গ্রহণযোগ্য বই মানুষ অবশ্যই পড়বে

বইমেলায় প্রেস ক্লাবের স্টল উদ্বোধন

আজাদী প্রতিবেদন | শুক্রবার , ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ at ১০:০৮ পূর্বাহ্ণ

একুশে পদকপ্রাপ্ত দৈনিক আজাদী সম্পাদক এম এ মালেক বলেছেন, প্রত্যেক সাংবাদিকই কিছু না কিছু লিখেন, প্রত্যেক দিনই লিখেন। সাংবাদিকরা যেসব রিপোর্ট লিখেন, সেগুলো পত্রিকায় ছাপা হয় এবং পরবর্তীতে এক সময় কাগজের টোঙা হয়ে বাজারে চলে যায়।

পত্রিকার লেখার স্থায়ীত্ব কিন্তু খুব কম। কিন্তু বইয়ের লেখা চিরজীবন থেকে যায়। যতদিন বই থাকবে, বইয়ের পাঠকও থাকবে। গ্রহণযোগ্য বই হলে মানুষ অবশ্যই পড়বে। তাই বই হচ্ছে চিরজীবনের বন্ধু।

গতকাল রাত ৮টার দিকে নগরীর এম এ আজিজ স্টেডিয়াম সংলগ্ন জিমনেশিয়াম মাঠে আয়োজিত অমর একুশের বইমেলায় চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের স্টলের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উদ্বোধকের বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

দৈনিক আজাদী সম্পাদক বলেন, একুশ আমার অহংকার। একুশে মানে মাথা নত না করা। আপনারা জানেন, একুশের সঙ্গে আমাদের পরিবার এবং আমাদের প্রেস ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিল। কারণ একুশের প্রথম কবিতা কবি মাহবুব উল আলম চৌধুরীর লেখা ‘কাঁদতে আসিনি, ফাঁসির দাবি নিয়ে এসেছি’, সেই কবিতাটি আমাদের প্রেস থেকে ছাপা হয়েছিল এবং সেই কবিতা লালদীঘির মাঠে বিলি করা হয়েছিল।

এই কবিতাটি ছাপানোর জন্য আমাদের প্রেসের ম্যানেজার দবির উদ্দিন সাহেবকে জেলে যেতে হয়েছিল। কারণ কবিতাটি ছাপানো রাষ্ট্রদ্রোহিতার সামিল ছিল। অনেক ঝুঁকি নিয়ে কাজটা করতে হয়েছে। কিন্তু সুখের কিংবা দুঃখের বিষয়, সেই কবিতার প্রিন্টার্স লাইনে কোহিনুর ইলেকট্রিক প্রেস লেখা ছিল। সুতরাং এখানে কাউকে সাক্ষী দিতে হয়নি। যখন মামলা হলো, তখন আমাদের ম্যানেজার দবিরকে জেলে নিয়ে গেল পুলিশ।

তবে ম্যানেজার সাহেব সেই সময় আমার বাবাকে বাঁচিয়ে দিয়েছিলেন। বলেছিলেন, প্রেসের মালিক এ ব্যাপারে কিছু জানতেন না। সব দোষ আমার। ছয় মাস জেল খাটার যুক্তফ্রন্ট সরকার ক্ষমতায় এলে উনাকে জেল থেকে ছেড়ে দেয়া হয়। বলা যায়, সেই থেকে একুশের সঙ্গে আমরা ওতপ্রোতভাবে জড়িত। একুশে পদক পাওয়াতে আমার একটা লাভ হয়েছে, আমার মৃত্যুর পরে আমার দেশের লালসবুজের পতাকা আমার কফিনের ওপর স্থান পাবে।

আপনারা দোয়া করবেন আমি যেন এই পতাকার মর্যাদা রেখেই শেষ যাত্রা করতে পারি। অনুষ্ঠানে একুশে পদকপ্রাপ্ত কবি ও সাংবাদিক আবুল মোমেন বলেন, সাংবাদিকরা লেখালেখির কাজে সব সময় যুক্ত থাকেন, এটি সবাই জানে। বলা হয়ে থাকে, সাংবাদিকতা হলো দ্রুততার সাথে রচিত সাহিত্য। সব সময় কিছু না কিছু লিখতে হয়। সাংবাদিকদের বই প্রকাশের ঘটনা নতুন কিছু নয়। এখন অনেক সৃজনশীল বই প্রকাশিত হচ্ছে। গল্প, কবিতা ও উপন্যাস।

