দেশের প্রথম মেট্রোরেল আগামীকাল বুধবার থেকে যাত্রা শুরু করবে। কাল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মেট্রোরেল উদ্বোধন করবেন। উদ্বোধনের দিন তিনি মেট্রোরেলের প্রথম যাত্রী হবেন। প্রথম ধাপে চলবে উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ১১ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার পথ। এই পথে একবার চলতে মেট্রোরেল সময় নেবে ২০ মিনিট। তবে পূর্ণমাত্রায় চালু হলে এই সময় কমে আসবে ১৬–১৭ মিনিটে।
মেট্রোরেলে প্রতিদিন যাতায়াত করবেন হাজারো যাত্রী। প্রতিটি স্টেশনে এটিএম বুথ, ইলেকট্রিক সরঞ্জাম ও দোকান থাকবে, যে কারণে প্রত্যেকটি স্টেশনে পুলিশ ফাঁড়ির প্রস্তাব করেছে ঢাকা ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিটের (ডিএমটিসিএল) কর্তৃপক্ষ।
ঢাকার মেট্রোরেলের প্রতিটি স্টেশনে দুই পাড়ে থাকছে দুটো করে চারটি ফটক। এর প্রতিটিতে দুজন করে মোট আটজন পুলিশ সদস্য নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করবেন, তাদের তদারকে থাকবেন একজন কর্মকর্তা। তবে দুই প্রান্তের দুই স্টেশনে পুলিশ থাকবে বেশি।
মেট্রোরেলের সার্বিক নিরাপত্তায় পুলিশের বিশেষ ইউনিট (ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট বা এমআরটি পুলিশ ইউনিট) হওয়ার কথা থাকলেও এখনও তা না হওয়ায় নিরাপত্তার দায়িত্বটি স্থানীয় থানা পুলিশই পালন করবে, সঙ্গে থাকবে রিজার্ভ পুলিশ। এদিকে দেশের প্রথম মেট্রোরেলে নারীদের নির্বিঘ্ন চলাচলে প্রতিটি ট্রেনে থাকছে আলাদা কোচ। তবে চাইলে তারা অন্য কোচেও যাতায়াত করতে পারবেন। খবর বিডিনিউজের। ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ এন ছিদ্দিক বলেন, মেট্রোরেলের সঙ্গে যাত্রীদের অভ্যস্ততা তৈরি করা এবং আন্তর্জাতিক মান বিবেচনা করে প্রথম দিকে ট্রেনের চলাচল সময়টা কম এবং ট্রেনের
স্টেশনে দাঁড়িয়ে থাকার সময় বেশি থাকবে। প্রথম দিকে চার মিনিট পরপর ট্রেন চালালে জনসাধারণ এটার সাথে অভ্যস্ত হতে বা সেভাবে পরিচিত হতে পারবেন না। আবার আমরা দাঁড়ানোর সময়টাকে হয়ত এক সময় ৩০ সেকেন্ডে নিয়ে আসব। কিন্তু প্রথম দিকে যদি আপনি এক–দুই মিনিট না দেন, তাহলে যাত্রীরা স্বাচ্ছন্দ্যে নামবেন–উঠবেন, এই কাজগুলো হবে না। এজন্য প্রথম দিকে আমরা বেশি সময় দাঁড়াব।
উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত মেট্রোরেলের ৯টি স্টেশন থাকছে, যার মধ্যে আছে উত্তরা উত্তর, উত্তরা সেন্টার, উত্তরা দক্ষিণ, পল্লবী, মিরপুর ১১, মিরপুর ১০, কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া ও আগারগাঁও।
মেট্রোরেল নির্মাণ ও ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সর্বশেষ প্রযুক্তিতে তৈরি মেট্রোরেল সর্বোচ্চ ১০০ কিলোমিটার গতিতে ছুটবে। ভাড়া প্রতি কিলোমিটার ৫ টাকা, তবে সর্বনিম্ন্ন ভাড়া গুণতে হবে ২০ টাকা। শুরুতে টিকেট কেবল স্টেশনের কাউন্টার থেকে এমআরটি পাস ইস্যু করা হবে এবং সেটা রিচার্জ করা যাবে। পরে মোবাইল ব্যাংকিং সার্ভিস দিয়েও এমআরটি পাসের টাকা রিচার্জ করা সম্ভব হবে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের উত্তরা, মিরপুর ও তেজগাঁও বিভাগের উপর দিয়ে চলাচল করবে মেট্রোরেল। এসব বিভাগের পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, থানা পুলিশ ও রিজার্ভ পুলিশ দিয়ে সার্বিক নিরাপত্তা দেওয়া হবে।
উদ্বোধনের আগে সরেজমিনে দেখা যায়, মেট্রোরেলের স্টেশনগুলোতে নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছেন স্থানীয় ও রিজার্ভ পুলিশ সদস্যরা। প্রতি স্টেশনে ৮ জন সদস্য দেখা গেলেও উত্তরা নর্থ ও আগারগাঁও স্টেশনে ২০ জন করে পুলিশ সদস্য নিয়োজিত।
আগামীকাল উদ্বোধন হওয়ার পর নিরাপত্তায় আরও জনবল দরকার হলে তা দেওয়া হবে বলে জানান মিরপুর বিভাগের পুলিশের উপকমিশনার মো. জসিম উদ্দিন মোল্লা। এদিকে মেট্রোরেলের নিরাপত্তায় ৩৫৭ সদস্যের এমআরটি পুলিশ রাখার প্রস্তাব থাকলেও এখনও তা গঠিত হয়নি।
ডিএমটিসিএল ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ এন ছিদ্দিক বলেন, টিকেট বিক্রি বা টেকনিক্যাল বিষয়গুলো তো কর্তৃপক্ষই দেখবে। নিরাপত্তার বিষয়টি পুলিশ দেখবে। প্রতিটি স্টেশনে একটি কন্ট্রোল রুম থাকবে। মেট্রোরেলের পক্ষ থেকে থাকবে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটও। তবে মেট্রোরেলের নিরাপত্তার দায়িত্বটি বেসরকারি সংস্থাকে দেওয়ার পরামর্শও এসেছে।
বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক শামসুল হক বলেছিলেন, মেট্রোরেলের নিরাপত্তা ব্যবস্থায় প্রযুক্তিগত অনেক বিষয় থাকায় বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় নিরাপত্তা নিশ্চিত করা গেলে জবাবদিহি ও টেকসই নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়ে শঙ্কা কম থাকত।
নারীদের জন্য আলাদা কোচ : ডিএমটিসিএল ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ এন ছিদ্দিক জানান, শুরুতে ছয় বগির ১০টি ট্রেন প্রস্তুত রাখা হচ্ছে। ব্যাকআপ হিসাবে থাকছে আরও দুটি ট্রেন। এসব ট্রেনের একটি কোচ কেবল নারীদের জন্য সংরক্ষিত থাকবে। এই কোচের সর্বোচ্চ ধারণ ক্ষমতা ৩৯০ জন। চাইলে বাকি পাঁচ বগিতেও নারীরা উঠতে পারবেন।
স্টেশনগুলোতে নারীদের জন্য থাকছে পৃথক টয়লেটের ব্যবস্থা। সেখানে শিশুদের ডায়াপার পরিবর্তনের বিশেষ ব্যবস্থাও থাকছে। আর গর্ভবতী নারী ও বয়স্ক যাত্রীদের জন্য বগিতে আসন সংরক্ষিত থাকবে।