চারুকলা শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে ছাত্রলীগের বাধা, মারধর

নারীসহ দুই সাংবাদিককে হেনস্তা

চবি প্রতিনিধি | শুক্রবার , ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ at ৭:০৫ পূর্বাহ্ণ

চারুকলাকে মূল ক্যাম্পাসে স্থানান্তরের দাবিতে ১০০তম দিনে গণস্বাক্ষর ও অবস্থান কর্মসূচি পালনরত শিক্ষার্থীদের বাধা দিয়েছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) শাখা ছাত্রলীগের একাংশের নেতাকর্মীরা। এসময় ব্যানারফেস্টুন কেড়ে নিয়ে অনেককে মারধর করে তারা। এছাড়া মারধরের ভিডিও ধারণ করার সময় এক নারীসহ কর্মরত দুইজন সাংবাদিককেও হেনস্তা করা হয়।

 

জানা যায়, বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে অবস্থান নেন চারুকলার শিক্ষার্থীরা। বেলা সাড়ে ১০টায় শাখা ছাত্রলীগের দুই উপগ্রুপ বাংলার মুখ এবং ভিএক্স এর নেতাকর্মীরা আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের বাধা দেন। এসময় তাদের কাছ থেকে ব্যানারফেস্টুন কেড়ে নেওয়া হয়। ছাত্রলীগের বাধার মুখে ছত্রভঙ্গ হয়ে আন্দোলনকারীরা জিরো পয়েন্টে অবস্থান নেন।

পরে তারা আবার প্রক্টর অফিসের সামনে অবস্থান নেন। সেখানে প্রায় ঘণ্টাখানেক অবস্থানের পর লিখিত অভিযোগ ও গণস্বাক্ষরের চিঠি দেন। এসময় মুঠোফোন ভিডিও ধারণ করায় দৈনিক সমকালের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি মারজান আক্তার, আরটিভির ফটো সাংবাদিক এমরাউল কায়েস মিঠু ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের হাতে হেনস্তার শিকার হন।

অভিযুক্তরা হলেন, ভিক্স গ্রুপের অনুসারী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মারুফ ইসলাম, সমাজতত্ত্ব বিভাগের ২০১৫১৬ সেশনের শিক্ষার্থী মারুফ হাসান, বাংলা বিভাগের ২০১৮১৯ সেশনের শিক্ষার্থী তৌহিদুল হক ফাহাদ, একই সেশনের রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের শহীদুর রহমান স্বপনসহ আরও ১০১৫ জন ছাত্রলীগ কর্মী।

আন্দোলনকারী চারুকলার শিক্ষার্থী পায়েল দে বলেন, আমরা অন্যান্য দিনের মতো আজও শান্তিপূর্ণভাবে শহীদ মিনারে অবস্থান নিয়েছিলাম। হঠাৎ ছাত্রলীগের ছেলেরা এসে আমাদের ব্যানারফেস্টুন কেড়ে নেয় এবং আন্দোলন বন্ধের জন্য হুমকি দিয়ে শহীদ মিনার থেকে বের করে দেয়।

চারুকলার আরেক শিক্ষার্থী আফরিনা বিনতে আলম বলেন, আমরা বিগত দিনের মতো শান্তিপূর্ণভাবে আমাদের কর্মসূচি শুরু করলে ছাত্রলীগ এসে বাধা দেয়। তাদের দাবি, আমরা নাকি টাকা খেয়ে আন্দোলন করছি। তাদের (ছাত্রলীগ) অনুমতি ছাড়া আমরা আন্দোলন করতে পারব না।

মারধরে অভিযুক্ত শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সম্পাদক ও ভিএঙ গ্রুপের নেতা মারুফ আহমেদ বলেন, চারুকলার আন্দোলনে আমাদের কিছু ছেলে অংশগ্রহণ করেছিল। আমরা তাদেরকে ফিরিয়ে আনার জন্য ওখানে গিয়েছিলাম। আমাদের ছেলেদের বাইরে আমরা কাউকে বাধা দিইনি। সাংবাদিক হেনস্তার বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা সাংবাদিককে প্রথমে সাধারণ শিক্ষার্থী মনে করেছিলাম। তাই ভিডিও ডিলিট করতে বলি। কিন্তু সাংবাদিক পরিচয় দেওয়ার পর আর কিছুই বলিনি।

এ ব্যাপারে ভিএঙ গ্রুপের নেতা ও শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি প্রদীপ চক্রবর্তী দুর্জয় বলেন, এটা আমাদের গ্রুপের কোনো সিদ্ধান্ত ছিল না। যারা করেছে তাদের ব্যক্তিগত দায় এটা।

ছাত্রলীগের হেনস্তার শিকার সাংবাদিক মারজান আক্তার বলেন, ছাত্রলীগের কর্মীরা যখন আন্দোলনকারীদের বাধা দিচ্ছিল তখন পেশাগত দায়িত্ব হিসেবে এর ফুটেজ নিচ্ছিলাম। এসময় ছাত্রলীগের ভিএঙ গ্রুপের অনুসারীরা এসে আমাকে আটকায় এবং ভিডিও ডিলেট করার জন্য চাপ দিতে থাকে। আমি অস্বীকৃতি জানালে তারা তুইতুকারি করে হুমকি দেয় এবং ব্যাগ ও মুঠোফোন কেড়ে নেয়ার চেষ্টা করে।

এ ব্যাপারে সহকারী প্রক্টর ড. শহীদুল ইসলাম বলেন, সাংবাদিকদের হেনস্তার বিষয়টি আমরা অবগত ছিলাম না। লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আর চারুকলার শিক্ষার্থীদের বিষয়েও আমরা কিছু জানতাম না। সাংবাদিকদের মাধ্যমে জানতে পেরেছি। তারা অভিযোগ দিয়েছে। আমরা বিষয়টি দেখব।

প্রসঙ্গত, চারুকলা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা ২২ দফা দাবিতে গত বছরের ২ নভেম্বর ক্লাস বর্জন করে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন। শুরুতে তাদের আন্দোলন ইনস্টিটিউটের সংস্কারসহ ২২ দফা থাকলেও পরবর্তীতে তা ক্যাম্পাসে স্থানান্তরের একদফা দাবিতে রূপ নেয়।

চবিসাসের নিন্দা : চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে সাংবাদিকদের হেনস্তার ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির (চবিসাস) নেতারা। গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে গণমাধ্যমে পাঠানো সংগঠনটির দপ্তর, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক মোহাম্মদ আজহার স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে এ প্রতিক্রিয়া জানান সমিতির সভাপতি মাহবুব এ রহমান ও সাধারণ সম্পাদক ইমাম ইমু।

এর আগে হেনস্তার বিচার চেয়ে লিখিত অভিযোগ দেয় সংগঠনটি। একইসঙ্গে সাংবাদিকদের স্বাধীনভাবে পেশাগত দায়িত্ব পালনে যাবতীয় প্রতিবন্ধকতা রুখতে ও দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত করতে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রতি জোর দাবি জানায় সংগঠনটি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধরুম থেকে তুলে নিয়ে চমেকের চার শিক্ষার্থীকে নির্যাতন
পরবর্তী নিবন্ধকয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রে হামলা, পুলিশের সাথে সংঘর্ষে ওসিসহ আহত ১৩