কূট-পরাজীবীদের বিতাড়ন অতীব জরুরি

ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী | শনিবার , ২৮ জানুয়ারি, ২০২৩ at ৮:২২ পূর্বাহ্ণ

জনশ্রুতিমতে, কুৎসিত বুদ্ধিমত্তার অর্বাচীনঅপাংক্তেয়অযৌক্তিক অপপ্রয়োগে বংশপরম্পরায় মদমাদক ব্যবসায়ী, ভূমিজলদস্যুদের উত্তরাধিকারী, প্রতারণাজালিয়াতিছলচাতুরির পারঙ্গম দুশ্চরিত্রের কতিপয় কথিত বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব দেশবাসীকে নানাভাবে বিভ্রান্ত করে চলছে। ছদ্মবেশী বাহ্যিক পোশাক পরিচ্ছদআচারআচরণ, বাচনিক কথাবার্তাসবক দেওয়ায় অভ্যস্ত এসব আপাদমস্তক দুর্নীতিঅশুভকর্মে নিয়োজিত কদর্য চরিত্রের মুখোশ উম্মোচন দেশ রক্ষার জন্য অতিব জরুরি।

 

অসৎঅবৈধঅনৈতিক পন্থায় পদপদায়নপদক দখলে এদের পিছনে রয়েছে শক্তিশালী মাফিয়াসিন্ডিকেটবিভিন্ন দলরাজনৈতিক পটপরিবর্তনে সুবিধাভোগী হিংস্র চক্র। সেনাস্বৈর শাসনামলে আবির্ভূত দেশবিরোধী অর্থলিপ্সু মানবরূপী এসব দানবদের অপকর্ম দেশবাসীর হৃদয়ে যারপরনাই আর্তনাদ তৈরি করছে। লবিংতদবির নির্ভর এসব কথিত ব্যক্তিরা নীতিনৈতিকতার চরম স্খলনে যেকোনো উপায়ে তাদের হীন অভিপ্রায় কার্যকর করতে সিদ্ধহস্ত।

সরকারিবেসরকারি উচ্চশিক্ষা থেকে শুরু করে যেকোন বেসামরিক সংস্থার উর্ধ্বতন পদে অধিষ্ঠিত হতে এদের ঘৃণ্য প্রচেষ্টা স্ব স্ব অঞ্চলপ্রতিষ্ঠানে কুখ্যাতির আবরণে আবদ্ধ। যে কারণে ন্যূনতম সম্মানিত না হয়েও অবাঞ্চিতঅনভিপ্রেতদুষ্ট বলয়ের আশ্রয়প্রশ্রয়ে তাদের পদ বাণিজ্য সর্বত্রই পরিলক্ষিত।

মুক্তির মহানায়ক জাতির জনক বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার একার পক্ষে সরাসরি সবকিছুর তদারকি দুরূহ ব্যাপার বটে। সত্যবস্তুনিষ্ঠ পন্থায় তাঁর গোচরীভূত হওয়াআমলে নেওয়ার বিষয়সমূহের ক্ষেত্রে স্বার্থান্বেষী মহল অদৃশ্য দুর্ভেদ্য প্রাচীর নির্মাণ করে তাঁকে আঁধারে রাখছে কিনা তা নিগূঢ় তদন্তের দাবি রাখে।

তিনি প্রজ্ঞামেধাসততাযোগ্যতানির্ভীকতায় সমৃদ্ধ দৃঢ়চেতাদেশপ্রেমিক সফলসার্থক রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে বিশ্বপরিমন্ডলে অতি উচুমার্গে সুপ্রতিষ্ঠিত। অদম্যঅগ্রগতিতে এগিয়ে নেওয়া উন্নয়ন মানদন্ডে আকাশচুম্বী উচ্চতায় তিনি দেশকে মর্যাদাসীন করার এক বিস্ময়কর অধ্যায় রচনা করেছেন।

