শিক্ষক ক্লাবে ছাত্রীদের আবাসন করার আলোচনা

সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের পর সিদ্ধান্ত

আজাদী প্রতিবেদন | সোমবার , ২৩ জানুয়ারি, ২০২৩ at ৪:০৭ পূর্বাহ্ণ

চারুকলা ইনস্টিটিউটের জরাজীর্ণ একাডেমিক ভবনের সম্মুখভাগেই দাঁড়িয়ে আছে নতুন তিনতলা একটি ভবন। ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে ‘চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ইনফরমেশন সেন্টার’ নামক ভবনটির উদ্বোধন করেন তৎকালীন উপাচার্য প্রফেসর ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী। তবে ইনফরমেশন সেন্টার নামকরণ হলেও ভবনটি মূলত ব্যবহৃত হয়ে আসছে ‘শহর শিক্ষক ক্লাব’ হিসেবে। সেখানে স্পোর্টস, দৈনিক পত্রিকা, ক্যান্টিনসহ বলতে গেলে শিক্ষকদের জন্য যাবতীয় সুবিধা রয়েছে। দুতলা ও তিনতলায় পর্যাপ্ত শৌচাগার সুবিধা। রয়েছে দুটি গেস্ট রুমও। দুজন কর্মচারী ক্লাবে নিয়োজিত। কিন্তু শিক্ষার্থীদের একমাত্র একাডেমিক ভবনে এসব সুবিধার ছিটেফোটাও নেই। তাদের না আছে শৌচাগার সুবিধা, না আছে ক্যান্টিন। গাদাগাদি করে ২৫ জন থাকা যায়, এমন সেমিপাকা হোস্টেলে একজন স্টাফও নেই। ছাত্রীদের বেলায় আরো নাজুক। তাদের আবাসনের কোনও ব্যবস্থা করা হয়নি। ক্লাসের সময়ে শৌচাগারে যেতে হলে প্রশাসনিক ভবনের একমাত্র কমন রুমই তাদের ভরসা। পাশাপাশি দুটি ভবন কিন্তু সুযোগসুবিধায় যেন আকাশপাতাল ব্যবধান। শিক্ষার্থী ও সংশ্লিষ্টদের দাবিআর্ট কলেজ থেকে চারুকলা ইনস্টিটিউটে রূপান্তরকালীন সম্পাদিত চুক্তিতে ‘এর জায়গা শুধু মাত্র ইনস্টিটিউটের কাজেই ব্যবহার করা যাবে’ মর্মে উল্লেখ করা আছে। কিন্তু উদ্বোধনের পর থেকেই তিন তলা ভবনটি ‘শহর শিক্ষক ক্লাব’ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। বিষয়টি চারুকলার শিক্ষার্থীরা ইতিবাচক হিসেবে নেননি। তাই ভবনটিকে ‘অবৈধ’ ভবন হিসেবে নামকরণ করেছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। ভবনের চারপাশের দেয়ালে তারা সেটি (অবৈধ ভবন) লিখেও দিয়েছেন।

ক্লাবের কার্যক্রম বন্ধ করে ভবনটি চারুকলা ইনস্টিটিউটের কাজে ব্যবহারের দাবিও জানান শিক্ষার্থীরা। গতকাল চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন চারুকলা ইনস্টিটিউটে গেলে শিক্ষার্থীরা বিষয়টি তুলে ধরেন। শিক্ষার্থীরা বলছেন, শিক্ষক ও সংশ্লিষ্টদের সাথে আলাপ করে জেলা প্রশাসক মহোদয়ও এ দাবির বিষয়ে একমত পোষণ করেছেন। এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলেছেন।

জানতে চাইলে আন্দোলনরত চারুকলা ইনস্টিটিউটের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী মো. শহীদ আজাদীকে বলেন, ‘ভবনটি আমাদের কাছে সম্পূর্ণ অবৈধ। কারণ, চুক্তি অনুযায়ী চারুকলা ইনস্টিটিউটের কাজের বাইরে ব্যবহৃত হয়, এমন কিছু এখানে থাকার সুযোগ নেই। আমরা অবৈধ শিক্ষক ক্লাবের কার্যক্রম বন্ধ করে ভবনটিতে ছাত্রীদের আবাসনের ব্যবস্থা করার দাবি জানিয়েছি। জেলা প্রশাসক মহোদয়ও আমাদের দাবিতে একমত পোষণ করেছেন।’

জেলা প্রশাসক ও সাবেক সিটি মেয়রের অবস্থানকালীন সেখানে ছিলেন চারুকলা ইনস্টিটিউটের অচলাবস্থা নিরসনে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক গঠিত সমন্বয়ক কমিটির সদস্য সচিব ও বিশ্ববিদ্যালয় সহকারী প্রক্টর মোহাম্মদ ইয়াকুব। জানতে চাইলে চুক্তি অনুযায়ী সেখানে শিক্ষক ক্লাব থাকার সুযোগ নেই বলে স্বীকার করেন সহকারী প্রক্টর মোহাম্মদ ইয়াকুব। তিনি আজাদীকে বলেন, এর জায়গা শুধু মাত্র চারুকলা ইনস্টিটিউটের কাজে ব্যবহার হবে মর্মে চুক্তিতে স্পষ্ট করা আছে। তাই এখানে চারুকলা ইনস্টিটিউটের সাথে সম্পৃত্ত নয় এমন অন্য কোনও কার্যক্রম পরিচালনা চুক্তির সাথে সাংঘর্ষিক। শিক্ষার্থীরা এই শিক্ষক ক্লাবের কার্যক্রম বন্ধের দাবি জানিয়েছেন। জেলা প্রশাসকও বলেছেনশিক্ষার্থীদের দাবি যৌক্তিক। তিনি এ বিষয়ে ভিসি ম্যাডামের সাথে কথা বলে ব্যবস্থা গ্রহণের কথা জানিয়েছেন। ম্যাডামের (ভিসি) সাথে এ বিষয়ে আমারও কথা হয়েছে। তিনিও একমত হয়েছেন। দ্রুততম সময়ের মধ্যেই ক্লাবের সবকিছু গুটিয়ে ফেলা হবে। অর্থাৎ এখানে শিক্ষক ক্লাবের কার্যক্রম আর থাকছে না। আর ওই ভবনে ছাত্রীদের আবাসনের ব্যবস্থা করার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে মন্তব্য করে সহকারী প্রক্টর মোহাম্মদ ইয়াকুব বলেন, শিক্ষক ক্লাবের ভবনটিতে ছাত্রীদের আবাসনের ব্যবস্থা করার দাবি করেছে শিক্ষার্থীরা। বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তবে ছাত্রীদের থাকার বিষয়টি একটু সেনসিটিভ। নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা জরুরি। এক্ষেত্রে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের বিষয় আছে। নিরাপত্তাসহ সার্বিক বিষয় বিবেচনা করেই সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করা হবে বলে জানান চারুকলা ইনস্টিটিউটের অচলাবস্থা নিরসনে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক গঠিত সমন্বয়ক কমিটির সদস্য সচিব ও বিশ্ববিদ্যালয় সহকারী প্রক্টর মোহাম্মদ ইয়াকুব।

পূর্ববর্তী নিবন্ধমার্চ থেকে হাসপাতালেই চেম্বার করবেন চিকিৎসকরা : স্বাস্থ্যমন্ত্রী
পরবর্তী নিবন্ধ৮২ দিন পর আন্দোলন স্থগিত শিক্ষার্থীরা ক্লাস করবেন মাঠে