বিশ্ব ইজতেমায় লাখো মুসল্লির আল্লাহু আকবার ধ্বনিতে মুখরিত টঙ্গীর তুরাগ তীর। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত অবিরাম চলছে বিভিন্ন ভাষায় কোরআন-হাদিসের বয়ান। দেশ-বিদেশের খ্যাতনামা আলেমরা বিভিন্ন বিষয়ে বয়ান করছেন। প্রথম পর্বের দ্বিতীয় দিন গতকাল শনিবার বাদ ফজর থেকে ইজতেমা মাঠে লাখ-লাখ মুসল্লির উদ্দেশ্যে চলছে পবিত্র কোরআন-হাদিসের আলোকে গুরুত্বপূর্ণ বয়ান। আজ রোববার আখেরি মোনাজাতের মধ্যদিয়ে শেষ হবে বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব। সকাল ১০টা থেকে বেলা সাড়ে ১১টার মধ্যে আখেরি মোনাজাত অনুষ্ঠিত হবে বলে ইজতেমা আয়োজক সূত্রে জানা গেছে। এর আগে হেদায়েতি বয়ান করা হবে।
তাবলীগ জামাতের শীর্ষস্থানীয় মুরুব্বীদের পরামর্শের ভিত্তিতে বিশ্ব তাবলীগ জামাতের শীর্ষ মুরব্বি বাংলাদেশের হাফেজ মাওলানা জুবায়ের আখেরি মোনাজাত পরিচালনা করবেন বলে আশা করা হচ্ছে। মোনাজাতে বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বের মুসলিম উম্মাহর সুখ, শান্তি ও কল্যাণ কামনা করে দোয়া করা হবে। আখেরি মোনাজাতে প্রায় ২৫-৩০ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসল্লি অংশ নিবেন বলে আয়োজকদের ধারণা। ইজতেমার প্রথম পর্বে শিল্প নগরী টঙ্গী ইতোমধ্যেই ধর্মীয় নগরীতে পরিণত হয়েছে। খবর বাসসের।
বয়ানে বলেন, যারা দুনিয়াতে দ্বীনের ওপর চলবে, ঈমানকে সুন্দর ও মজবুত করবে, আমলকে সুন্দর করবে, আল্লাহ তা’য়ালা তাদেরকে কামিয়াবি দান করবেন। ঈমান ও আমল ছাড়া দুনিয়া ও আখিরাতে কামিয়াব হওয়া যাবে না। ঈমান আমলের পাশাপাশি নামাজকে সুন্দর করতে হবে। আল্লাহকে পেতে হলে নামাজ পড়তে হবে। জাহান্নাম থেকে বাঁচতে এবং জান্নাত লাভের মাধ্যম হলো নামাজ। দিনে ৫ ওয়াক্ত নামাজের মাধ্যমে আল্লাহর সঙ্গে কথা বলা হয়। যে ব্যক্তি দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ খুশু খুযুর সঙ্গে আদায় করবে আল্লাহ তাকে নাজাত দেবেন। পরকালে শান্তি পেতে চাইলে ভালো আমল করতে হবে। ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা মনোনিবেশ করে ঈমান, আখলাক ও দ্বীনের বিভিন্ন বিষয়ের বয়ান শোনেন।
শনিবার সকালে টঙ্গী শহর ও ইজতেমাস্থলের আশপাশ এলাকা যেন জনসমুদ্রে পরিণত হয়েছে। টঙ্গীর তুরাগ তীরে বিশ্ব ইজতেমায় আগত লাখ-লাখ মুসল্লির পদভারে মুখরিত হয়ে উঠেছে। এদিনও টঙ্গী অভিমুখী বাস, ট্রাক, ট্রেন, লঞ্চসহ বিভিন্ন যানবাহনে ছিল মানুষের ভিড়। সেটি আখেরি মোনাজাতের আগ পর্যন্ত মানুষের এ ঢল অব্যাহত থাকবে।
