোনো কবিতা করে তুলে দৃঢ় সাহসী। কোনো কবিতা তার ভেতরে জাগিয়ে তুলে নৈতিক দর্শন, মানবিকচর্চার সংস্কৃতি। এভাবে সেই ছড়া–কবিতাগুলো প্রতিটি মানুষের জীবনে শৈশবের আনন্দ, কৈশোরের ভালো লাগা কিংবা প্রিয় অনুষঙ্গ হয়ে চিরদিন স্মৃতিতে ভেসে থাকে। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে স্মৃতি থেকে সেগুলো হারিয়ে যেতে থাকে। অনেক ক্ষেত্রে পাঠ্যবই থেকে উঠে যায়। বিস্মৃত হতে যাওয়া সেই ছড়া–কবিতাগুলো এক মলাটে স্মৃতিকাতর প্রজন্মের হাতে তুলে দিতে আমাদের এই সংকলন।
নেছার আহমদের ‘সপরিবারে বঙ্গবন্ধু’ পাওয়া যাচ্ছে শিশুপ্রকাশের স্টলে। বইটি নিয়ে সাহিত্যিক রাশেদ রউফের মূল্যায়ন হচ্ছে, ‘সপরিবারে বঙ্গবন্ধু’ নেছার আহমদের শ্রমলব্ধ বড় কাজ। এ গ্রন্থে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর পরিবারের সকল সদস্যের অনন্য অবদানের কথা শ্রদ্ধার সঙ্গে তুলে ধরেছেন তিনি। গ্রন্থভুক্ত নানা লেখায় মূল্যায়ন করার চেষ্টা হয়েছে তাঁদের অপরিসীম ও অবিস্মরণীয় ভূমিকা। গ্রন্থটি বঙ্গবন্ধু বিষয়ক একটি আকরগ্রন্থ হিসেবে বিবেচিত হবে নিঃসন্দেহে।
বাদল সৈয়দের গল্পগ্রন্থ ‘নোনাজল’ পাওয়া যাচ্ছে তাম্রলিপির স্টলে। তীক্ষ্ন হুইসেল বাজিয়ে ট্রেন যাত্রা শুরু করল। প্রথমে ধীরে, তারপর গতি বাড়ছে। বাইরে জানালার পাশে চরিত্রগুলো দৌড়াচ্ছে, তারা তাকে বিদায় দিতে চায় না। তিনিও কি চান? না, চান না। এদের সাথে প্রায় একটি বছর তিনি কাটিয়েছেন, তাদের সাথে কেঁদেছেন, হেসেছেন, চা খেয়েছেন কখনো বা জমিয়েছেন তাসের আড্ডা। ওই যে সবার আগে দেখা যাচ্ছে অষ্টাদশী মেয়েটিকে, যার একটুতেই কেঁদে দেওয়ার অভ্যাস। আচ্ছা! মেয়েটিকে তো তিনি সত্যটা বলেননি। কোন সত্য? জানা যাবে ‘নোনাজল’ পাঠে।
থ্রিলারপ্রেমীদের পছন্দের বইয়ের তালিকায় স্থান করে নিয়েছে রহমান রনির ‘জনি ১১’। পৃষ্ঠায় পৃষ্ঠায় টানটান উত্তেজনা। কারণ ঘটনা ঘটে যাচ্ছে একের পর এক। বিভ্রান্তি ছড়িয়ে পড়ছে। বোঝা যাচ্ছে না কী ঘটছে, কেন ঘটছে! এদিকে একে একে বেড়ে চলেছে খুন, রহস্যজনক মৃত্যু। সন্ধান পাওয়া গেছে উদ্ভট ভাইরাসের। চারদিকে উত্তেজনা। জনমনে ছড়িয়ে পড়ছে আতংক। বিভিন্ন স্থানে লাশ পাওয়া যাচ্ছে। বীভৎস মৃত্যু। কিন্তু কেন? কেন তাদের খুন করা হচ্ছে? এ মৃত্যুর নেপথ্যে কারা? পরিস্থিতি নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। এবার সমস্যা সমাধানে ডাকা হলো জনি ১১–কে। তারা পারবে? উত্তরে পেতে হলে পড়তে হবে ‘জনি ১১’। বইটি পাওয়া যাচ্ছে চন্দ্রবিন্দুর স্টলে।
যুব উৎসব : গতকাল বইমেলা মঞ্চে আয়োজন ছিল ‘যুব উৎসব’। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার ড. মো. আমিনুর রহমান। চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলামের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন একুশে পদকপ্রাপ্ত গুণীজন জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়, কলামিস্ট কামরুল হাসান বাদল ও কাউন্সিলর নাজমুল হক ডিউক। স্বাগত বক্তব্য রাখেন বইমেলা কমিটির আহ্বায়ক কাউন্সিলর ড. নিছার উদ্দিন আহমেদ মঞ্জু। উপস্থিত ছিলেন চসিক সচিব খালেদ মাহমুদ, প্রধান শিক্ষা কর্মকর্তা লুৎফন নাহার, প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা মো. নজরুল ইসলাম, মেয়রের একান্ত সচিব মুহাম্মদ আবুল হাশেম, আঞ্চলিক কর্মকর্তা মো. রেজাউল করিম, স্পেশাল ম্যাজিস্ট্রেট মনীষা মহাজন ও শিক্ষা কর্মকর্তা উজালা রাণী চাকমা।
ড. মো. আমিনুর রহমান বলেন, একটি জ্ঞানমুখী, প্রশিক্ষিত ও আদর্শ যুবসমাজ জাতির মেরুদণ্ড।