বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সর্বোচ্চ ডিগ্রি নিয়ে যখন শত শত যুবক বেকার কিংবা মাসিক পনের থেকে বিশ হাজার টাকা বেতনের চাকরির পাবার আশায় হন্য হয়ে ঘুরছেন তখন বিশেষায়িত ফ্যাশন এন্ড টেকনোলজি থেকে উচ্চতর ডিগ্রি নেয়া একজন যুবক দুই থেকে তিন লাখ টাকা বেতনে চাকরি করেন। চট্টগ্রাম ইপিজেডসহ দেশ বিদেশের বিভিন্ন কারখানার কর্তৃপক্ষ বিশেষায়িত ডিগ্রিধারীদের জন্য অপেক্ষা করে। ঢাকায় বিজিএমইএ এই ধরনের বিশেষায়িত একটি বিশ্ববিদ্যালয় চালু করলেও চট্টগ্রামে এই প্রথম একটি বিশেষায়িত বিশ্ববিদ্যালয় চালু হতে যাচ্ছে। আগামী ফেব্রুয়ারি মাসের শেষ দিকে চট্টগ্রাম বিজিএমইএ ইউনিভার্সিটি অব ফ্যাশন এন্ড টেকনোলজির (সিবিইউএফটি) একাডেমিক কার্যক্রম শুরু হচ্ছে। প্রথম সেমিস্টারে প্রতি বিষয়ে ৩৫ জন করে চারটি বিষয়ে ১৪০ জন ছাত্রছাত্রী ভর্তি করা হবে।নগরীর খুলশীর ঝাউতলাস্থ বিজিএমইএ ভবনের পঞ্চম, নবম এবং দশম তলার ৩৭ হাজার বর্গফুটের ফ্লোরে বিশেষায়িত এই বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম শুরু হচ্ছে।
চট্টগ্রাম বিজিএমইএ ইউনিভার্সিটি অব ফ্যাশন এন্ড টেকনোলজির (সিবিইউএফটি) ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন চৌধুরী দৈনিক আজাদীকে বলেন, আসলে এটি এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যেটি অনেকটা অগোচরে ছিল। বিদেশ থেকে শত শত বিশেষজ্ঞ এনে আমরা কোটি কোটি ডলার পরিশোধ করেছি একসময়।
ঢাকায় বিজিএমইএ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর ফ্যাশন এন্ড টেকনোলজিতে আমরা দক্ষ জনবল পেতে থাকি। এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করে একজন যুবক কিংবা যুবতী এই চট্টগ্রামেই দুই থেকে তিন লাখ টাকা মাসিক বেতনে চাকরি করছেন। পাশ করার আগেই চাকরি পাচ্ছেন তারা। একদিনও বেকার থাকতে হয় না। আমরা বিষয়টি শুরু থেকে খুবই গুরুত্ব দিয়ে চেষ্টা করছিলাম। কিন্তু নানা ধরণের জটিলতায় বিশেষায়িত একটি বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রামে প্রতিষ্ঠা করতে পারছিলাম না।
মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন চৌধুরী বলেন, দেশের প্রধানতম রপ্তানিখাত তৈরি পোশাক শিল্পের জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি করতে চট্টগ্রাম বিজিএমইএ প্রায় ২০ বছর আগে গার্মেন্টস সংশ্লিষ্ট কিছু বিষয়ে ডিপ্লোমা কোর্স চালু করে। কিন্তু এক পর্যায়ে ডিপ্লোমা কোর্স দিয়ে চাহিদা সামাল দেয়া যাচ্ছিল না। তখন ২০১৩ সালে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে চালু করা হয় চট্টগ্রাম বিজিএমইএ ইনস্টিটিউট অব ফ্যাশন এন্ড টেকনোলজি (সিবিআইএফটি)। এই ইনস্টিটিউট থেকে গত ৯ বছরে কয়েকশ’ যুবক-যুবতী বিশেষায়িত ডিগ্রি নিয়েছেন যারা এখন চট্টগ্রামের শীর্ষস্থানীয় বিভিন্ন কারখানায় মোটা অংকের বেতনে চাকরি করছেন। কেউ কেউ চলে গেছেন চীনসহ নানা দেশে। এই ইনস্টিটিউট থেকে পাশ করা একজন ছাত্রছাত্রীও বেকার নেই বলেও মন্তব্য করেন নাসির উদ্দিন চৌধুরী।
ইনস্টিটিউটের সফলতার পর আমরা একটি বিশেষায়িত বিশ্ববিদ্যালয় করার উদ্যোগ নিই। বিশেষ করে ফ্যাশন ও টেকনোলজি নিয়ে উচ্চ শিক্ষার সুযোগ চট্টগ্রামের শিক্ষার্থীদের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে আমরা চট্টগ্রাম বিজিএমইএ ইনস্টিটিউট অব ফ্যাশন এন্ড টেকনোলজির (সিবিআইএফটি) পরিবর্তে চট্টগ্রাম বিজিএমইএ ইউনিভার্সিটি অব ফ্যাশন এন্ড টেকনোলজি (সিবিইউএফটি) চালু করার জন্য সরকারের কাছে অনুমোদনের আবেদন করি। কিন্তু এটি একটি জটিল প্রক্রিয়া। অবশেষে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্টদের আন্তরিকতায় নানা প্রক্রিয়া শেষে গত বছরের ২৪ আগস্ট দেশের ১০৬তম বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়টি অনুমোদন পায়। