একজনকে গুলি করে হত্যা ৫ জনকে কুপিয়ে জখম

সরফভাটায় সন্ত্রাসী গ্রুপের তাণ্ডব, লুটপাট নিহত মোজাহেদকে গুলি করা হয় মায়ের সামনে

রাঙ্গুনিয়া প্রতিনিধি | বুধবার , ১১ জানুয়ারি, ২০২৩ at ৪:০৫ পূর্বাহ্ণ

রাঙ্গুনিয়ায় সংঘবদ্ধ সশস্ত্র সন্ত্রাসী গ্রুপ অতর্কিত হামলা চালিয়ে একজনকে গুলি করে হত্যাসহ ৫ জনকে কুপিয়ে গুরুতর জখম করেছে। গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে সরফভাটা ইউনিয়নের ৪ নং ওয়ার্ড এজাহার মিয়া ফকিরের বাড়িতে এই ঘটনা ঘটে।

গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যাওয়া যুবকের নাম মো. মোজাহেদ (২৮)। তিনি ওই এলাকার মো. হারুনের ছেলে। তিনি গুলিবিদ্ধ হলে তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেলে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত ১০টার দিকে তার মৃত্যু হয়। এছাড়া ধারালো দেশীয় অস্ত্রের কোপে আহত হয়েছেন একই এলাকার মৃত কেরামত আলীর ছেলে আবু তাহের (৩৫), বাদশা মিয়ার ছেলে মো. ফয়জুল্লাহ (২৫), মো. ইব্রাহীমের ছেলে মো. ফরহাদ (১৯), আবদুর রশিদের ছেলে মো. জামাল (২৫) ও খায়ের আহাম্মদের ছেলে জালাল উদ্দীন (৩০)

স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শী ও আহতদের স্বজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আহতরা সবাই দিনমজুর। তারাসহ এলাকার সবাই স্থানীয় একটি দোকানে বসে আড্ডা দিচ্ছিলেন। এ সময় ৩০/৪০ জনের একটি সন্ত্রাসী দল অস্ত্র, লাঠিসোঁটা, ধারালো রামদা ও ছুরিসহ বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে অতর্কিত হামলা চালায়। তারা প্রথমে এলাকার বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ করে দেয় এবং অন্তত ১০ রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছোড়ে। পরে নিহত মোজাহেদের ঘরে গিয়ে তার বড় ভাই দিদারকে খুঁজে না পেয়ে তাকে গুলি করে। এরপর স্থানীয় হাছানের চায়ের দোকানটিতে প্রবেশ করে সবার মোবাইল চেক করতে চায় এবং দিদারের খোঁজ করে। পরক্ষণে এলোপাতাড়ি কোপাতে শুরু করে তারা। এ সময় দোকানে বসে থাকা ৫ জন গুরুতর আহত হন। সন্ত্রাসীরা চলে গেলে স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেঙে নিয়ে যান।

কী কারণে এমন হামলার ঘটনা ঘটেছে তা কেউ জানাতে পারেননি। তবে গুলিবিদ্ধ মোজাহেদের বড় ভাইয়ের সঙ্গে এসব সন্ত্রাসীর পূর্ব শত্রুতা রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তাকে খুঁজতে এসেই সংঘবদ্ধ সন্ত্রাসীরা এই ঘটনা ঘটিয়ে থাকতে পারে বলে সবার ধারণা।

প্রত্যক্ষদর্শী মো. মঞ্জু বলেন, তারা প্রথমে এসে মায়ের সামনে ছেলে মোজাহেদকে গুলি করে। এরপর দোকানে গিয়ে কুপিয়ে আরো ৫ জনকে গুরুতর আহত করে। বেশ কয়েকটি মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয় এবং দোকান থেকে নগদ টাকা ছিনতাই করে ভাঙচুর চালায়। নিহত মোজাহেদ ৪ ভাই ও ২ বোনের মধ্যে দ্বিতীয়। ৭ মাস আগে তিনি বিয়ে করেছিলেন। ঘটনার ঘণ্টাখানেক আগে গাছ কাটা শ্রমিক হিসেবে কাজ শেষে তিনি বাড়ি ফিরেছিলেন।

হাসপাতালের দায়িত্বরত চিকিৎসক আবদুল মান্নান বলেন, ৭টার পর থেকে তাদেরকে আনা হচ্ছিল। কারো হাতে, কারো পায়ে এবং কারো মাথায় ধারালো অস্ত্রের গুরুতর আঘাত ছিল। তাদের প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে দুটো অ্যাম্বুলেন্সে করে চট্টগ্রাম মেডিকেলে প্রেরণ করা হয়। তবে গুলিবিদ্ধ ব্যক্তিকে এখানে আনা হয়নি। তাকে সরাসরি মেডিকেলে নেয়া হয়েছে বলে স্বজনরা জানিয়েছেন।

রাঙ্গুনিয়া থানার ওসি মো. মাহবুব মিলকী বলেন, ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। এলাকার পরিবেশ শান্ত রয়েছে। কারা, কী জন্য এই ঘটনা ঘটিয়েছে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। জড়িতদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা হবে।

স্থানীয়রা জানান, পাহাড়ে অবস্থান নেয়া চিহ্নিত সন্ত্রাসী গ্রুপ এই ঘটনা ঘটিয়েছে। তাদের বেপরোয়া চাঁদাবাজিতে এলাকা ছেড়ে দেড় শতাধিক পরিবার অন্যত্র চলে যেতে বাধ্য হয়েছে। চিহ্নিত এই সন্ত্রাসীদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে হত্যা, ডাকাতি, মারামারিসহ একাধিক মামলা রয়েছে বলে জানা যায়।

স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান শেখ ফরিদ উদ্দিন চৌধুরী বলেন, যারা হামলা চালিয়েছে তারা সবাই চিহ্নিত সন্ত্রাসী। তাদের দমন করতে পুলিশ ক্যাম্প স্থাপন করা হলেও তাদের তৎপরতা বন্ধ হয়নি। তার ধারণা, পূর্ব শত্রুতার জেরে এই ঘটনা ঘটতে পারে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকৌতুক কণিকা
পরবর্তী নিবন্ধসিআরবিতে আজ বিএনপির গণ-অবস্থান কর্মসূচি