এতসব অর্জনের বিপরীতে গুটিকয়েক সন্ত্রাসীজঙ্গিঅন্ধকারের পরাজিত শক্তির দোসরদের দেশবিধ্বংসী অপকৌশল ইতিমধ্যেই দেশ এবং দেশের বাইরে দৃশ্যমান। মহান মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শিক চেতনাকে ভুলুন্ঠিত করে দল ও সরকারে ঘাপটি মেরে অবস্থান নেওয়া চিহ্নিত ব্যক্তিদের বিতাড়ন অনিবার্য হয়ে পড়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন সৎচৌকস সদস্যদের সমন্বয়ে বিচার বিভাগীয় তদন্তের মাধ্যমে দেশের প্রকৃত চিত্র উদ্ঘাটন এবং যথার্থ পদক্ষেপ গ্রহণের লক্ষ্যে ইত্যকার বিষয়গুলো মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নজরে আনা অনিবার্য।

অন্যথায় চক্রান্তষড়যন্ত্রের নিষ্ঠুর বেড়াজাল নির্মাণে উল্লেখ্য পরাজিত অপশক্তির অপকৌশল অবলম্বন দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন অভিযাত্রায় প্রতি পদে পদে নানামুখী অন্তরায়প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টিতে অধিকতর বেপরোয়া হবে।

সাম্প্রতিককালে দেশে নানা দলমতের ছদ্মাবরণে ব্যক্তিস্বার্থ সিদ্ধিতে ব্যতিব্যস্ত কিছু সুশীল সমাজপেশাজীবীবুদ্ধিজীবী নামধারীর অশুভ অপতৎপরতা সকলের দৃষ্টিগোচরে এসেছে। অনেক সময় রাষ্ট্রযন্ত্রকে প্রভাবিত করার ক্ষেত্রে কোন কোন ব্যক্তি দল ও সংগঠনের পক্ষ অবলম্বনে অযাচিত আলোচনাসমালোচনাসংবাদ সম্মেলন করতেও কুন্ঠাবোধ করছে না।

অতীতে দেশের সক্ষমতা ও উন্নয়নের প্রতীক হিসেবে খ্যাত স্বপ্নের পদ্মা সেতুর কথিত দুর্নীতি নিয়ে ব্যক্তিবিশেষের ভূমিকা জাতিকে এখনও হতাশায় নিমজ্জিত করে রেখেছে।

রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের মতে, বাংলাদেশের সুশীল সমাজের অনেকে কোনো না কোনো দেশীয়আন্তর্জাতিক দলউপদলসংগঠনের সহযোগী হিসেবে রাজনৈতিক অঙ্গন বা রাষ্ট্রীয় কর্মকাণ্ডের বিপরীতে অবতীর্ণ হয়েছে। তারা দালালগুপ্তচরবৃত্তি পরিত্যাগ করে জনগণের অধিকার সংরক্ষণ এবং কল্যাণ নিশ্চিতকরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে, এটিই সবার কাম্য।

বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবীদের ক্ষেত্রে নৈতিক সঙ্কট ক্রমশই প্রকট হচ্ছে। দেশের আন্দোলন, সংগ্রাম, উন্নতিআগ্রগতিতে যে পেশাজীবীদের এমন অবদান; তারা এখন শতধাবিভক্ত এবং অপরাজনীতিতে লিপ্ত। বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনগুলো তাদের অরাজনৈতিক বৈশিষ্ট্য ধরে রাখতে ব্যর্থ হওয়ায় পেশাজীবীদের ঐক্যবদ্ধতার বিপরীতে আরও বিভক্তি দীর্ঘায়িত হচ্ছে।

বাংলা একাডেমি প্রকাশিত ‘শহীদ বুদ্ধিজীবীকোষ’ গ্রন্থে বুদ্ধিজীবীর সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, “বুদ্ধিজীবী অর্থ লেখকবিজ্ঞানীচিত্রশিল্পীকন্ঠশিল্পীসকল পর্যায়ের শিক্ষকগবেষকসাংবাদিকরাজনীতিকআইনজীবীচিকিৎসকপ্রকৌশলীস্থপতিভাস্করসরকারি ও বেসরকারি কর্মচারীচলচ্চিত্র ও নাটকের সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিসমাজসেবী ও সংস্কৃতিসেবী।

