২৫ বছর পর দূর হলো বাধা

আজাদী প্রতিবেদন | মঙ্গলবার , ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ at ৫:০২ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম বন্দরে অবশেষে ২০ ফুটি কন্টেনারে পণ্য বোঝাইয়ের বাধা দূর হলো। ১৯৯৭ সাল থেকে চট্টগ্রাম বন্দরে ২০ ফুটি কন্টেনারে ২৪ টনের বেশি পণ্য বোঝাই করা সম্ভব হতো না। ২৫ বছর পর এসে সে বাধা দূর হলো। এখন থেকে ২০ ফুটি কন্টেনারেও ৪০ ফুটি কন্টেনারের মতো ৩০ টনের বেশি পণ্য বোঝাই করা সম্ভব হবে। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের এই সিদ্ধান্ত আমদানিরপ্তানি বাণিজ্যে পণ্য পরিবহন খাতে কোটি কোটি টাকা সাশ্রয় করবে বলে আশা সংশ্লিষ্টদের।

সূত্র জানিয়েছে, বিশ্বের শিপিং সেক্টরে কন্টেনারে পণ্য পরিববহন দিনে দিনে ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশ্বের আমদানিরপ্তানি বাণিজ্যে এখন কন্টেনার ছাড়া পণ্য পরিবহনের কথা চিন্তাও করা যায় না। সাধারণ মানের পণ্যও কন্টেনারে বহন করা হয়। তিন ধরনের কন্টেনারে বোঝাই করে পণ্য বহন করা হয়। ২০ ফুটি কন্টেনার, ৪০ ফুটি কন্টেনার এবং ৪৫ ফুটি কন্টেনার। ৪৫ ফুটি কন্টেনার স্পেশাল। শুধুমাত্র রপ্তানির ক্ষেত্রে এসব কন্টেনার ব্যবহার হয়। আমদানি পণ্য সচরাচর ২০ ফুট ও ৪০ ফুটের কন্টেনারে পরিবাহিত হয়।

১৯৯৭ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি জারি করা এক সার্কুলারে চট্টগ্রাম বন্দরে ২০ ফুটি কন্টেনারে সর্বোচ্চ ২৪ হাজার কেজি বা ২৪ টন এবং ৪০ ফুটি কন্টেনারে সর্বোচ্চ ৩০ হাজার ৪৮০ বা ৩০ টন ৪৮০ কেজি পণ্য পরিবহনের অনুমোদন দেয়া হয়। এর বেশি হলে ওই পণ্য নতুন কন্টেনারে বোঝাই করতে হয়। দেশে বেশিরভাগ পণ্য আসে ২০ ফুটি কন্টেনারে। কিন্তু ওজন সংকটের কারণে এই কন্টেনারে পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে আমদানিকারকদের সমস্যায় পড়তে হতো। অনেক সময় আমদানি পণ্যের পরিবহন ৩০ টন হলে ২৪ টন এক কন্টেনারে বোঝাই করার পর বাকি ৬ টনের জন্য আরেকটি কন্টেনার নিতে হতো। অথবা ৪০ ফুটি কন্টেনার বোঝাই করতে হতো। বিশেষ ধরনের কিছু পণ্য নিয়ে আমদানিকারকেরা বেকায়দায় পড়তেন। কন্টেনারের ওজন বাধার কারণে ২৪ টনের বেশি স্ক্র্যাপ বোঝাই করা সম্ভব হতো না। ফলে স্ক্র্যাপসহ বিভিন্ন পণ্য আমদানি খরচ বৃদ্ধি পেত। বিষয়টি নিয়ে আমদানিকারকদের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময় বন্দর কর্তৃপক্ষের নিকট আবেদন করা হয়। কন্টেনারে বাড়তি পণ্য বোঝাইয়ের সুুযোগ করা গেলে বাজারে ইতিবাচক প্রভাব পড়ার বিষয়টিও বন্দর কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়। অবশেষে বিভিন্নভাবে পরীক্ষা নিরীক্ষার পর চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ ২৫ বছর পর নতুন সার্কুলার জারি করে। গত ৯ ফেব্রুয়ারি জারি করা সার্কুলারে ২০ ফুটি কন্টেনারেও ৪০ ফুটি কন্টেনারের মতো ৩০ টন ৪৮০ কেজি পণ্য বোঝাইয়ের অনুমোদন দেয়া হয়। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের এই সিদ্ধান্ত আমদানিকারকদের উচ্ছ্বসিত করে।

গতকাল একাধিক আমদানিকারক আজাদীকে জানান, শুধু শুধু বাড়তি খরচ করতে হতো। ২০ ফুটি কন্টেনারে ৩০ টনের বেশি পণ্য নেয়ার সুযোগ থাকলেও আমরা নিতে পারতাম ২৪ টন। কোনো ধরনের খরচ ছাড়া বাকি ৬ টন পণ্য আনার সুযোগ থাকলেও বন্দর কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তের কারণে তা আনা সম্ভব হতো না। চট্টগ্রাম বন্দরে আমদানিকৃত ১০ কোটি টনের বেশি পণ্যের ক্ষেত্রে এই ধরনের হাজার হাজার বাড়তি কন্টেনার অহেতুক ভাড়া করতে হয়েছে, যা দেশের সার্বিক আমদানি বাণিজ্যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলত। বন্দর কর্তৃপক্ষের এই সিদ্ধান্তের ফলে এখন থেকে অনেক কম কন্টেনার ভাড়া করে বেশি পণ্য পরিবহন করা যাবে, যা আমদানি বাণিজ্যে পণ্য পরিবহন খরচ কমাবে। বিষয়টি দেশের ভোক্তা পর্যায়ে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের পদস্থ একজন কর্মকর্তা বলেন, ব্যবসায়ীদের সুবিধার কথা চিন্তা করে বন্দর কর্তৃপক্ষ এখন থেকে ২০ ফুটি কন্টেনারে ৩০ টন ৪৮০ কেজি পণ্য বোঝাই এবং পরিবহন করা যাবে। এটা দেশের বৈদেশিক বাণিজ্যে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধদিন দিন তীব্রতর হতে থাকে রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন
পরবর্তী নিবন্ধবসন্তের রং, বইয়ের সঙ্গে প্রেম