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের নিয়ন্ত্রণে একটি বেসরকারি বিশেষায়িত বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে চট্টগ্রাম বিজিএমইএ ইউনিভার্সিটি অব ফ্যাশন এন্ড টেকনোলজির (সিবিইউএফটি) কার্যক্রম পরিচালিত হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্ট্রি বোর্ডের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন চৌধুরী দৈনিক আজাদীকে আরো বলেন, ইতোমধ্যে আমরা ছাত্রছাত্রী ভর্তির প্রক্রিয়া শুরু করেছি। আগামী মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রম শুরু হবে। শুরুতে ২টি অনুষদের অধীনে ৪টি বিষয়ে বিএসসি অনার্স ডিগ্রি অর্জনের সুযোগ থাকবে। এরমধ্যে ক্লথিং ও ফ্যাশন টেকনোলজি অনুষদের অধীনে টেক্সটাইল এন্ড ক্লথিং টেকনোলজি এবং ফ্যাশন ডিজাইন এন্ড টেকনোলজি, ফ্যাশন ও এপারেল ডিজাইন অনুষদের অধীনে এপারেল মার্চেন্ডাইজিং এন্ড ম্যানেজমেন্ট এবং ফ্যাশন ডিজাইন বিষয়ে ডিগ্রি নেয়া যাবে। প্রতিটি বিষয়ে ৩৫জন করে শিক্ষার্থী ভর্তির অনুমোদন দেয়া হয়েছে। চারটি বিষয়ে সর্বমোট ১৪০ জন শিক্ষার্থী চলতি মাসের মধ্যে ভর্তি করা হবে। আগামী জুলাই থেকে টেক্সটাইল ম্যানুফ্যাকচারিং এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদের অধীনে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং এবং টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড ম্যানেজমেন্ট নামে আরও ২টি নতুন বিভাগ চালু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। দুয়েক বছরের সফলতার পর বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন থেকে আসন বাড়ানো হতে পারে বলে সংশ্লিষ্টরা আশ্বস্ত করেছেন।
তিনি বলেন, অত্যন্ত মনোরম এবং চমৎকার পরিবেশে গড়ে ওঠা বিশ্ববিদ্যালয়টিতে বিশ্বমানের শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ডিজিটাল ক্লাসরুম, অত্যাধুনিক সুবিধা সম্বলিত ল্যাবরেটরি, স্যুইং ল্যাব, টেঙটাইল টেস্টিং ল্যাব, ফ্যাশন ডিজাইনিং স্টুডিও, উচ্চ ক্ষমতার ফ্রি ইন্টারনেট, আন্তর্জাতিক জার্নাল সমৃদ্ধ লাইব্রেরি, বিষয়ভিত্তিক প্রয়োজনীয় মেশিনারিজ, প্রজেক্টর, মাল্টিমিডিয়া সুবিধাসহ শিক্ষার্থীদের দক্ষ মানবসম্পদে পরিণত করার প্রয়োজনীয় সবকিছু এই বিশ্ববিদ্যালয়ে রাখা হবে।
মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন চৌধুরী বলেন, দেশে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের কথা বলা হচ্ছে। এই বিপ্লবে দেশে অসংখ্য শিল্প কারখানা গড়ে উঠবে। চট্টগ্রামে বিদ্যমান তিনটি ইপিজেডের পাশাপাশি দেশের সবচেয়ে বড় শিল্পনগর হচ্ছে মীরসরাইয়ে। টানেল ঘিরে দক্ষিণ চট্টগ্রামে শিল্পায়নের দুয়ার খুলে যাচ্ছে। যেখানে হাজার হাজার দক্ষ মানবসম্পদের প্রয়োজন। কিন্তু এতদিন চট্টগ্রামে ক্লথিং এন্ড ফ্যাশন টেকনোলজি নিয়ে লেখাপড়া কিংবা উচ্চতর ডিগ্রি নেয়ার সুযোগ ছিল না। শিক্ষার্থীদের ছুটতে হতো ঢাকা কিংবা বিদেশে। যা অনেক ব্যয়বহুল এবং কষ্টসাধ্য। ফলে ইচ্ছে থাকলেও অনেকে এসব বিষয় নিয়ে লেখাপড়া করতে পারতো না। এখন থেকে চট্টগ্রামের আর কাউকে এসব বিষয়ে উচ্চতর এবং বিশ্বমানের ডিগ্রি নিতে অন্য কোথাও যেতে হবে না। চট্টগ্রামেই মিলবে বিশ্বমানের শিক্ষা।
এই বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা বা পরিচালনার পেছনে কারো কোনো বাণিজ্যিক উদ্দেশ্য নেই বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, শুধুমাত্র দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি করে দেশের সামগ্রিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখাই এই বিশ্ববিদ্যালয়ের লক্ষ্য। তিনি বলেন, এতে হাজার হাজার যুবক যুবতী উপকৃত হবে, উপকৃত হবে দেশের তৈরি পোশাক খাত। কোটি কোটি ডলার সাশ্রয় হবে। অর্জিত হবে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা। বহুমুখী লক্ষ্য সামনে নিয়ে চট্টগ্রাম বিজিএমইএ ইউনিভার্সিটি অব ফ্যাশন এন্ড টেকনোলজি (সিবিইউএফটি) কার্যক্রম পরিচালিত হবে বলেও ট্রাস্ট্রি বোর্ডের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন চৌধুরী মন্তব্য করেন।