কবি ও কবিতার আনন্দ

আজাদী প্রতিবেদন | রবিবার , ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ at ৭:৪৪ পূর্বাহ্ণ

কবিতা; যার নির্দিষ্ট কোনো সংজ্ঞা নেই। তবে কবিতায় শব্দের বুননে নিজের ভাবনার প্রতিফলন ঘটান কবি। আবার ‘কবিতা বললে আমরা বুঝি সেই শিল্প, যা শব্দকে ব্যবহার করে এমনভাবে, যা কল্পনার রাজ্যে জাগিয়ে দেয় এক স্বপ্ন।’

কবি পার্সি বিশি শেলির ভাষায়, ‘কবিতা পরিতৃপ্তির বিষয়। কবিতা তখনই সার্থক হয়, যখন কবি মনের পরিতৃপ্তিতে পূর্ণতা আসে।’ কবির মনে সেই তৃপ্তি তখনই আসে যখন কবিতা পাঠে আনন্দ পান পাঠক। তাই পাঠকের কাছে কবিতা পৌঁছে দিতে উন্মুখ থাকেন কবি। পাঠকও অপেক্ষায় থাকেন পছন্দের কবিতার। দুই পক্ষের সারা বছরের এই অপেক্ষার কিছুটা হলেও অবসান ঘটায় বইমেলা।

নগরের এম এ আজিজ স্টেডিয়াম সংলগ্ন জিমনেশিয়াম মাঠে চলছে বইমেলা। অংশ নেয়া বিভিন্ন প্রকাশনা স্টলে শোভা পাচ্ছে কাব্যগ্রন্থ। অর্থাৎ দুই পক্ষের অপেক্ষার অবসান ঘটেছে।

এবার প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে ময়ুখ চৌধুরীর ‘কালো বরফের প্রতিবেশী’, ইউসুফ মুহম্মদের ত্রয়ী কাব্যগ্রন্থ ‘শূন্যসূত্র’, এজাজ ইউসুফীর ‘মধুব্রত অধুনা নগরে’, আকতার হোসাইনের ‘শ্রেষ্ঠ কবিতা’, হাফিজ রশিদ খানের ‘না দেখিলে পরান পোড়ে’, জিললুর রহমানের ‘এক সে মেরাজের

রাত্রে ঘুমিয়েছি’, শাহিদ হাসানের ‘শিরায় শিরায় অনুনাদ’, সেলিনা শেলীর ‘বর্ণায়িত মিথ্যের মতো’, মিনু মিত্রের ‘নদীক্লান্ত ঘর’, রিমঝিম আহমেদের ‘কেন আমি সমুদ্রে ডুবে গিয়েছিলাম’, সাদিয়া আফরিনের ‘ভাবনার ভায়োলিন’, মোহাম্মদ জাভেদ হোসেনের ‘ছায়াবাজি প্রেম’, রুমি চৌধুরীর ‘মখমলি গোধূলি’, একরাম আজাদের ‘বাঁ পাশের শূন্য’ এবং সাজিয়া আফরিনের ‘অতোটা ফুলের প্রয়োজন নাই’।

কবি ময়ুখ চৌধুরীর ‘কালো বরফের প্রতিবেশী’ প্রথম বেরিয়েছিল ১৯৮৯ সালে। এবার বইমেলা উপলক্ষে পুনঃমুদ্রণ করে প্রকাশনা সংস্থা চন্দ্রবিন্দু। বিষয় ও শৈলীগত বৈচিত্র্যের কারণে পাঠকের মন জয় করে নিয়েছে কাব্যগ্রন্থটি।

মধুব্রত অধুনা নগরে’ এর ফ্ল্যাপে লেখা আছে, এজাজ ইউসুফী সংহত অনুভূতির দাহ্য ভাষ্যকার। বাংলা কবিতা যখন স্বর ও স্বরায়নে মূল্যবোধহীনতায় আবর্তিত প্রায়, তখন শব্দ ও ভাবের বিলাবলে এজাজের কবিতায় আমরা দ্যাখি, ভিন্ন ভাবের উপস্থিতি। পূর্বতন ও সমকালীন ভাষার যাদু স্পর্শে সৃষ্ট ভাষা

ইতিহাস ঐতিহ্য চেতনার আনুকূল্য লাভ করে নতুন এক অভিনবত্ব নিয়ে সমর্থতার দিকে ছুটছে কবিতা। প্রচলিত বিষয় অলংকার এবং প্রথাগত শর্ত অনুশীলন না ক’রে কবি নিপুণ ভঙ্গিমায় মানবিক এক কাব্যভাষা তৈরি করেন যা মস্তিষ্ক ও কানে এবং ইতিহাস চেতনার ভেতর দিয়ে সাড়া জাগায়। ইতিহাসের মুখোমুখি

দাঁড়িয়ে কবি প্রস্তুত করেন অনুভূতির ধারাক্রমে ভিন্ন বিষয় মাত্রিক আবহ। মাটি ও ইতিহাস সমানতালে হেঁটে কবিতায় গভীর যোজনায় তিনি প্রাসঙ্গিক ও সাম্প্রতিক হ’য়ে ওঠেন। কবি’র ভ্রামণিক চোখ জীবনজিজ্ঞাসার ক্যানভাসে মধুব্রত অধুনা নগরের যাজ্ঞবল্ক্য স্থপতি, স্থিতধী, প্রজ্ঞাবান দার্শনিক, বীক্ষণে ঋদ্ধ এবং সাকুল্যে পর্যবেক্ষণশীল পরিব্রাজক।

