আগামী পহেলা বৈশাখ থেকে ভূমি কর সম্পূর্ণ অনলাইনে আদায় করা হবে বলে জানিয়েছেন ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ। গতকাল বৃহস্পতিবার নগরীর পাঁচ তারকা হোটেল রেডিসন ব্লু বে ভিউ’র মোহনা হলে আয়োজিত ১৫তম রিহ্যাব চট্টগ্রাম ফেয়ার–২০২৩ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। তিনি আরো বলেন, জায়গা–জমি নিয়ে আইনগত বেশকিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে। প্রকৃত মালিকদের যেন কোনো ধরনের ক্ষতি না হয়, সেসব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে আইনগুলো করা হয়েছে। এখন ভূমি কর আদায় করতে সরকার সহজ ব্যবস্থা করেছে। ভূমি মালিকরা ঘরে বসেই ভূমির বকেয়া দেখতে পারবেন, বকেয়া বিল পরিশোধ করতে পারবেন ঘরে বসেই। আগে ভূমি অফিসে গিয়ে নাগরিকদের নানারকম হয়রানির শিকার হতে হত।
রিহ্যাবের সদস্যদের উদ্দেশ্যে ভূমিমন্ত্রী বলেন, ডেভেলপারদের আরও সৃজনশীলতার পরিচয় দিতে হবে। ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে মানুষের রিফ্রেশমেন্টের বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে। খোলামেলা মাঠ ও পর্যাপ্ত হাঁটা–চলার ব্যবস্থা রেখে ডেভেলপমেন্ট করা প্রয়োজন। ব্যক্তিগত জীবনে আমি একজন ব্যবসায়ী। নির্মাণ সামগ্রীর দাম বাড়ার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু সিমেন্টের কথা যদি বলি, সিমেন্টের দাম বাড়িয়েও ব্যবসায়ীরা লসে আছে। তবে এ মন্দাভাব বেশিদিন থাকবে না। কেটে যাবে।
তিনি আরো বলেন, বিল্ডিং কোড মানার ব্যাপারে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে (সিডিএ) আরও তদারকি বাড়াতে হবে। আবাসন কোম্পানিগুলো সুউচ্চ বিল্ডিং করছে। কিন্তু বিল্ডিং কোড কয়জনে মানছে? ডেভেলপারদের প্রতি অনুরোধ থাকবে– সঠিক মাপের ফ্ল্যাট গ্রাহকদের বুঝিয়ে দিতে হবে। কমন এরিয়ার নামে ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ কেড়ে নিচ্ছে অনেক আবাসন প্রতিষ্ঠান, যা অনৈতিক। এ ধরনের কর্মকাণ্ড থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, রিহ্যাব সদস্য ছাড়াও দেশে অনেক ডেভেলপার আছে যারা অনেক ক্রেতার সঙ্গে প্রতারণা করছে। অনেকে ডেভেলপারের হাতে জমি দেওয়ার পর চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও তা হস্তান্তর করতে পারে না। এতে ডেভেলপারের দুর্নাম হচ্ছে। রিহ্যাবের এ ক্ষেত্রে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। যারা রিহ্যাবের মেম্বার হবে না, তারা যেন আবাসন ব্যবসায় জড়িত হতে না পারেন। মানুষের ভোগান্তি লাঘবে মেয়র হিসেবে আমার প্রতিষ্ঠান একটি কাজ করতে পারে তা হল ট্রেড লাইসেন্স দেওয়া বন্ধ করা। তবে এ প্রস্তাব রিহ্যাবের কাছ থেকে আসতে হবে।
রিহ্যাবের কেন্দ্রীয় ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং চট্টগ্রাম রিজিওনাল কমিটির চেয়ারম্যান আব্দুল কৈয়ূম চৌধুরী বলেন, চট্টগ্রামে একটি মাস্টারপ্ল্যান করা হচ্ছে। এমন কোনো প্ল্যান যেন না হয় যা নিয়ে সবার প্রশ্ন থাকে। অতীতের মাস্টার প্ল্যান নিয়ে অনেক সমস্যা ছিল। ফ্ল্যাট কেনাবেচার ক্ষেত্রে সেকেন্ডারি মার্কেট তৈরি করা ও ভূমির রেজিস্ট্রেশন ফি সহনীয় পর্যায়ে নিয়ে আসার প্রয়োজন বলে মনে করি। এছাড়া আজ আমাদের দেশের টাকা চলে যাচ্ছে দেশের বাইরে, কানাডায় গড়ে উঠেছে বেগম পাড়া। শুধুমাত্র কানাডায় নয় অন্যান্য দেশেও টাকায় মানুষ বাড়ি করছে। আমাদের দেশে বিনিয়োগের সুযোগ করে দিলে দেশের টাকা দেশেই বিনিয়োগ হতে পারতো।
রিহ্যাবের প্রথম সহ–সভাপতি কামাল মাহমুদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সিডিএর চেয়ারম্যান জহিরুল আলম দোভাষ, চট্টগ্রাম চেম্বারের সভাপতি মাহবুবুল আলম, রিহ্যাবের ভাইস প্রেসিডেন্ট লায়ন শরীফ আলী খান। এছাড়া উপস্থিত ছিলেন রিহ্যাব পরিচালক কামরুল ইসলাম, পরিচালক ও চট্টগ্রাম রিজিওনাল কমিটির কো–চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ দিদারুল হক চৌধুরী ও মাহবুব সোবহান জালাল তানভীর।
উল্লেখ্য, চারদিনব্যাপী রিহ্যাব চট্টগ্রাম ফেয়ারে মোট ৪৮টি প্রতিষ্ঠান অংশগ্রহণ করেছে। এরমধ্যে গোল্ড স্পন্সর হিসেবে রয়েছে ২টি প্রতিষ্ঠান, কো–স্পন্সর হিসেবে ১৭টি প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে ৬টি এবং বিল্ডিং ম্যাটেরিয়ালস প্রতিষ্ঠান রয়েছে ৫টি।












