ঘরে ঘরে পাহাড়ি ঝাড়ুফুলের কদর

সীতাকুণ্ড প্রতিনিধি | শুক্রবার , ৩০ ডিসেম্বর, ২০২২ at ৪:২০ পূর্বাহ্ণ

ঝাড়ুফুল। ঘরদোর পরিচ্ছন্ন রাখার অন্যতম অনুষঙ্গ। বাণিজ্যিক চাষাবাদ না হলেও পাহাড়ের জঙ্গলে প্রাকৃতিকভাবেই জন্ম নেয়া এই ফুলের রয়েছে বাণিজ্যিক সম্ভাবনা। স্থানীয় মানুষ তা সংগ্রহ করে বাজারে এনে বিক্রি করেন ব্যবসায়ীদের কাছে। ব্যবসায়ীরাও ঝাড়ু ফুলের ব্যবসায় দেখছেন লাভের মুখ। সময়ের সাথে সাথে বাড়ছে এই পেশায় যুক্ত মানুষের সংখ্যা।

সীতাকুণ্ডে পাহাড়ি ঝাড়ুফুলের কদর দেশজুড়ে রয়েছে। ইতিমধ্যে পাহাড় থেকে ঝাড়ু তৈরি করার জন্য ঝাড়ুফুল কাটা শুরু হয়েছে। গহীন পাহাড় থেকে এ ফুল সংগ্রহ করার আনন্দে মেতে উঠেছে ঝাড়ু ফুল সংগ্রহকারীরা। এ ফুল দিয়ে সুন্দর ও সহজভাবে ব্যবহারযোগ্য ঝাড়ু তৈরি হয় বলে দেশের বড় বড় শহরে রপ্তানি করা হচ্ছে।

উপজেলার সীতাকুণ্ড পৌরসদর, বাঁশবাড়িয়া, বাড়বকুণ্ড, মগপুকুর, সুলতানা মন্দির, ছোটকুমিরা, বড়কুমিরা, মাজার গেইট, জোড়আমতল, ফকিরহাট, বিশ্ববিদ্যালয় গেইট, বারআউলিয়া, শুকলাল হাট, সিরাজ ভুঁইয়ার রাস্তার মাথা, আনোয়ারা গেইটসহ বিভিন্ন স্থানে সরেজমিনে গিয়ে পাহাড়ি বাহারি ঝাড়ু ফুল শুকাতে দেখা গেছে। এ কাজে কর্মরত গরিব ও খেটেখাওয়া নারীপুরুষ সবাই ফুল শুকাতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। শীতে রোদের তেজ কম থাকায় এ ফুল শুকাতে সময় একটু বেশি নিলেও তাদের মুখে হাসির কমতি নেই। সংশ্লিষ্টরা জানান, ঝাড়ু ফুল সংগ্রহে তিনস্তরে লোক কাজ করে। পুরুষরা খুব ভোরে উঠে দা নিয়ে গহীন পাহাড়ের উদ্দেশ্যে রওনা হয়। তারা প্রত্যেকে ঘণ্টাখানেক এ ফুল সংগ্রহ করে। এক হাজার ফুল এক সঙ্গে আঁটি বেঁধে নিয়ে আসে লোকালয়ে। পরিবারের নারী সদস্যরা খোলাস্থানে ফুলগুলো রোদে শুকিয়ে ব্যবহারের উপযোগী করে। পরে ১০০টি ফুল নিয়ে আবার আঁটি করে বিক্রির উদ্দেশ্যে বাজারে নিয়ে যায়। ১০০টি ফুল বিশিষ্ট আঁটি ৭০ টাকা থেকে ৮০ টাকা দামে বিক্রি হয়। অনেক সময় পাহাড় থেকে ঝাড়ু ফুল সংগ্রহকারীরা নিজেরা না শুকিয়ে বাজারে পাইকারদের এজেন্টদের কাছে কাঁচা অবস্থায় বিক্রি করে দেয়। ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী, সিলেট, কুমিল্লা, ফেনী, কঙবাজারসহ বিভিন্ন বড় বড় শহর থেকে ঝাড়ুফুল পাইকাররা এসে তা কিনে নিয়ে যায়। পরে তারা প্লাস্টিক জাতীয় পদার্থ দিয়ে প্যাঁচিয়ে হাতল তৈরি করে এর উপর নানারকম কারুকাজ করে শহরের মানুষদের হাতে হাতে খুচরা দরে তুলে দেয়া হয়।

পাহাড়িদের সাথে কথা বলে জানা যায়, একমাত্র সৃষ্টিকর্তার অবদানে কাঁশফুলের মত গাছে এসব ফুল গাছ দেখা যায় পাহাড়ের টিলা থেকে টিলায়। পৌষ, মাঘ ও ফাল্গুন মাসে এ গাছের ফুল আসে যাকে ঝাড়ু ফুল বলা হয়। বিভিন্ন গরীব লোক পাহাড়ে গিয়ে এ ফুল সংগ্রহ করে। এতে বন বিভাগ থেকে কোনো বাধা দেওয়া হয় না। কাঁচা অবস্থায় ভারী বলে দিনে একবার (২ আটি) কিংবা ২ ভারের বেশি আনা যায় না। প্রতি ভারের আনা নেয়ায় খরচ পড়ে ৭শ থেকে ৮শ টাকা। বিশেষত মৌসুমী ব্যবসায়ীরা ১৮২০টি ঝাড়ু ফুলের কাঠি দিয়ে একটি আটি বাঁধেন। আর একেকটি আটি বিক্রি হয় ৭/৮ টাকায়। ব্যবসায়ীরা এগুলো কিনে প্রথমে শুকিয়ে থাকেন। পরে স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে ঢাকা ও দেশের অন্যান্য অঞ্চলের ব্যবসায়ীরা এসে প্রতি আটি ঝাড়ু ফুল ১০/১১ টাকা দরে কিনে জিপ বা ট্রাকের মাধ্যমে সমতলের বিভিন্ন জেলায় নিয়ে যান। ঝাড়ু ফুল ব্যবসার প্রসার দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিত্তবান ব্যবসায়ীরা এগিয়ে এলে এটি শিল্প আকারে রূপ নিতে পারে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবহদ্দারহাটে এক অফিস থেকে ৯টি ল্যাপটপ চুরি
পরবর্তী নিবন্ধচকরিয়ায় ডেঙ্গু আক্রান্ত যুবকের মৃত্যু