যারা বয়ান করেছেন : ইজতেমায় মূল বয়ান উর্দুতে হলেও অংশ নেয়া বিভিন্ন ভাষাভাষী মুসল্লিদের জন্য তাৎক্ষণিকভাবে বাংলা, ইংরেজি, আরবি, তামিল, মালয়, তুর্কি ও ফরাসিসহ বিভিন্ন ভাষায় অনুবাদ করা হয়। বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্বের দ্বিতীয় দিনের শুরুতে বয়ান করেন পাকিস্তানের মাওলানা খোরশিদুল হক। সকাল ১০টায় বয়ান করেন ভারতের মাওলানা ইবরাহিম দেওলা, মাদরাসা ছাত্রদের উদ্দেশ্যে বিশেষ বয়ান করেন পাকিস্তানের মাওলানা খোরশিদ, আরব জামাতের জন্য বয়ান করেন ভারতের মাওলানা আহমদ লাট, বোবা ও বধিরদের জন্য বয়ান করেন ভারতের মাওলানা সানোয়ার, বিদেশি জামাতের মুসল্লিদের জন্য ইংরেজিতে বয়ান করেন পাকিস্তানের মাওলানা ইফতার জামান। বাদ জোহর বয়ান করেন ভারতের মাওলানা ফারুক। বাদ আসর বয়ান করেন ভারতের মাওলানা যুহাইরুল হাসান এবং অনুবাদ করেন মাওলানা যোবায়ের।
আরও দুই মুসল্লির মৃত্যু : ইজতেমা ময়দানে বার্ধক্যজনিত কারণে আরও দুই মুসল্লির মৃত্যু হয়েছে। তাদের একজন হাবিবুল্লাহ হবি (৬৭) ঢাকার কেরানীগঞ্জ এলাকার বাসিন্দা। অন্যজন ঢাকা যাত্রাবাড়ি এলাকার বাসিন্দা আক্কাস আলী (৫০)। শুক্রবার বিকেলে ময়দানের ৪২১ নম্বর হালকায় আক্কাস আলী অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে তাকে শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। জানাযা শেষে তাদের মরদেহ গ্রামের বাড়ি পাঠানো হয়েছে। এ নিয়ে চার মুসল্লির মৃত্যু হয়েছে বিশ্ব ইজতেমায়। বিষয়টি নিশ্চিত করেন ইজতেমা আয়োজক কমিটির মিডিয়া সমন্বকারী মুফতি জহির ইবনে মুসলিম।
যৌতুকবিহীন শতাধিক বিয়ে : টঙ্গীর তুরাগ তীরে বিশ্ব ইজতেমায় শতাধিক যৌতুকবিহীন বিয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে। দ্বিতীয় দিন গতকাল শনিবার বিশ্ব ইজতেমায় বিশেষ আকর্ষণ ছিল এ বিয়ে। বিশ্ব ইজতেমার মিডিয়া সমন্বয়কারী মাওলানা জহির ইবনে মুসলিম সাংবাদিকদের বিয়ের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। ভারতের মাওলানা মো. জোহায়রুল হাসান ইজতেমা ময়দানের পশ্চিম-উত্তর দিকের দোয়া মঞ্চে এ বিয়ে পড়ানো হয়। হজরত ফাতেমা (রা.) ও হজরত আলী (রা.)-এর বিয়ের দেনমোহর অনুসারে বিনা যৌতুকে শতাধিক বিয়ে সম্পন্ন হয়। বিয়ের আগে বাদ আসর হাফেজ মাওলানা জোবায়ের বিয়ের খুতবা প্রদান করেন।
বয়ান শেষে বর-কনের অভিভাবকদের সম্মতিতে বরের উপস্থিতিতে এ বিয়ে পড়ানো হয়। বিয়ে শেষে উপস্থিত দম্পতিদের স্বজন ও মুসুল্লিদের মধ্যে খুরমা খেজুর বিতরণ করা হয়। জহির ইবনে মুসলিম বলেন, মূল মঞ্চে বর ও কনে পক্ষের অভিভাবকদের উপস্থিতিতে যৌতুকবিহীন শতাধিক গণবিয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে।
তাবলীগ কর্মী জালাল মিয়া জানান, এখানে নগদ কাবিনের শর্তেই বর-কনের মধ্যে বিয়ে সম্পন্ন হয়। বিয়ের শর্ত অনুযায়ী বরকে পুরো কাবিনের টাকা কনে পক্ষকে পরিশোধ করতে হয়। এর মধ্যে ১ লাখ টাকা কাবিনের একটি বিয়ে ৮০ হাজার টাকা নগদ ও ২০ হাজার টাকা বাকি ছিল। কিন্তু মাঠেই ২০ হাজার টাকা যোগাড় করে ১ লাখ টাকা পরিশোধ করেই বিয়ে সম্পন্ন করা হয়।












