দেশের অবকাঠামোগত উন্নয়ন উল্লেখ করার মতোই। এই উন্নয়নের ইতিবাচক প্রভাব গিয়ে পড়েছে দেশের সার্বিক অর্থনীতিতে। ২০১৯ সাল পর্যন্ত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ধারাবাহিকতা বজায় ছিল। কিন্তু কোভিড–১৯ ও ইউক্রেন–রাশিয়া যুদ্ধ কিছুটা সমস্যা সৃষ্টি করলেও বর্তমানে পুনরায় অগ্রগতি শুরু হয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, সেই ষাটের দশক থেকে দেশের মানুষ পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের কথা শুনে এলেও বাংলাদেশ পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের যুগে প্রবেশ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে ২০১০ সালে। পাবনার ঈশ্বরদীতে দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে ব্যয়বহুল এক লাখ ১২ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে দুই হাজার ৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন বিদ্যুৎকেন্দ্রটির উৎপাদনে আসার কথা রয়েছে ২০২৪ সালে। স্বপ্নের পদ্মা সেতুতে দুর্নীতি নিয়ে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে মতপার্থক্যের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন নিজস্ব অর্থায়নে সেতু নির্মাণের ঘোষণা দেন, তখন অনেকেই একে অবাস্তব বলে সমালোচনা করেছিলেন। আর সেটি পরিণত হয়েছে দুর্দান্ত বাস্তবে। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, জার্মানির মতো বাংলাদেশের মানুষও যে মেট্রো রেলে চড়বে–সেই স্বপ্নও পূরণ হলো। নিজস্ব অর্থায়নে নির্মিত স্বপ্নের পদ্মা সেতুসহ ছোট–বড় একশ ব্রিজ ও একশ সড়ক–মহাসড়ক চালুর মধ্য দিয়ে দেশে যোগাযোগ ক্ষেত্রে এক বিপ্লব ঘটেছে। উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় মাত্র কিছু দিন আগে দেশবাসী যুক্ত হয়েছেন মেট্রোরেলের সঙ্গে।
অর্থনীতিবিদরা বলেন, ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নির্বাচনের পর অর্থনীতিতে গতি আনতে মেগা প্রকল্পের পাশাপাশি ভৌত অবকাঠামো উন্নয়নে এসেছে অভূতপূর্ব উন্নতি। তৃতীয় মেয়াদে সরকার গঠনের পর অবকাঠামো উন্নয়নে নেওয়া হয়েছে মহাপরিকল্পনা। কৃষি, শিক্ষা, বিদ্যুৎ, খাদ্য নিরাপত্তাসহ সার্বিক অর্থনীতিতে এখন সরব বিপ্লব। দেশের মানুষের একটি অংশের অর্ধাহার ও অনাহারকে বিদায় জানিয়ে এখন উন্নয়নের বাংলাদেশ। তলাবিহীন ঝুড়ির পরিবর্তে বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল বাংলাদেশ।
পত্রিকান্তরে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এরই মধ্যে বেড়েছে রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয়। যা বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভকে চাপমুক্ত করবে। এছাড়া সম্প্রতি দাতা সংস্থা আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল আইএমএফ বাংলাদেশকে ৪৫০ কোটি মার্কিন ডলার ঋণ অনুমোদন করেছে। অবকাঠামো ও অর্থনীতির অগ্রযাত্রা প্রসঙ্গে অর্থনীতিবিদ কাজী খলীকুজ্জমানের অভিমতও প্রকাশিত হয়েছে পত্রিকায়। তাতে