দীর্ঘ ৫০ বছর পর জোয়ারের পানির স্রোতের অপেক্ষায় পটিয়ার গরুলুটা খাল। একসময় এই খাল স্থানীয় মানুষের যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম হলেও অযত্ন, অবহেলায় কালের বিবর্তনে ভরাট হয়ে যায়। খালটি নতুন করে খনন শুরু হওয়ায় স্থানীয়দের মধ্যে ব্যাপক আশার সঞ্চার হয়েছে। এতে অনেক অনাবাদী জমি চাষাবাদের আওতায় আসার পাশাপাশি মাছ চাষসহ বর্ষা মৌসুমে বন্যার কবল থেকে বাড়ি ঘর ও কৃষি জমি রক্ষা হবে বলে আশা স্থানীয়দের।
স্থানীয়রা জানান, একসময় এ খাল দিয়ে বিভিন্ন এলাকা থেকে গরু লুট করে নিয়ে যেত কিছু চক্র। তখন থেকেই স্থানীয়দের কাছে খালটি ‘গরুলুটা খাল’ হিসেবে বেশ পরিচিতি লাভ করে। সম্প্রতি খালটি ভরাট হয়ে যাওয়ায় প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে নিচু এলাকায় বন্যার পানিতে বাড়িঘর ও কৃষকদের ফসল তলিয়ে যাচ্ছিল। এখন খালটি খননের ফলে বহুমুখী সুফল পাবে স্থানীয়রা।
পটিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ বিভাগীয় প্রকৌশলী অপু দেব জানান, গরুলুটা খালটি গত বছরের ডিসেম্বর থেকে খনন কাজ শুরু হয়। প্রায় ৮ কিলোমিটার দীর্ঘ খালটি উপজেলার কুসুমপুরা ও আশিয়া ইউনিয়নে অবস্থিত। খালটি ১০–১২ ফিট গভীর ও ৩৫–৪০ ফিট মুখ করে খনন কর্মযজ্ঞ চলছে। ইতোমধ্যে ৭০–৮০% কাজের অগ্রগতি সম্পন্ন হয়েছে। আগামী মার্চ বা বর্ষার পূর্বেই খনন কাজ সম্পন্ন শেষ হবে। খালটি খনন প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পর যেখানে বাঁধ বা জোয়ার ভাটার প্রতিবন্ধকতা রয়েছে সেগুলো অপসারণ করে পানি চলাচল স্বাভাবিক করা হবে।
জাতীয় সংসদের হুইপ সামশুল হক চৌধুরী এমপি জানান, পটিয়ায় খাল খনন ও বেড়িবাঁধ নির্মাণে বর্তমান আ. লীগ সরকার বিভিন্ন মেগাপ্রকল্প হাতে নিয়েছে। এসব প্রকল্প পুরোপুরি বাস্তবায়ন হওয়ার পর পটিয়ার কৃষকসহ হাজারো মানুষ এর সুফল ভোগ করবে। শত শত একর অনাবাদী জমি চাষাবাদের আওতায় আসবে।
কুসুমপুরা ইউপির প্যানেল চেয়ারম্যান শওকত আকবর জানান, গরুলুটা খালটি দীর্ঘদিনের পুরনো খাল। একসময় এ খালে জোয়ার ভাটা হত। কালক্রমে সেটি সরু হতে হতে জোয়ার ভাটা বাধাগ্রস্ত হয়। ১৯৭৭ সালে খালটি একবার সনাতন পদ্ধতিতে খনন করা হয়েছিল। এর পর খালটি সরু হতে হতে বিভিন্ন জায়গায় ভরাটও হয়ে যায়। বর্তমানে এ খালটি নতুন করে খনন কাজ শুরু করা হয়েছে। আবারও যদি এ খালে জোয়ার ভাটার সৃষ্টি করা যায় তাহলে এলাকার কৃষকদের চাষাবাদে তা অন্যমাত্রা যোগ করবে। বর্ষা মৌসুমে অতিরিক্ত পানি খাল দিয়ে নদীতে চলে যাবে। তাছাড়া এ খালে জোয়ার ভাটার সুফল পেতে হলে বিভিন্ন জায়গায় ব্রিজের নিচে যে মাঠির বাঁধ রয়েছে, সেগুলো অপসারণ করতে হবে। তা না হলে মানুষ এর সুফল পাবে না।
পটিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ কল্পনা রহমান জানান, গরুলুটা খালটি খনন প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পর কৃষি ক্ষেত্রে কৃষকরা এ খালের দারুণ সুফল ভোগ করতে পারবেন। বর্তমানে কুসুমপুরা এলাকায় ৩০ হেক্টর জমি এ খালের পাশে চাষাবাদ হচ্ছে।