প্যাথলজি বিভাগের নতুন রূপ

আজাদী প্রতিবেদন | শনিবার , ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ at ৬:১৪ পূর্বাহ্ণ

বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টারসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের তুলনায় অনেকটা কম খরচে পরীক্ষানিরীক্ষার (টেস্ট) সুবিধা রয়েছে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের প্যাথলজি বিভাগে। আর কম খরচে পরীক্ষা করাতেই হাসপাতালের প্যাথলজিতে দিন দিন ভিড় বাড়ছে।

যেন তিল ধারণের ঠাঁই থাকছে না। তবে এতদিন হাতে গোনা মাত্র কয়েকটি কাউন্টারে সেবাদানের কারণে দীর্ঘ লাইনে অপেক্ষার ভোগান্তি সয়েই পরীক্ষানিরীক্ষা করাতে হত রোগীদের।

এ নিয়ে গত ৪ অক্টোবর (২০২২ সালের) দৈনিক আজাদীর প্রথম পাতায় ‘চমেক হাসপাতালের প্যাথলজি বিভাগ : কম খরচে পরীক্ষা করাতে দীর্ঘ লাইন/জনবল জায়গা সংকটে ভোগান্তি’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এরপরই সেবা প্রার্থীদের ভোগান্তি কমাতে উদ্যোগ নেয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। উদ্যোগের অংশ হিসেবে বাড়ানো হয়েছে নমুনা (স্যাম্পল) সংগ্রহে কাউন্টারের সংখ্যা।

পাশাপাশি সেবা প্রার্থীদের জন্য করা হয়েছে বসার ব্যবস্থাও। এতে করে সেবা প্রার্থীদের ভোগান্তি অনেকটাই কমেছে। এতদিন নমুনা সংগ্রহে কম সংখ্যক কাউন্টারের কারণে সেবা প্রার্থীদের দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষায় থাকতে হতো। বসার ব্যবস্থাও ছিল অপর্যাপ্ত।

সবমিলিয়ে ভোগান্তি পোহাতে হত সেবা প্রার্থীদের। তবে সংস্কারের মাধ্যমে হাসপাতালের প্যাথলজি বিভাগকে বর্তমানে নতুন রূপ দেয়া হয়েছে। সেবা প্রার্থীদের নির্বিঘ্নে সেবাদানের লক্ষ্যেই প্যাথলজি বিভাগে সংস্কারের উদ্যোগ নেয়া হয় জানিয়ে চমেক হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম আহসান আজাদীকে বলেন, আগে নমুনা সংগ্রহে কাউন্টারের সংখ্যা কম ছিল।

যা অনেক বেশি সেবা প্রার্থীর বিপরীতে পর্যাপ্ত ছিল না। এতে করে কিছুটা সংকট দৃশ্যমান হয়। সংকট কাটাতে ও মানুষের ভোগান্তি কমাতে আমরা নমুনা সংগ্রহের কাউন্টার সংখ্যা বাড়িয়েছি। পাশাপাশি সেবা প্রার্থীদের জন্য বসার ব্যবস্থাও করা হয়েছে।

এখন পরিস্থিতির অনেকটা উন্নতি হয়েছে বলা যায়। সেবা প্রার্থীরা আগের তুলনায় অনেকটা ভোগান্তিহীন ভাবে পরীক্ষানিরীক্ষা করাতে পারছেন। স্টাফরাও নির্বিঘ্নে সেবা দিতে পারছেন। সেবা প্রার্থীদের ভোগান্তি কমাতে আরো যা করা দরকার, প্রয়োজনে তার সবই করা হবে বলে জানান হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম আহসান।

সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, এতদিন দুটি কাউন্টারে টেস্ট বাবদ ফি আদায় করা হতো বিভাগে। আর নমুনা সংগ্রহ করা হতো তিনটি বুথে। কিন্তু রোগীদের প্রচন্ড চাপ সামলাতে হিমশিম অবস্থা। দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হত বয়স্ক, নারীশিশুসহ সব রোগীদের। প্রচন্ড ভিড়ের মাঝে রোগীদের কাহিল অবস্থা। এতসব ভোগান্তি সয়ে পরীক্ষানিরীক্ষার অন্যতম কারণ, এখানে খরচ কম।

সবার পক্ষে বাইরের ডায়াগনস্টিক সেন্টারের পরীক্ষার ফি বহন করা সম্ভবপর নয়। তবে নমুনা সংগ্রহের কাউন্টার (বুথ) বাড়িয়ে তিনটি থেকে সাতটি করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্যাথলজি বিভাগের ইনচার্জ শুভাশীষ বড়ুয়া। তাছাড়া আগে সেবা প্রার্থীদের বসার জায়গার সংকট থাকলেও বর্তমানে তাও অনেকটা দূর করা হয়েছে। এখন অন্তত অর্ধশতাধিক সেবা প্রার্থীর বসার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

সম্প্রতি বাড়তি কয়েকজন লোকবলও পাওয়া গেছে। এর মাধ্যমে সেবা প্রার্থীরা অনেকটা ঝামেলাহীন ভাবে সেবা পাচ্ছেন। পাশাপাশি স্টাফরাও নির্বিঘ্নে সেবা দিতে পারছেন। সেবার পরিবেশটাও অনেক উন্নত হয়েছে। উদ্যোগ নিয়ে বিভাগের নতুন রূপ দেয়ায় হাসপাতাল প্রশাসনকে ধন্যবাদও জানিয়েছেন শুভাশীষ বড়ুয়া।