তিনি বলেন, শুধু অবকাঠামো নয়, অর্থনীতিতেও অগ্রগতি হয়েছে। ২০১৯ সাল পর্যন্ত অর্থনীতির অগ্রগতির ধারাবাহিকতা ছিল। করোনা এবং ইউক্রেন–রাশিয়া যুদ্ধ কিছুটা সমস্যা তৈরি করেছে। তবে এখন অগ্রগতি আবারও ফিরে আসছে। তিনি আরও বলেন, অবকাঠামো উন্নয়ন অনেক বেশি হয়েছে। আর এ উন্নয়নের সঙ্গে অর্থনীতিও জড়িত। পদ্মা সেতু চালুর পর এর সুফল অর্থনীতিতে আসছে। তবে এই উন্নয়নকে আরও ত্বরান্বিত করতে হলে কিছু সমস্যা আছে, সেগুলো দূর করতে হবে। যেমন দুর্নীতি, অর্থ পাচার, অপচয় ও ব্যাংকিং খাতের সমস্যা। এ সমস্যাগুলো দূর করতে পারলে মধ্যম আয়ের দেশ, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন এবং উন্নত দেশে পৌঁছানোর মতো ভিশন অর্জন সহজ হবে।
জানা গেছে, এ মাসেই দুয়ার খুলবে চট্টামের কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মাণাধীন বঙ্গবন্ধু টানেলের। ইতোমধ্যে প্রকল্পের ৯৫ শতাংশের বেশি কাজ শেষ হয়েছে। এছাড়া আগামী জুনে মাতারবাড়ীর বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পের কাজ শেষ হচ্ছে। অক্টোবরে চালু হতে যাচ্ছে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনাল।
অর্থনীতি বিশ্লেষকরা বলছেন, দেশকে উন্নতির দ্বারপ্রান্তে নিতে একের পর এক মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করছেন শেখ হাসিনা। অর্থনৈতিক উন্নয়নে যোগাযোগ ও অবকাঠামো উন্নয়নে জোর দিয়েছেন তিনি। তাই ভৌত অবকাঠামো উন্নয়নে নেওয়া হয়েছে মেগা প্রকল্প। এসব প্রকল্পের কাজ শেষ হলে ত্বরান্বিত হবে দেশের অর্থনীতি। কর্মসংস্থানের পাশাপাশি বাড়বে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিও। করোনার কারণে কিছু সময় বন্ধ থাকার পর সরকারের অন্য অগ্রাধিকার পাওয়া প্রকল্পগুলোর কাজও এখন দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব না হলে ২০২৪ সালের মধ্যেই উন্নয়নশীল দেশের কাতারে পৌঁছে যেত বাংলাদেশ। মহামারির কারণে নানা ধরনের অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ দেখা দেয়ায় সময় দুই বছর পিছিয়ে যায়। উন্নয়নশীল দেশ হলে অনেক সুযোগসুবিধা পাওয়া যাবে। পাশাপাশি অনেক চ্যালেঞ্জও আছে। এলডিসি থেকে উত্তরণের পর বাণিজ্যে শুল্ক সুবিধাসহ বিভিন্ন ধরনের চ্যালেঞ্জে পড়তে হবে। এ জন্য ২০২৬ সালের আগে কিছু প্রস্তুতি নেয়া দরকার। বিশেষ করে অবকাঠামোগত উন্নয়ন লাগবে, যাতে করোনার আগে উন্নয়নের যে ধারাবাহিকতা ছিল, সেটাকে এগিয়ে নেয়া যায়। তাহলে রপ্তানি খাতে প্রতিযোগিতা বাড়বে। দক্ষ জনশক্তি লাগবে। কারণ, জনশক্তি দক্ষ হলে উৎপাদনশীলতা বাড়ে। এর ফলে এলডিসি পরবর্তী বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বাড়বে। অবকাঠামো উন্নয়নের সঙ্গে অর্থনীতির সম্পৃক্ততা আছে। একই সময়ে ৫ বছর অন্তর বেড়েছে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি। তবে উন্নয়নের সঙ্গে দারিদ্র্য হার কমেছে এবং একই সময়ে বেড়েছে বৈষম্য। সমাজের একশ্রেণির লোকের কাছে প্রচুর সম্পদ গেছে। এই বৈষম্য কমিয়ে আনাই এখন চ্যালেঞ্জ হবে।