ছাড়পত্র পেতে বিলম্বে বিদেশি জাহাজে পণ্য পরিবহনে সংকট

দেশীয় জাহাজ সুরক্ষা আইনের কড়াকড়িতে এই পরিস্থিতি

আজাদী প্রতিবেদন | শুক্রবার , ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ at ৬:১২ পূর্বাহ্ণ

আন্তর্জাতিক শিপিং সেক্টরে বাংলাদেশের পণ্য পরিবহনে বড় সংকট দেখা দিয়েছে। বাংলাদেশের পতাকাবাহী জাহাজের ফ্ল্যাগ ভেসেল প্রোটেকশন অ্যাক্ট২০১৯ নিয়ে ঘনীভূত হচ্ছে এই সংকট। বিদ্যমান আইন কঠোরভাবে কার্যকর করতে গিয়ে চট্টগ্রাম এবং মংলা বন্দরমুখী পণ্য পরিবহন করতে গিয়ে বিদেশি জাহাজগুলোকে দীর্ঘ বিলম্বের শিকার হতে হচ্ছে। শীঘ্রই এ পরিস্থিতির সুরাহা না হলে শিপিং বাণিজ্যে বাংলাদেশের সংকট তীব্র হবে বলে অভিমত সংশ্লিষ্টদের।

সূত্র জানিয়েছে, দেশের প্রচলিত আইনে দেশীয় পতাকাবাহী জাহাজগুলোকে সুরক্ষা দেয়ার জন্য বিদেশি জাহাজগুলোকে বাংলাদেশি পণ্য পরিবহন করতে বেশ কিছু নিয়ম কানুনের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। বন্দরে বাংলাদেশি জাহাজ উপস্থিত বা আসার সিডিউল থাকলে ওই পণ্য আর বিদেশি কোনো জাহাজ লোড করতে পারে না। সংশ্লিষ্ট জাহাজকে দেশীয় পতাকাবাহী জাহাজ নেই মর্মে একটি ছাড়পত্র নিয়েই কেবল পণ্য বোঝাই করতে হয়। মার্কেন্টাইল মেরিন ডিপার্টমেন্টের প্রিন্সিপ্যাল অফিসার (পিওএমএমডি) এই ছাড়পত্র ইস্যু করেন।

সাম্প্রতিক সময়ে এই ছাড়পত্র নিয়ে খুবই সমস্যা হচ্ছে বলে উল্লেখ করে বিদেশি জাহাজগুলোর স্থানীয় এজেন্টদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, ছাড়পত্র নিয়ে চরম সমস্যা হচ্ছে। আগে তিনদিনের মধ্যে ছাড়পত্র পাওয়া যেত। এখন সাতআট দিনও ছাড়পত্রের জন্য অপেক্ষা করতে হচ্ছে। আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে একমুখী ছাড়পত্র দেয়া হচ্ছে। সিংগাপুর থেকে পণ্য বোঝাইয়ের ছাড়পত্র দেয়া হলেও ফিরতি পথের জন্য চট্টগ্রাম থেকে পণ্য বোঝাইয়ের ছাড়পত্র দেয়া হচ্ছে না। এতে করে কোনো জাহাজ সিংগাপুর থেকে কন্টেনার নিয়ে আসার অনুমোদন পেলেও ফিরতি পথে কন্টেনার বোঝাই করার অনুমোদন পাচ্ছে না। জাহাজটি যদি পণ্য খালাস করে খালি যেতে হয় তাহলে তাকে ডাবল ভাড়া আদায় করতে হবে। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে একটি সংকট তৈরি হচ্ছে বলে উল্লেখ করেছেন বাংলাদেশ শিপিং এজেন্টস এসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ মোহাম্মদ আরিফ। তিনি বলেন, দেশীয় জাহাজ সুরক্ষা আমরাও চাই। যদি আমাদের সব পণ্যই আমাদের জাহাজ পরিবহন করতে পারে তাহলে আমাদের ডলার রক্ষা পাবে। সব ডলার দেশে থাকবে। কিন্তু পুরো ট্রেডকে ক্ষতিগ্রস্ত করে তো কিছু করা ভালো হবে না।

প্রসঙ্গক্রমে তিনি বলেন, আমাদের দেশে যে পরিমাণ কন্টেনার পরিবাহিত হয় তা ৯০টি ফিডার জাহাজ পরিবহন করে। আমাদের দেশীয় পতাকাবাহী নিজস্ব ফিডার ভ্যাসেল আছে মাত্র ৮টি। এই ৮টি জাহাজ দিয়ে ৯০টি জাহাজের কার্গো কেরি করা অসম্ভব। কিন্তু বর্তমানে যে অবস্থা চলছে তাতে যদি বিদেশি ফিডারগুলো এখান থেকে সরে যেতে শুরু করলে আমাদের পুরো ট্রেডই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বর্তমানে জাহাজের ছাড়পত্র নিয়ে সংকট চলছে। তিনি এই সংকটের ব্যাপারে পিওএমএমডি এবং মিনিস্ট্রিতে কথা বলবেন বলেও জানান। গতকাল বিকেল তিনটা থেকে বিকেল সাড়ে পাঁচটা চট্টগ্রামের বিদেশি জাহাজের স্থানীয় এজেন্টদের নিয়ে বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে বলেও সৈয়দ মোহাম্মদ আরিফ জানান।

মার্কেন্টাইল মেরিন ডিপার্টমেন্টের সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, দেশীয় জাহাজের স্বার্থেই জাহাজের সুরক্ষা আইন করা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে আমরা খুবই সতর্ক থাকি। দ্রুত যাতে ছাড়পত্র ইস্যু হয় তা নিশ্চিত করার ব্যবস্থা করা হবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধস্কুল থেকে ফেরার পথে শিশুকে বাসের ধাক্কা
পরবর্তী নিবন্ধকক্সবাজারে কথিত গণধর্ষণ মামলার বাদী গ্রেফতার