অসম প্রতিযোগিতার মুখে চট্টগ্রামের সবজি রপ্তানিখাত

আজাদী প্রতিবেদন | রবিবার , ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ at ৬:২৬ পূর্বাহ্ণ

অসম প্রতিযোগিতায় হিমশিম খাচ্ছে চট্টগ্রামের সবজি রপ্তানিখাত। মাত্র বছর কয়েক আগেও লাখ লাখ ডলারের সবজি রপ্তানি হলেও বর্তমানে তা অনেক কমে গেছে। ভারত, ভিয়েতনাম, পাকিস্তান এবং ব্যাংককের সাথে প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে দিশেহারা চট্টগ্রামের সবজি রপ্তানিকারকেরা। ইতোমধ্যে সিংহভাগ রপ্তানিকারকই ব্যবসা থেকে ছিটকে পড়েছেন। কয়েকজন কোনোরকমে টিকে থাকলেও সম্ভাবনাময় খাতটি নিয়ে উদ্বিগ্ন সংশ্লিষ্টরা।

সূত্র জানিয়েছে, চট্টগ্রাম থেকে বিভিন্ন ধরণের সবজি রপ্তানি হয় মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের নানা দেশে। মধ্যপ্রাচ্যের সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমীরাত, বাহরাইন, কাতার, ওমান, কুয়েত, ইউরোপের যুক্তরাজ্য, ইতালি ও ফ্রান্স, জার্মানি, সুইডেনসহ নানা দেশে সবজি রপ্তানি হয়। এসব সবজির মধ্যে শিম, বেগুন, টমেটো, পটল, ঝিঙে, শসা, তিতকরলা, লাউ, কুমড়ো, ফুলকপি, বাঁধাকপি, কাঁকরোল, বরবটি, কচুর লতি, কচু, লেবু, জলপাই, সাতকরা, লাউসহ নানা ধরণের সবজি রয়েছে। প্রবাসী বাংলাদেশীরা নিজেদের দেশের শিম বেগুন আলু মুলা থেকে শুরু করে প্রায় ৫৫ ধরণের সবজির জন্য উন্মুখ হয়ে থাকেন। ঢাকার পাশাপাশি চট্টগ্রাম থেকেও প্রচুর সবজি রপ্তানি হতো। চট্টগ্রামের ১১০ জনের মতো রপ্তানিকারক দৈনিক প্রায় ২৫ টন করে সবজি রপ্তানি করতেন। প্রতি কেজি সবজির বিপরীতে গড়ে দুই ডলার করে আসলেও প্রতিদিন দেশে আসতো ৫০ হাজার ডলার। বছর শেষে যা অনেক বড় অংকের বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের উৎস হয়ে উঠতো।

কিন্তু নানামুখি সংকটে মধ্যপ্রাচ্যের বাজার হারাতে শুরু করে বাংলাদেশ। বিশেষ করে সবজির দাম বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি বিমানভাড়া বৃদ্ধি এক্ষেত্রে বড় ধরণের সংকট তৈরি করে। দিনে দিনে ব্যবসা হারায় চট্টগ্রামের রপ্তানিকারকেরা।

চট্টগ্রামের কাঁচা সবজি রপ্তানিকারক সমিতির সভাপতি মাহবুব রানা দৈনিক আজাদীকে বলেন, এক সময় চট্টগ্রাম থেকে ১১০ জনের মতো ব্যবসায়ী সবজি রপ্তানি করতেন। চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় উৎপাদিত নানা সবজি আমরা মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের নানা দেশে পাঠাতাম। দুবাইকে ট্রানজিট করে ইউরোপ আমেরিকাসহ নানা অঞ্চলে যেতো বাংলাদেশের সবজি। কিন্তু দিনে দিনে অবস্থার অবনতি ঘটেছে। আমরা ব্যবসা হারিয়ে ফেলেছি। বিশেষ করে দেশে সবজির দাম বেড়ে যাওয়া এবং বিমানভাড়া বেড়ে যাওয়ায় সবজি রপ্তানি থেকে ছিটকে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা। বাংলাদেশের সবজির চেয়ে বহু কম দামে ভারত, পাকিস্তান, ব্যাংক এবং ভিয়েতনামের সবজি পাওয়া যায়। প্রবাসী বাংলাদেশীরা শুধূমাত্র দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে চড়াদামে দেশীয় সবজি কিনে নেন। কিন্তু খরচ না পোষানোর কারণে ব্যবসায়ীদের পক্ষে সবজি রপ্তানি অব্যাহত রাখা সম্ভব হয়ে উঠেনি। বর্তমানে জনা দশেক রপ্তানিকারক কোন রকমে টিকে আছেন বলে উল্লেখ করে মাহবুব রানা বলেন, আমরা প্রতিদিন গড়ে ১০ টনের মতো সবজি পাঠাই। প্রতি কেজিতে ২ ডলার করে আসলেও প্রতিদিন আমরা অন্তত ২০ হাজার ডলারের বৈদেশিক মুদ্রা দেশে আনছি। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা এবং কিছু সমস্যার সমাধান করলে সবজি রপ্তানি খাত আবারো চাঙ্গা হয়ে উঠবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করে মাহবুব রানা বলেন, বিশ্বের নানা দেশে থাকা এক কোটিরও বেশি বাঙালি দেশীয় সবজির জন্য উন্মুখ হয়ে থাকেন। তাদের এই ভালোবাসাটাকে কাজে লাগানো গেলে সবজি রপ্তানিখাত দেশের বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের একটি অন্যতম মাধ্যম হয়ে উঠতে পারে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকর্ণফুলী মহিলা আ. লীগ নেত্রী বানাজা নিশি বহিষ্কার
পরবর্তী নিবন্ধবিএনপির পদযাত্রার উদ্দেশ্য অগ্নি সন্ত্রাস ও নৈরাজ্য সৃষ্টি