প্যাথলজি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, সিবিসি, আরবিএস, ক্রিয়েটিনিন, বিলরুবিন, সিআরপি, এসজিপিটি, ইলেকট্রলাইট, কোলেস্ট্রল, ইউরিন, ডোপ টেস্টসহ প্যাথলজি সংক্রান্ত ৩৮ ধরনের পরীক্ষানিরীক্ষার সুবিধা রয়েছে এখানে। খরচও বেসরকারি অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের তুলনায় অনেক কম। প্রায় অর্ধেক বলা চলে। হাসপাতালের প্যাথলজি বিভাগে মাত্র ২০০ টাকায় রক্তের সিবিসি পরীক্ষা করা যায়।

কিন্তু বাইরে এ পরীক্ষার ফি ৪০০ টাকার কম নয়। একই ভাবে প্রায় সব ধরণের পরীক্ষানিরীক্ষার ফি হাসপাতালের প্যাথলজি বিভাগের চেয়ে বাইরের ডায়াগনস্টিক সেন্টারে কয়েকগুণ বেশি। তুলনামূলক অনেক কম খরচে পরীক্ষানিরীক্ষার জন্যই হাসপাতালের প্যাথলজিতে দিন দিন রোগীদের ভিড় বাড়ছে। দৈনিক কম হলেও ৬ শতাধিক রোগীর বিভিন্ন টেস্ট করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন প্যাথলজি বিভাগের ইনচার্জ শুভাশীষ বড়ুয়া। তিনি জানান, /৭ মাস আগেও দৈনিক সর্বোচ্চ আড়াইশ থেকে তিনশ টেস্ট হতো।

কিন্তু এখন ৬ শতাধিক টেস্ট হচ্ছে দিনে। তাছাড়া নতুন করে ডোপ টেস্ট চালু হয়েছে। দিনে অন্তত একশ জনের ডোপ টেস্ট হয় এখানে। সবমিলিয়ে পরীক্ষানিরীক্ষার সংখ্যা আগের তুলনায় অন্তত দ্বিগুণ হয়েছে।

অবশ্য, হাসপাতালের প্যাথলজিতে রোগীদের চাপ বৃদ্ধির বিষয়টি ইতিবাচক বলেই মনে করেন চমেক হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম আহসান। তিনি বলেন, হাসপাতালের প্যাথলজি বিভাগ যে কোনও ভাবে আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে বলেই এখানে পরীক্ষানিরীক্ষার জন্য রোগীদের ভিড় বাড়ছে। এটি খুবই ইতিবাচক দিক। এ ধারা অব্যাহত রাখতে সেবা প্রার্থীদের নির্বিঘ্নে সেবাদানে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানান তিনি।

এখন সন্ধ্যা পর্যন্ত টেস্ট সুবিধা : এতদিন আউটডোরের (বহিঃবিভাগের) রোগীরা সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত টিকিট কেটে হাসপাতালের প্যাথলজি বিভাগে টেস্ট করার সুযোগ পেতেন। যদিও ইনডোরের (আন্তঃবিভাগের) রোগীদের টেস্ট করা হতো সন্ধ্যা পর্যন্ত।

 

তবে সমপ্রতি আউটডোরের রোগীদেরও পরীক্ষানিরীক্ষার (টেস্ট) সময়সীমা বাড়াতে নির্দেশনা দেন হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শামীম আহসান। এর প্রেক্ষিতে আউটডোরের রোগীরাও এখন সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত টেস্ট করার সুযোগ পাচ্ছেন হাসপাতালের প্যাথলজি বিভাগে।

এ তথ্য নিশ্চিত করে প্যাথলজি বিভাগের ইনচার্জ শুভাশীষ বড়ুয়া বলেন, কোনও রোগী আউটডোরে টিকিট কেটে ডাক্তার দেখিয়েছেন। ডাক্তার পরীক্ষানিরীক্ষা দিয়ে থাকলে ওই রোগী এখন সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত আমাদের প্যাথলজি বিভাগে টেস্ট করাতে পারছেন।

হাসপাতাল পরিচালক মহোদয়ের নির্দেশনায় মধ্য সেপ্টেম্বর থেকে এ নিয়ম চালু করা হয়েছে বলেও জানান শুভাশীষ বড়ুয়া।

জনবল : প্যাথলজি বিভাগে চিকিৎসক আছেন ৭ জন। আর পরীক্ষানিরীক্ষায় মূল জনবল হিসেবে পরিচিত মেডিকেল টেকনোলজিস্ট রয়েছেন ১৪ জন। এর মধ্যে ৭ জন সরকারি পর্যায়ের। আর বাকি ৭ জন আউটসোর্সিংয়ে নিয়োগ পাওয়া।

সম্প্রতি আরো কয়েকজন লোকবল বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু রোগীর চাপ ও শিফট বৃদ্ধিতে বিদ্যমান জনবল এখনো অপ্রতুল। অন্তত আরো কয়েকজন মেডিকেল টেকনোলজিস্ট পেলে তুলনামূলক আরো সন্তোষজনক সেবা দেয়া সম্ভব হত বলে প্যাথলজি বিভাগ সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ২৭ দিন পর তুমব্রু সীমান্তে ফের গোলাগুলি
পরবর্তী নিবন্ধআধিপত্য নিয়ে দেবপাহাড়ে দুই পক্ষের মারামারি