আকতার হোসাইনের ‘শ্রেষ্ঠ কবিতা’র ফ্ল্যাপে লেখা আছে, আকতার হোসাইনএর কবিতাযাত্রা আমাদের সমপদেই শুরু হয়েছিল, সঠিক শনাক্তকরণের দিক থেকে বিগত শতকের আশির দশকে। শিশুকিশোরমনের উদার, কৌতূহলী ভুবনেও তার সৃজনশীল বিচরণ আছে ছড়ায়ছন্দে, কাব্যকথার মজলিশে। দীর্ঘ

পথচলায় তার সম্ভারে যুক্ত হয়েছে কবিতার জন্যে বহুরঙা ঋদ্ধ গুলবাগ। তা থেকে শ্রেষ্ঠ কবিতার মোড়কে সজ্জিত এই চয়নিকাটি আকতার হোসাইনএর সত্তার মুকুর হয়ে উঠেছে। এখানে সন্নিবেশিত কবিতাগুলো কবির যাপিত অনুভব ও অনুরণনের রেশ ধরে বহুদূর যেতে চায় প্রেমেক্ষোভেক্রোধে আর আলিঙ্গনে।

বাঁ পাশের শূন্য’ এর ফ্ল্যাপে লেখা আছে, শয়ে শয়ে মহাপুরুষের ভিড়ে আমি সেই নাপুরুষ যে বিপ্লবের মিছিলের থেকে আলগোছে বাঁচিয়ে চলি নিজেকে; সেই ০ যে ১এর পাশে জুটে কখনও ১০ নয় ০১ হয়ে পড়ি; সেই ভোট যে আয়ুর ফানুসে ভেসে মাথার সংখ্যা বাড়িয়ে চলেছি কেবল, মাথাপিছু শক্তি নয়। এ আবহ থেকেই গ্রন্থটির নাম বাঁ পাশের শূন্য রাখা হয়েছে, যার সরল অর্থ দাঁড়ায় ‘অকেজো’।

নদীক্লান্ত ঘর’ এর ফ্ল্যাপে লেখা আছে, সত্য, সুন্দর কিংবা শাশ্বত কল্যাণবোধ ও নন্দনবোধের সুতীব্র প্রেরণাই কবিকে কবিতার সৌধ নির্মাণে রসদ যুগিয়ে চলে। কবি মিনু মিত্রের কবিতায়ও আমরা সেই চিরায়ত মানবভাবনার বিচিত্র মানবিক ও শৈল্পিক দিক প্রত্যক্ষ করি। গভীর সংবেদনশীলতায় জীবনের বহুবর্ণিল

রূপরসগন্ধ ওঠে আসে তাঁর কবিতায়। তাঁর কবিতায় প্রেম, প্রকৃতি, জীবনের সুখদুঃখ, হাসিকান্না, আনন্দবেদনার শতধা বিচ্ছুরণ ঘটেছে ব্যক্তিক অনুভবের স্তর থেকে। ক্রমে তা স্বদেশ, সমাজ ও সমকালীনতার সহস্র অভিঘাতে সামষ্টিক বিষয়ভাবকেও সম্পৃক্ত করে। এভাবে তাঁর কবিতা হয়ে ওঠে অনুপম সৌন্দর্যের আকর। এই কবিতাপাঠে আলোড়িত হবে পাঠক এবং কাব্যানুরাগী মানসে নিশ্চয়ই জন্ম নেবে নবতর কাব্যবোধ।

ভাবনার ভায়োলিন’ এর ফ্ল্যাপে লেখা আছে, ‘হৃদয়ের কক্ষপথ পরিভ্রমণ করতে গিয়ে/ প্রকট থেকে প্রকটতর হয় নীল কষ্টগুলো। বুকের ভেতর ভাঙনের শব্দ/ দম হারানোর গল্পগুলো নিঃশব্দে ভাবায়/ আমার মন খারাপের দিন/ আমার বিষণ্ন রাত…/ মহুয়ার মাতাল গন্ধে ভাবনায় বাজায় ভায়োলিন’।

সংশোধনী : গতকাল ‘পাঠকের আবদার রক্ষায় ব্যস্ত লেখক’ শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনের নবম প্যারায় লেখা হয়, ‘বইমেলায় শৈলী প্রকাশনের স্টলে উপস্থিত হয়ে গেছে, পাঠক এসে খুঁজছেন ‘তোমার বসন্তদিনে’। মূলত বাক্যটি হবে ‘গত সপ্তাহে বইমেলায় শৈলী প্রকাশনের স্টলে উপস্থিত হয়ে দেখা গেছে, পাঠক এসে খুঁজছেন ‘তোমার বসন্তদিনে’। মুদ্রণত্রুটির কারণে ‘গত সপ্তাহে’ শব্দটি বাদ পড়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধশিব চতুর্দশীতে সীতাকুণ্ড ও মহেশখালীতে পুণ্যার্থীদের ভিড়
পরবর্তী নিবন্ধএত উন্নয়ন-অগ্রযাত্রা, এগুলো চোখে পড়ে না বিএনপির