একনিষ্ঠভাবে ৩৭ বছর ধরে একটি সংগঠন এগিয়ে নেয়া, চালিয়ে নেয়া কম কথা নয়। এটা অনেক বড় কাজ। মোসতাক এই কাজটি করেছেন, করে যাচ্ছেন। ৩৭ বছর টিকে থাকা খুবই দূরূহ একটি ব্যাপার। সাংস্কৃতিক সংগঠনের এতদিন ধরে টিকে থাকার নজির খুব বেশি নেই। এই সংগঠনের ৫০ বছর পূর্তি হলে চট্টগ্রামের মানুষের উচিত তাকে (মোসতাককে) সম্মাননা জানানো।
আবৃত্তি সংগঠন ক্বণন-এর ৩৭ বছর পূর্তি অনুষ্ঠানে কবি রেজাউদ্দিন স্টালিন এসব কথা বলেছেন। গতকাল সন্ধ্যায় নগরীর থিয়েটার ইনস্টিটিউটে ‘কবিতা চট্টগ্রাম’ শীর্ষক আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে তিনি প্রধান অতিথি ছিলেন ক্বণন’র কর্ণধার ও প্রতিষ্ঠাতা মোসতাক খন্দকারের সভাপতিত্বে কবি অভীক ওসমান, ড. নুরুল আমিন, মওদুদুল আলম, আবু মুসা চৈৗধুরী, সৈয়দ আহমদ শামীম, শাহীন মাহমুদ, মাইন উদ্দিন জাহেদ, রিজোয়ান মাহমুদ, নীলাঞ্জন বিদ্যুৎ, আরমানুজ্জামান প্রমুখ অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন। রাশেদ মুহাম্মদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন কবি সৌভিক চৌধুরী।
বক্তব্যের ফাঁকে স্বরচিত আঞ্চলিক কবিতা ‘চেরাগীর আলো’ পাঠ করে শোনান কবি আবু মুসা চৌধুরী। আর কবি অভীক ওসমানের একটি কবিতা আবৃত্তি করেন সাইমুম মুরতাজা। অনুষ্ঠানে চট্টগ্রামে অবস্থানরত কবি-সাহিত্যিকদের পাশাপাশি ক্বণনের সদস্য, সংস্কৃতি ও আবৃত্তিপ্রেমিরা উপস্থিত ছিলেন। প্রধান অতিথির বক্তব্যে রেজাউদ্দিন স্টালিন আরো বলেন, কবিতার অসীম শক্তি। একজন কবি মানুষকে স্বপ্ন দেখতে শেখায়। মাতৃভূমি ও মানুষকে ভালোবাসতে শেখায়। আর কবিতা সমাজকে পরিশুদ্ধ করে।
সংস্কৃতির প্রসারে দীর্ঘ সময় ধরে ক্বণন যেভাবে ভূমিকা রেখে আসছে, তা অব্যাহত রাখবে এবং আবৃত্তি শিল্প ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডকে আরো এগিয়ে নিয়ে যাবে বলে অন্যান্য বক্তারা আশাবাদ ব্যক্ত করেন। সভাপতির বক্তব্যের শুরুতে অনুষ্ঠানে সাম্প্রতিককালে প্রয়াত চট্টগ্রামের কবি-লেখকদের স্মরণের মাধ্যমে শ্রদ্ধা জানান ক্বণনের প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি মোসতাক খন্দকার। রাজধানী ঢাকা কেন্দ্রিক সাহিত্য সাম্রাজ্যবাদের সমালোচনা করে একচোখা নীতির বিরুদ্ধেই এ আয়োজন বলে মন্তব্য করেন তিনি। মোসতাক খন্দকার বলেন, আবৃত্তি শিল্পই ছিল আমার আরাধ্য বিষয়। রাজনৈতিক পোশাকে শিল্প চর্চায় আমি বিশ্বাসী নই।
সংগঠনের ৩৮ বছরে পদার্পণে ক্বণনের প্রাক্তন ও বর্তমান সকল সহযোদ্ধাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান তিনি। আলোচনা পর্বের পর অনুষ্ঠানে একক ও দলীয় আবৃত্তি পরিবেশনা করেন কবি ও ক্বণনের আবৃত্তি শিল্পীরা। আবৃত্তি পরিবেশনায় ছিলেন- সৌভিক চৌধুরী, রাশেদ মুহাম্মদ, শাওকী ইবনে সাফওয়ান, শরীফ মাহমুদ, সাইমুম মুরতাজা, আবসার তানিম, শুভ্রা চক্রবর্তী, সুস্মিতা চৌধুরী, রুহুল্লাহ খান আকমল, প্রেমা চৌধুরী, জান্নাত মিশর, সুকন্যা পাল, মুনয়িম আসরা, ইবরাহীম মাহমুদ প্রমুখ।
সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি মোসতাক খন্দকারের দাবি, শুদ্ধ শিল্পের জন্য শুদ্ধতম প্রচেষ্টা- এ বিশ্বাসের প্রায়োগিক চর্চায় নিবেদিত ক্বণন পরিবারের একাগ্র সাধনা। আবৃত্তি শিল্পের বিকাশে এবং জনগ্রাহ্যতা সৃষ্টিতে ক্বণন অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। আবৃত্তি শিল্পের মর্যাদা অক্ষুণ্ন রাখতে উজান স্রোতে হলেও ক্বণন’র অবিচল যাত্রা অব্যাহত থাকবে। কোন অজুহাতেই কিছুতেই শিল্পী ও শিল্পের বিভাজন ক্বণন’র কাম্য নয়। ক্বণন মনে করে অনৈক্য অশুভ কিছুকে আহ্বান করে। শিল্পী যখন শিল্পের বিষয়চ্যুত হয় তখন শিল্পের আঙ্গিনায় অনাকাঙিক্ষত অনেক কিছুর অনুপ্রবেশ ঘটে। ক্বণন শুদ্ধতম আবৃত্তি অঙ্গন এই সংক্রামক ব্যধি থেকে মুক্ত থাকতে চায়।