যারা দেশের স্বাধীনতাকে ভিত্তি করে দেশ ও দেশের মানুষের কল্যাণের জন্য তাদের বিচারবুদ্ধিবিচক্ষণতা দিয়ে দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার্থে কাজ করে।” অধিকন্তু সংস্থাটির অভিধানে ‘বুদ্ধিজীবী’ বলতে বোঝানো হয়েছে “যারা সমাজ ও সংস্কৃতি সচেতন এবং জ্ঞানবিজ্ঞানে দক্ষ সুশিক্ষিত মানুষ, যারা বুদ্ধির বলে বা বুদ্ধির কাজ দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন।

আন্তর্জাতিক বিভিন্ন চিন্তাবিদ ও দার্শনিক বুদ্ধিজীবীকে নানাভাবে সংজ্ঞায়িত করার চেষ্টাও করেছেন। বর্তমান বিশ্বের অত্যন্ত খ্যাতিমান মার্কিন চিন্তাবিদ অধ্যাপক নোয়াম চমস্কি’র মতে, ‘বুদ্ধিজীবীরা যুক্তিভিত্তিক চিন্তা ভাবনা অনুসরণ করে রাষ্ট্র ও সরকারের বিভিন্ন সিদ্ধান্ত ও কাজের চুল চেরা বস্তুনিষ্ঠ বিশ্লেষণ করবেন এবং সেসব নিয়ে কথা বলবেন। তারা জনগণের পক্ষ থেকে সত্যকে অনুসন্ধান করবেন এবং তা জনগণের সামনে প্রকাশ করবেন।

এই বুদ্ধিজীবীরা যে কোন পেশারই হতে পারেন। অধ্যাপক, গবেষক, ইতিহাসবিদ, সাংবাদিক, শিল্পী, কবি, সাহিত্যিক, বিজ্ঞানী, শিল্পবোদ্ধা, আইনজীবী বা হতে পারেন রাজনীতি আলোচকও।’

ইতালীয় চিন্তাবিদ গ্রামসি বলেন, ‘সব মানুষই বুদ্ধিজীবী, কিন্তু সব মানুষই সমাজে বুদ্ধিজীবীর কাজ করে না। সমাজে অনেকে আছেন যারা ঐতিহ্যগতভাবেই বুদ্ধিজীবী যেমনশিক্ষক, যাজক, পুরোহিত, ইমাম, সাংবাদিক। আরেক দল আছেন অর্গানিক বুদ্ধিজীবী যারা সবসময়ই নিজ নিজ শ্রেণিগত অবস্থানে থেকে জগৎকে ব্যাখ্যা করেন। তারা পুঁজিবাদী অর্থনীতিসংস্কৃতিরাজনীতি বিশ্লেষণের মাধ্যমে চেষ্টা চালান জনমতকে প্রভাবিত করতে।’

ফরাসি দার্শনিক জুলিয়েন বেন্দার ভাষায়, ‘প্রকৃত বুদ্ধিজীবী তারাই, যারা জাগতিক লাভের ঊর্ধ্বে উঠে নিঃস্বার্থ এবং আপসহীন জ্ঞানচর্চায় ব্যস্ত থাকেন সত্য উচ্চারণে তারা থাকেন নির্ভীক, এমনকি সত্য প্রকাশের জন্য প্রাণ সংশয়ের মতো ঝুঁকি নিতেও তারা দ্বিধা করেন না বরং জাতির সংকটে নিজের জীবনকে তুচ্ছ জ্ঞান করেন।’

