ধ্বংসস্তূপে ১২৮ ঘণ্টা, উদ্ধারের পর খাবার খেয়েই হেসে উঠল শিশু

তুরস্ক ও সিরিয়ায় মৃত্যু ছাড়িয়েছে ৩৪ হাজার

আজাদী ডেস্ক | মঙ্গলবার , ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ at ৫:১৬ পূর্বাহ্ণ

তুরস্ক ও সিরিয়ায় ভয়াবহ ভূমিকম্পে হাজার হাজার নিহতের ঘটনার এক সপ্তাহ পেরিয়ে গেছে। কিন্তু এতো হতাশার মাঝেও এসেছে ‘অলৌকিকভাবে’ জীবিত উদ্ধারের নানা গল্প।

তুরস্কের হাতায় বিধ্বংসী ভূমিকম্পে হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়া বাড়িঘরের নিচে আটকে ছিল দু মাস বয়সী এক শিশু। ১২৮ ঘণ্টার চেষ্টায় সেই শিশুকে উদ্ধার করে আবেগবিহ্বল উদ্ধারকারীরা। নিজেরাই হাততালি দিয়ে ওঠেন তারা। হাতমুখে ধুলো মাখা সেই শিশুর ছবি ভাইরাল ইন্টারনেটে। শিশুটিকে খাওয়ানোর পর হেসে উঠল সে। ওই ছবিও ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক মাধ্যমে। প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে, সুস্থ আছে শিশুটি।

গত সোমবার সকালে তীব্র ভূমিকম্পে কেঁপে ওঠে তুরস্ক এবং সিরিয়া। তারপরও ১০০ বারের বেশি জোরালো আফটারশকে কেঁপেছে দুদেশের মাটি। ভূমিকম্পে সিরিয়া এবং তুরস্কে মৃতের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ৩৪ হাজার। ৩৪ হাজার ১৭৯, এই সংখ্যা বাড়বে বই কমবে না। এখনও উদ্ধারকাজ চলছে। তীব্র ঠান্ডার মধ্যে একের পর এক ধ্বংসস্তূপ থেকে তোলা হচ্ছে মৃতদেহ। তার মধ্যে কিছু ‘মিরাকল’ও হচ্ছে। সেখানে উদ্ধার হচ্ছে ২ বছরের শিশুকন্যা, অন্তঃসত্ত্বা মহিলাও।

নবজাতককে নিয়ে জীবন্ত কবরের ভেতরে ভয়ঙ্কর অপেক্ষা : ২৭ জানুয়ারি নেকলা কামুজ যখন তার দ্বিতীয় পুত্রের জন্ম দেন, তখন তিনি তার নাম রাখেন ইয়াগিজ, যার অর্থ সাহসী। ঠিক ১০ দিন পরে দক্ষিণ তুরস্কের হাতায় প্রদেশে নিজ বাড়ির ভেতরে খাওয়াচ্ছিলেন ছেলেকে। এর কিছুক্ষণ পর তারা ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে যান। তেত্রিশ বছর বয়সী এই নারী নিজেকে তার বাচ্চা বুকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে থাকা অবস্থায় আবিষ্কার করেন। তার পাশে পড়ে থাকা ওয়ারড্রবটির কারণে কংক্রিটের একটি বড় স্ল্যাবে পিষ্ট হতে হতে তারা বেঁচে যান। প্রায় চারদিন তারা দুজন এই অবস্থায় ছিলেন। ধ্বংসস্তূপের নিচে অন্ধকারে নেকলা সময়ের জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। তিনি ভাবতে পারেননি যে তিনি ধংসস্তূপ থেকে বেরিয়ে আসতে পারবেন। কিন্তু ইয়াগিজের উপস্থিতি তাকে আশাবাদী থাকার শক্তি দেয়। তিনি বেশিরভাগ সময় ঘুমাতেন, এবং যখন তিনি কাঁদতে কাঁদতে জেগে উঠতেন, তখন তিনি স্থির না হওয়া পর্যন্ত নীরবে তাকে খাওয়াতেন। মাটির নিচে ৯০ ঘণ্টারও বেশি সময় পরে উদ্ধারকারীরা খুব সাবধানে তার সন্ধানে ধ্বংসস্তূপ খনন করতে শুরু করেন। হঠাৎ তার চোখের ওপর টর্চের আলো জ্বলে উঠলে অন্ধকার কেটে যায়।

রাষ্ট্রপুঞ্জের তথ্য অনুযায়ী, এখন তুরস্ক এবং সিরিয়ার ৮ লাখ ৭০ হাজার মানুষ খাদ্যাভাবে পড়েছেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানাচ্ছে, এই ভূমিকম্পের ফলে অন্তত ২.৬ কোটি মানুষ প্রভাবিত হয়েছেন।

তুরস্কের ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত এলাকাগুলোতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ২৯৬০৫ জন হয়েছে। সিরিয়ায় মৃতের সংখ্যা ৪৫৭৪ জনে দাঁড়িয়েছে বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। শুধু তুরস্কেই ছয় হাজারের ওপর ভবন ধসে পড়েছে। ভূমিকম্পের তাণ্ডব থেকে বেঁচে গিয়েও বহু মানুষ ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকা পড়ে মৃত্যুর প্রহর গুনছে। তবে সময় যত পেরোচ্ছে, ধ্বংসস্তূপের মধ্য থেকে বেশি মানুষকে জীবিত উদ্ধারের আশাও ততই ফিকে হয়ে আসছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবাহারি রঙের ফুলের পসরা
পরবর্তী নিবন্ধ৭৮৬