তবে বই শুধু প্রকাশিত হলে হবে না; বই পড়তে হবে, বই কিনতে হবে। না হলে আমরা যারা বই লিখি তারা কেবল লেখকই থেকে যাবো। লেখক হিসেবেও আলোচনা সমালোচনা শোনা দরকার।

দৈনিক প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক ও বাংলা একাডেমি পুরস্কারপ্রাপ্ত কথাসাহিত্যিক বিশ্বজিৎ চৌধুরী বলেন, এক সময় বিক্ষিপ্তভাবে বইমেলা হতো। কেউ মুসলিম হলে, আবার ডিসি হিলে বইমেলা আয়োজন করতো। মানুষ আসলে সন্দেহে পড়ে যেতো, কোনটি আসল বইমেলা।

গত চার বছর ধরে সিটি কর্পোরেশনের ব্যবস্থাপনায় এই জিমনেশিয়াম মাঠে আয়োজিত হচ্ছে বইমেলা। মানুষ এখন জানে চট্টগ্রামের বইমেলা কোথায় হয়, এটি খুব দরকার ছিল। আর চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব সদস্যদের বই নিয়ে যে স্টল দিয়েছে এটি নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবিদার।

দৈনিক আজাদীর সহযোগী সম্পাদক ও বাংলা একাডেমি পুরস্কারপ্রাপ্ত শিশু সাহিত্যিক রাশেদ রউফ বলেন, বইমেলায় চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের স্টল আছে, সাংবাদিকদের বই এখানে স্থান পেয়েছে, এটি অত্যন্ত আনন্দের। আমি যখন প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ছিলাম তখন বই উৎসব চালু করেছিলাম। আমি আশা করবো, চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের এই উদ্যোগ ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে।

অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সভাপতি সালাউদ্দিন মো. রেজা বলেন, চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব ব্যবস্থাপনা কমিটি ইতোমধ্যে নানা পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। এসব পরিকল্পনা বাস্তবায়নে নেয়া হয়েছে নানা উদ্যোগ। তারই ধারাবাহিকতায় অমর একুশে বইমেলায় স্টল উদ্বোধন। এ উদ্যোগ আগামীতেও অব্যাহত থাকবে।

চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক দেবদুলাল ভৌমিকের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন অমর একুশে বই মেলার আহ্বায়ক ও চট্টগ্রাম সিটি র্কপোরেশনের ওয়ার্ড কাউন্সিলর ড. নিছার উদ্দিন আহমেদ মঞ্জু, দৈনিক বীর চট্টগ্রাম মঞ্চের সম্পাদক সৈয়দ ওমর ফারুক, দৈনিক প্রথম আলোর বার্তা সম্পাদক ওমর কায়সার, চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি তপন চক্রবর্তী ও সাধারণ সম্পাদক ম. শামসুল ইসলাম এবং চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের গ্রন্থাগার সম্পাদক কুতুব উদ্দিন।

অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সিনিয়র সহসভাপতি চৌধুরী ফরিদ, সহসভাপতি মনজুর কাদের মনজু, অর্থ সম্পাদক রাশেদ মাহমুদ, ক্রীড়া সম্পাদক এম. সরওয়ারুল আলম সোহেল, সমাজসেবা ও আপ্যায়ন সম্পাদক আল রাহমান, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক খোরশেদুল আলম শামীম, ও কার্যকরী সদস্য জসীম চৌধুরী সবুজ ও মঞ্জুরুল আলম মঞ্জু।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকূটনীতিকদের কাছে দেশের অগ্রগতির কথা তুলে ধরলেন তথ্যমন্ত্রী
পরবর্তী নিবন্ধবছরে সাড়ে ৩শ কোটি টাকার ইয়াবা ঢুকছে ২২ রুটে