আরেক দার্শনিক এডওয়ার্ড সাঈদের মতে, ‘বুদ্ধিজীবী এমন এক ব্যক্তি, যিনি স্বাধীনতা ও ন্যায়বিচারের পক্ষে একটি নির্দিষ্ট বার্তা, একটি দৃষ্টিভঙ্গি ও একটি সুচিন্তিত মতামত জনগণের সামনে তুলে ধরেন কোনো প্রতিবন্ধকতাই তাকে সত্য প্রকাশ থেকে বিচ্যুত করতে পারে না।’ তবে ব্রিটিশ দার্শনিক বার্ট্রান্ড রাসেল বুদ্ধিজীবী সম্পর্কে সমালোচনা করে বলেছিলেন, ‘আমি নিজেকে কখনই বুদ্ধিজীবী বলিনি এবং আমার উপস্থিতিতে কেউ আমাকে তা বলার সাহস করেনি।

আমি মনে করি কোন বুদ্ধিজীবীকে এমন কোন ব্যক্তি হিসাবে সংজ্ঞায়িত করা যেতে পারে যিনি নিজের যতটুকু বুদ্ধি রয়েছে তার চেয়ে বেশি দেখানোর ভান করেন এবং আমি আশা করি এই সংজ্ঞাটি আমার উপযুক্ত নয়।’

এটি সর্বজনবিদিত যে, হিন্দু ও বৌদ্ধ যুগের বাংলা ছিল প্রধানত যাজক প্রভাবিত একটি রাষ্ট্র। তখন বুদ্ধিজীবী বলতে এই যাজকদের বোঝানো হতো এবং তাঁরাই রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রণ করতেন। তাঁদের সামাজিক মর্যাদাই একটি বৃহত্তর সমাজকে নিয়ন্ত্রণে রাখার উপায় ও কৌশল আবিষ্কারে প্রেরণা জোগাত।

সমাজে তাঁদের আধিপত্য বজায় রাখার প্রধান হাতিয়ার ছিল বর্ণপ্রথা। হিন্দুদের এই বর্ণপ্রথা সমাজকে জন্মের ভিত্তিতে কয়েকটি পেশাগত সম্প্রদায়ে বিভক্ত করে। এর ফলে বিদ্যাচর্চা কেবল হিন্দু সমাজের উচ্চবর্ণ ব্রাহ্মণদের মধ্যে সীমিত হয়ে পড়ে।

অবর্ণবাদী বৌদ্ধদের এই যাজক শ্রেণির বাইরের জনগণের জন্য বিদ্যার্জনের একটা অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি হয় বটে, কিন্তু তা সত্ত্বেও খুব অল্প সংখ্যক লোকের পক্ষেই সে সুযোগ গ্রহণ করা সম্ভবপর হয়েছিল এবং আরও কম সংখ্যক লোক এ সমস্যা নিয়ে কথা বলেছেন।

আফগান ও মুগল সাম্রাজ্যের অংশ হিসেবে বাংলা ত্রয়োদশ শতক থেকে অষ্টাদশ শতকের মধ্যভাগ পর্যন্ত মুসলমান সুলতান ও সুবেদারদের দ্বারা শাসিত হয়েছে। এই সময়কালে আধ্যাত্মবাদীবুদ্ধিজীবী সুফিদের দ্বারা বিপুল সংখ্যক হিন্দু ও বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত হওয়ার পর উনিশ শতকে বাংলার নবাবরা আমির ও মুৎসুদ্ধিদের সমন্বয়ে দরবার পদ্ধতির উন্নয়ন ঘটিয়েছিলেন।

মুৎসুদ্ধিদের অধিকাংশই ছিলেন উচ্চবর্ণের শিক্ষিত ও ব্যবস্থাপনায় দক্ষ ব্রাহ্মণ এবং বিচারকমন্ডলীতে ছিলেন শিক্ষিত মুসলিম মুফতিরা। উপনিবেশপূর্ব যুগের বুদ্ধিজীবী সম্প্রদায় ছিল স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যে উদ্ভাসিত। উপনিবেশিক শাসনকালে উনিশ শতকের প্রারম্ভে দেশের সমাজরাজনীতি সম্পর্কে বিশ্লেষণী দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে একটি সচেতন গোষ্ঠীর উন্মেষ ঘটে। তখন কলকাতা ছিল নব্য বুদ্ধিবাদের কেন্দ্রস্থল এবং বুদ্ধিজীবী সম্প্রদায় ব্রিটিশ শাসনকে তাঁদের পৃষ্ঠপোষক হিসেবে বিবেচনা করেছেন।

