রাজধানী ঢাকাসহ মেট্রোপলিটন শহর গুলোর পাশাপাশি দেশের দুটি পৌরসভাকে ডেল্টা প্ল্যানের আওতায় নতুন আঙ্গিকে নাগরিক সুযোগ–সুবিধা নিশ্চিত করণসহ পরিকল্পিত ভাবে সাজানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পৌরসভার দুটি হলো রাউজান পৌরসভা এবং যশোরের কেশবপুর পৌরসভা। নেদারল্যান্ডের অর্থায়নে রাউজানসহ দেশের এই দুটি পৌরসভাকে নতুন কর্মপরিকল্পনায় সাজানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে নেদারল্যান্ডের অর্থায়নকারী প্রতিষ্ঠান দুই দফা রাউজান পৌরসভা এলাকা পরিদর্শন করে গেছেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে রাউজান পৌরসভা অনেক মর্যাদা সম্পন্ন পৌরসভায় পরিণত হবে এবং আলোকোজ্জ্বল মডেল উপশহরে পরিণত হবে। ডেল্টা প্ল্যানের আওতায় নেদারল্যান্ডের অর্থায়নে এই দুটি পৌরসভায় নতুন কর্ম পরিকল্পনা গ্রহণ করতে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে নেদারল্যান্ডের অর্থায়নকারী সংস্থার প্রতিনিধি এবং রাউজান পৌরসভার মেয়র এবং যশোরের কেশবপুর পৌরসভার মেয়রের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই বৈঠকে স্থানীয় সরকার মন্ত্রী তাজুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন। আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি দাতা সংস্থার সাথে আবারো দুই পৌরসভার মেয়রের বৈঠক আছে বলে জানা গেছে।
নেদারল্যান্ডের অর্থায়নে রাউজান পৌরসভাকে নতুন কর্মপরিকল্পনায় সাজানোর কাজ আগামী তিন চার মাসের মধ্যে শুরু হবে বলে জানান পৌরসভার মেয়র জমির উদ্দিন পারভেজ। নতুন কর্মপরিকল্পনায় রয়েছে–চট্টগ্রাম রাঙ্গামাটি চার লেইন মহাসড়কের কিনারা ঘেঁষে থাকা প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যের লীলাভূমি রাউজান রাবার বাগান এলাকা। পৌরসভার নয় নম্বর ওয়ার্ডের শেষ সীমানায় বিশাল এলাকা জুড়ে গড়ে তোলা হচ্ছে পর্যটকদের দৃষ্টি আকর্ষনীয় নানা স্থাপনা। প্রায় ১০ কোটি টাকার প্রকল্প ব্যয়ে এখানে প্রতিষ্ঠা করা হবে ওপেন থিয়েটার সেন্টার, বাচ্চাদের খেলাধুলার বিশেষ অঞ্চল, বোটিং এর জন্য রাখা হবে চক্রকারে লেক, সৌখিন মাছ শিকারীদের জন্য থাকবে বড় পুকুর, আধুনিক মানের রেস্তোরাঁ, কমিউনিটি সেন্টার, নির্মিত হবে বিল্ডিং কানেক্টিং কাঠের সেতু, বিনোদন স্পটের আসা লোকজনের আসনবিন্যাস এলাকা, বোর্ডিং ঘাট, গার্ড রুম, পার্কিং এলাকা, পাবলিক টয়লেটসহ নানা স্থাপনা। এই প্রকল্প নিয়ে পৌর কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ রাখছেন অর্থ যোগানদাতা দেশের পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের এক কর্মকর্তা। তার কাছ থেকে পাওয়া প্রকল্পের নকশায় এই ধারণা পাওয়া যায়।
এই ব্যাপারে রাউজান পৌরসভার মেয়র জমির উদ্দিন পারভেজ বলেন, দেশের অন্যান্য উপজেলা এবং পৌরসভা থেকে সৌন্দর্য এবং পরিচ্ছন্নতার দিক দিয়ে রাউজান সবার এগিয়ে। এটা সম্ভব হয়েছে চারবারের নির্বাচিত সংসদ সদস্য আধুনিক রাউজানের রূপকার এবিএম ফজলে করিম চৌধুরীর কারণে। তার মেধা ও রাজনৈতিক দূরদর্শিতায় রাউজন আজ সব দিক থেকে এগিয়ে। তাঁরই আন্তরিক প্রচেষ্টায় দেশের মধ্যে রাউজানকে সেরা উপজেলা ও পৌরসভার মর্যদার আসনে বসতে যাচ্ছে। স্থানীয় সাংসদের কর্ম প্রচেষ্টায় রাউজান পৌরসভায় আজ সৌন্দর্য বর্ধনে নেদারল্যান্ডের অর্থায়নে একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন হতে যাচ্ছে। এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে রাউজান পৌরসভা হবে–আরো আধুনিক–দৃষ্টি নন্দন ও মর্যাদাবান।
পৌরসভার প্রকৌশলী ওয়াসিম আকরাম বলেছেন, এই প্রকল্পের অর্থ যোগানদাতা দেশের প্রতিনিধিগণ একাধিবার প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করে সন্তুষ্ট হয়ে সাড়ে ছয় একর জায়গা নিয়ে প্রকল্পের নকশা চূড়ান্ত করেছেন। তারা এটি পৌর কর্তৃপক্ষের হাতে উপস্থাপন করেছে। যেহেতু অর্থদাতা প্রতিষ্ঠান প্রকল্পের টাকা ধাপে ধাপে দেবে, সেহেতু নকশা অনুসরণ করে কাজ শুরু করতে হবে পৌরসভাকে। এখন কাজ শুরুর অপেক্ষা। এই প্রকৌশলীর আশা আগামী এপ্রিলের দিকে তারা কাজে হাত দেবেন। প্রকল্প এলাকার পৌর কাউন্সিলর জসিম উদ্দিন চৌধুরী এ প্রসঙ্গে বলেছেন, তার ওয়ার্ডটি এমনিতে প্রাকৃতি সৌন্দর্য্যে ভরপুর। নেদারল্যান্ডের প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে এই ওয়ার্ডটি আলোকোজ্জ্বল মডেল উপশহরে পরিণত হবে। তিনি বলেন, এই ওয়ার্ডে ইতিমধ্যে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে পিংক সিটি, ট্রমা সেন্টার, বিসিক শিল্পাঞ্চল, বঙ্গমাতা ফজিলাতুনেছা প্রবীণ নিবাস, সায়মা ওয়াজেদ পুতুল অটিজম কেন্দ্রসহ নানা প্রতিষ্ঠান।
উল্লেখ্য ইতোমধ্যে রাউজান পৌরসভার বর্জ্য ব্যবস্থাপনার আধুনিক কৌশল এখন সরকারি ভাবে স্বীকৃত দেশের মডেল পৌরসভার স্বীকৃতি অর্জন করেছে। দেশের অন্যান্য পৌরসভাকে রাউজার পৌরসভার বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কৌশল অনুসরণ করতে সরকারি ভাবে চিঠি দেয়া হয়েছে মন্ত্রণালয় থেকে।