ভোগ্যপণ্যের বাজারে পরিবেশবান্ধব পাটের বস্তার ব্যবহার নিশ্চিত করতে পারছে না সরকার। পাটের বস্তায় পণ্য পরিবহনে কেবল দফায় দফায় প্রজ্ঞাপন জারি ও সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে নির্দেশনা দেয়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়েছে। বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আসলে সরকারের সদিচ্ছার অভাবেই প্রজ্ঞাপন জারির সাত বছর পার হলেও এখনো পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর প্লাস্টিকের বস্তায় পণ্য পরিবহন করা হচ্ছে।
চাক্তাইয়ের চালপট্টি ও পাহাড়তলীর চালের আড়তদাররা জানান, বর্তমানে বাজারে প্লাস্টিকের বস্তার ছড়াছড়ি। তবে উত্তরাঞ্চলেও কয়েকটি অঞ্চল থেকে ১০ শতাংশ মতো পাটের বস্তায় চাল আসছে। শুধু ধান চাল নয় দেশের মোট ভোগ্যপণ্যের ৯০ শতাংশই পরিবহন ও মজুদ হচ্ছে প্লাস্টিক বস্তায়। আরেকটি বিষয় হচ্ছে, বর্তমানে একটি পাটের বস্তার দাম পড়ছে প্রায় ৬৫ থেকে ৭০ টাকা, পক্ষান্তরে একটি প্লাস্টিক বস্তার দাম পড়ে ১৫–২০ টাকা। তাই ব্যবসায়ীরাও পাটের পরিবর্তে প্লাস্টিকের বস্তা ব্যবহারে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। খাতুনগঞ্জের কয়েকজন আটা–ময়দা ব্যবসায়ী জানান, পাটের তৈরি বস্তায় আটা–ময়দা পরিবহন করাটা একটু কঠিন। কারণ পাটের বস্তায় আঁশ ও ছিদ্র থাকে। দেখা যায়, আটা ও ময়দার সাথে এসব আঁশ আবার মিশে যায়। অনেক সময় ধুলাবালু বস্তার ছিদ্র দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করে। এতে আটা–ময়দার গুণগত মান নষ্ট হয়। তবে পাটের বস্তা আটা–ময়দার জন্য উপযোগী করে তৈরি হলে এটি ব্যবহারে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। তাই আটা ময়দার ক্ষেত্রে সুবিধা ও অসুবিধার কথা বিবেচনা করে সরকারকে এই বিষয়টি ভেবে দেখা দরকার। জানতে চাইলে চাক্তাই খাতুনগঞ্জ আড়তদার সাধারণ ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মহিউদ্দিন দৈনিক আজাদীকে বলেন, খাতুনগঞ্জে পণ্য যেভাবে আসে ব্যবসায়ীরা সেভাবেই বিক্রি করে। যেখান থেকে প্লাস্টিক বস্তা উৎপাদন কিংবা বাজারজাত হয়, সেখান থেকে বিষয়টি দেখভাল করা জরুরি।
চট্টগ্রাম রাইচ মিলস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক রফিক উল্লাহ বলেন, আসলে প্লাস্টিকের বস্তার খরচ কম, তাই মিলাররা এই বস্তায় মোড়কীকরণ করছেন। তবে বর্তমানে পাটের বস্তাও আসছে। কিন্তু পরিমাণে কম।
উল্লেখ্য, পাটের বহুমুখী ব্যবহার, সম্প্রসারণ এবং পরিবেশ সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে ১৯টি পণ্যের ক্ষেত্রে চটের বস্তার ব্যবহার বাধ্যবাধকতা করে সরকার। সর্বশেষ গত ২০১৮ সালের ১২ আগস্ট পোল্ট্রি ও ফিশ ফিডের মোড়কে পাটের বস্তার ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হয়। এর আগে গত ২০১৫ সালের ১৭ ডিসেম্বর ধান, চাল, গম, ভুট্টা, সার, চিনি সংরক্ষণ ও পরিবহনে বাধ্যতামূলকভাবে পাটের বস্তা ব্যবহারের নির্দেশ দেয় বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়। এছাড়া ২০১৭ সালের ২৪ জানুয়ারি পেঁয়াজ, আদা, রসুন, ডাল, আলু, আটা, ময়দা, মরিচ, হলুদ, ধনিয়া ও তুষ–খুদ–কুঁড়ার মোড়ক হিসেবে পাটের বস্তার ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হয়।