অনুসারী বলে মিডিয়ায় প্রচার ইচ্ছাকৃত : নওফেল

| শনিবার , ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ at ৬:১৭ পূর্বাহ্ণ

অপরাধজনক কাজের দায় ‘অপরাধকারী ব্যক্তির’ মন্তব্য করে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেছেন, অনুসারী সৃষ্টির রাজনীতিতে তিনি ‘বিশ্বাস করেন না’। সমপ্রতি চট্টগ্রামের কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে একাধিক হামলা, সংঘর্ষ ও মারধরের ঘটনায় জড়িত ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের ‘নওফেলের অনুসারী’ হিসেবে বর্ণনা করে সংবাদ প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার প্রেক্ষাপটে উপমন্ত্রীর এই প্রতিক্রিয়া।

গতকাল শুক্রবার এক বিবৃতিতে নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করে নওফেল বলেন, ‘কিছু প্রতিষ্ঠানে গুটিকয়েক ছাত্র/ব্যক্তি দ্বারা সংঘটিত অপরাধমূলক ঘটনায় দেখা যাচ্ছে, সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের পরিচয় লেখার জায়গায় আমার অনুসারী বলে পরিচিত করা হচ্ছে। জনপ্রতিনিধি হিসেবে যেহেতু রাজনীতিতে আছি, স্বাভাবিকভাবেই অনেকে আমার অনুসারী পরিচয়ে পরিচিত হওয়ার চেষ্টা করবে।

গণমাধ্যমসহ সকলের প্রতি বলতে চাই, ব্যক্তিগত অনুসারী সৃষ্টির রাজনীতিতে আমি বিশ্বাস করি না এবং অনুসারী পরিচয়ে যারা অপরাধ করেছে বা করছে, তাদের পক্ষে থাকা বা সমর্থন আমি কখনই করি নাই এবং আগামীতেও করব না।’ খবর বিডিনিউজের।

গত ৮ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) ছাত্রাবাসে চারজন ছাত্রকে ‘শিবির সন্দেহে’ মারধর করার অভিযোগ ওঠে ছাত্রলীগ কর্মীদের বিরুদ্ধে। তাদের মধ্যে দুজন এখনো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তবে ছাত্রলীগ কর্মীদের দাবি, ওই ‘চার শিবির কর্মী’ কলেজের পরিবেশ ‘নষ্টের পাঁয়তারা’ করছিলেন। তাদের কাউকে মারধর করা হয়নি, কেবল ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।

যাদের বিরুদ্ধে মারধরের অভিযোগ তারা চট্টগ্রাম মেডিকেলে নিজেদের শিক্ষা উপমন্ত্রী নওফেলের অনুসারী হিসেবে পরিচয় দিয়ে থাকে।

বিবৃতিতে চট্টগ্রাম৯ আসনের সংসদ সদস্য নওফেল বলেন, ‘এখন পর্যন্ত কেউ অভিযোগ করতে পারবে না, কোনো সংঘাতমূলক ঘটনার সুষ্ঠু নিরপেক্ষ তদন্তে আমি কখনও হস্তক্ষেপ করেছি। তারপরেও দেখা যায়, পরিকল্পিতভাবে, প্রচারণার জায়গায়, অনেক ঘটনা ও সংঘর্ষ শেষে, গণমাধ্যমে ঘটনায় সন্দেহভাজনদেরকে আমার অনুসারী হিসেবে আখ্যায়িত করে প্রচার হচ্ছে। সন্দেহভাজন কোনো ব্যক্তির সাথে সহযোগিতামূলক সংশ্লিষ্টতা না থাকলে, অনুসারী বলে প্রচারণা সুনির্দিষ্টভাবেই ইচ্ছাকৃত।’

এদিকে গত ৮ ফেব্রুয়ারি রাতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে শাহজালাল হলের সামনে সংঘর্ষে জড়ায় শাখা ছাত্রলীগের তিনটি পক্ষ। যাদের মধ্যে দুটি পক্ষ নিজেদের নওফেলের অনুসারী হিসেবে পরিচয় দিয়ে থাকে। এর আগে ৭ ফেব্রুয়ারি বক্তব্য দিতে শ্রেণিকক্ষে প্রবেশের অনুমতি না দেওয়ায় চট্টগ্রামের ওমরগণি এমইএস কলেজে এক শিক্ষিকাকে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ ওঠে ছাত্রলীগের এক নেতার বিরুদ্ধে।

সেই ছাত্রলীগ নেতা রাকিব হায়দার কলেজটিরই শিক্ষার্থী; তিনি ডবলমুরিং থানা ছাত্রলীগে আছেন সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে।

লাঞ্ছিত শিক্ষক ঘটনার দিনই বিষয়টি শিক্ষা উপমন্ত্রীকে অবহিত করেন। বিবৃতিতে শিক্ষা উপমন্ত্রী বলেন, আমার নিজের পরিবারের সদস্য, বন্ধুবান্ধব, রাজনৈতিক সহকর্মী, ব্যবসায়িক বা পেশাগত অংশীদার, যে কোনো কেউ, অপরাধজনক কাজ করলে অবশ্যই এর দায়িত্ব অপরাধকারী ব্যক্তির, এবং আমার কাছ থেকে এর জন্যে কোনো প্রকার সহযোগিতা তারা পাবে না।

তাই অনুরোধ করব, যারা প্রচার এবং প্রকাশনা করছেন, সুষ্ঠু নিরপেক্ষ তদন্ত এবং যে কোনো অপরাধের শাস্তির জন্যেই, আমার অনুসারী বলে নাম দিলে দেখা যায় দায়ী ব্যক্তিরা আরো বেশি প্রশ্রয় পায় এবং অপরাধকে রাজনৈতিক সংঘর্ষ বলে সামাজিকভাবে হালকা করার সুযোগ পায়।’

চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে দুটি ধারা আছে। এর একটির নেতৃত্বে আছেন সাবেক মেয়র ও নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন। অন্যটির নেতৃত্বে ছিলেন তিনবারের সাবেক মেয়র ও নগর কমিটির সভাপতি এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী।

মহিউদ্দিন চৌধুরীর মৃত্যুর পর তার অনুসারীরা তার বড় ছেলে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের সাথে রাজনীতিতে সক্রিয় হয়। তবে শুরু থেকেই নওফেলের দাবি, তিনি অনুসারী সৃষ্টির রাজনীতিতে বিশ্বাসী নন। বিবৃতিতে নওফেল বলেন, যে কোনো অপরাধের নিরপেক্ষভাবেই তদন্ত হোক, এবং দায়ী ব্যক্তির আইনত শাস্তি হবে, এটিই আমাদের সকলের প্রত্যাশা।

সরাসরি নির্দেশনা না থাকলে বা সংশ্লিষ্টতা না থাকলে, ব্যক্তির অনুসারী বলে প্রকাশ ও প্রচারণা নৈতিকভাবে সমর্থনযোগ্য নয়, এতে অপরাধের বিচারের বদলে তাকে প্রচ্ছন্ন সহযোগিতা করা হয়ে যায়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধআধিপত্য নিয়ে দেবপাহাড়ে দুই পক্ষের মারামারি
পরবর্তী নিবন্ধগরিব ও মধ্যবিত্তের নাগালের বাইরে বিদেশি ফল