রাজা রামমোহন রায়, রাজা রাধাকান্ত দেব, প্রসন্নকুমার ঠাকুর, ভবানীচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় বিভিন্ন সময় ব্রিটিশ শাসনের সমালোচনা করলেও কোনো কোনো ক্ষেত্রে তাঁরা তার প্রতি আনুগত্য ও কৃতজ্ঞতাও প্রকাশ করেছেন। তবে ফকির মজনু শাহ, আগা মুহম্মদ রেজা বেগ, নবাব শামসুদ্দৌলা এবং তিতুমীরের মতো সনাতনপন্থী মুসলিম বুদ্ধিজীবীরা ব্রিটিশ শাসনকে ভিন্নভাবে মূলায়ন করেছেন।

তাঁরা দৃঢ়তার সঙ্গে ব্রিটিশ শাসন মেনে নিতে অস্বীকার করেন এবং এ ব্যাপারে কঠিন গণপ্রতিরোধ গড়ে তোলেন। এমনকি উপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে তাঁরা সশস্ত্র প্রতিরোধও গড়ে তুলেছিলন। ১৮৬৪ সালে ঢাকা পৌর কর্পোরেশনের সৃষ্টি, ১৮৮৫৮৬ সালে রেলযোগাযোগ স্থাপন এবং অনেক স্কুলকলেজ প্রতিষ্ঠা হলে তৎকালীন পূর্ব বাংলায় একটি বৃহত্তর শিক্ষিত জনগোষ্ঠী বা বুদ্ধিজীবী সম্প্রদায় গড়ে উঠার সুযোগ সৃষ্টি হয়।

আমাদের সকলের জানা, বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে দীর্ঘ স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মহান মুক্তিযুদ্ধে বুদ্ধিজীবীদের অবদান ছিল অনন্য ও গৌরবদীপ্ত। পেশাজীবীদের বৃহৎ অংশ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়ে মুজবনগর সরকারের অধীনে পরিকল্পনা সেল গঠন করে বিশ্ববাসীর কাছে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের তথ্য সরবরাহসাহায্যের আবেদনবিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামে বক্তব্য প্রদানশরণার্থীদের উৎসাহ প্রদানসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। পেশাজীবীদের মধ্যে অনেকেই মুক্তিযুদ্ধে শহিদ হয়েছেন।

দেশের সকল গণআন্দোলন ও স্বৈরচারবিরোধী আন্দোলনে পেশাবুদ্ধিজীবীদের ভূমিকা অনস্বীকার্য। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, চলমান সময়ের প্রেক্ষাপটে এদের অনেকেরই চরিত্রখোলস পাল্টে গেছে। ত্যাগতিতিক্ষাআত্মসমালোচনাআত্মশুদ্ধিআত্মনির্ভরতার প্রগতিমননসৃজনশীল পন্থা থেকে বিচ্যুত হয়ে পড়েছে। লক্ষ্যচ্যুত এসব সুবিধাভোগীরা ভোগবিলাসী জীবন যাপনের উদ্দেশ্যে এখন নানা যোগসাজসে কর্তাশ্রীত অপসংস্কৃতির মোড়কে লবিংতদবিরপরামর্শমূলক এমন নষ্ট কর্মযজ্ঞে জড়িত হওয়ার কারণে তাদের সম্মানগ্রহণযোগ্যতা দেশব্যাপী শূন্যের তলানীতে পৌঁছেছে।

দ্রুততম সময়ের মধ্যে এদের পরিত্যাজ্যতাদল ও সরকারের যেকোন পর্যায় থেকে তাদের বিতাড়ন সময়ের জোর দাবীতে পরিণত।

লেখক : শিক্ষাবিদ, সাবেক উপাচার্য, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

পূর্ববর্তী নিবন্ধহল্যান্ড থেকে
পরবর্তী নিবন্ধআগামী মাসে ঢাকায় আসছেন মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী