গত রোববার শেষ হয়েছে বিশ্বকাপের ফাইনাল। সেই থেকে চলা আর্জেন্টাইনদের বিশ্বকাপ জয়ের উম্মাদনা যেন শেষই হতে চাইছে না। আর হবেই বা কেমনে? স্বপ্ন ছোঁয়ার খুব কাছে গিয়েও না পারার কষ্ট অনেকবারই সঙ্গী হয়েছে আর্জেন্টাইনদের। সে সব পেছনে ফেলে অনেক চড়াই-উতরাই পেরিয়ে অবশেষে ৩৬ বছরের অপেক্ষার অবসান হয়েছে কাতার বিশ্বকাপে। বিশ্বকাপের সোনালি ট্রফি উঠেছে ফুটবলের রাজপুত্র লিওনেল মেসির হাতে। সে ট্রফি নিয়ে দেশে ফিরেছেন মেসি-মার্টিনেজ-ডি মারিয়ারা। আর উৎসবমুখর পরিবেশে তাদেরকে বীরের মতো স্বাগত জানিয়েছে লাখো মানুষ।
কাতারের লুসাইল স্টেডিয়ামে গত রোববার শ্বাসরুদ্ধকর ফাইনালে ফ্রান্সকে হারিয়ে বিশ্বকাপ জয়ের পরপরই আর্জেন্টিনায় শুরু হয়ে গেছে বাঁধভাঙা উদযাপন। আর সে উৎসব চলছে দেশটির প্রতিটি অলিগলিতে। তিন যুগের প্রতীক্ষার পর ঘরে এসেছে বিশ্বকাপ। ফলে এমন উৎসব তো হবেই। এর আগে সেই ১৯৮৬ সালে দিয়েগো ম্যারাডোনার নৈপুণ্যে বিশ্ব জয়ের স্বাদ পেয়েছিল দেশটির মানুষ। ৩৬ বছরের আক্ষেপ ঘুছানোর মুহূর্তটা তো তেমনই হওয়া স্বাভাবিক। যুগের পর যুগ অপেক্ষার পর তারা আবারও হাসছে যেন মন খুলে। তাদের এই আনন্দের উপলক্ষ এনে দেওয়া নায়কদের এক নজর দেখার ইচ্ছা সবার মনে।
সোনায় মোড়ানো ট্রফিটা কাছ থেকে বীরদের হাতে দেখার সুযোগ বোধ হয় হারাতে চাননি কেউ। কখন বিশ্বকাপ নিয়ে দেশে পৌঁছাবেন চ্যাম্পিয়নরা সে জন্য সোমবার রাতভর চলে অপেক্ষা। প্রায় ১ লাখ ৭৬ হাজার মানুষ মেসিদের বহনকারী বিমানটির আগমন ‘ফ্লাইট ট্র্যাকিংয়ের’ মাধ্যমে খবর রাখেন। রাষ্ট্রীয় বিমানটি দোহা থেকে রওয়ানা করে যাত্রা বিরতি নেয় ইতালির রোমে। স্থানীয় সময় রাত আড়াইটার দিকে রাজধানী বুয়েন্স আয়ার্সের বিমানবন্দরে অবতরণ করে বিমানটি। এরপর অপেক্ষমান জনতার আনন্দ আর উল্লাস দেখে কে? বিমান থেকে নেমেই আগে থেকে প্রস্তুত করে রাখা ছাদখোলা বাসে চড়ে আর্জেন্টিনা দল। যাতে লেখা ছিল চ্যাম্পিয়ন এবং থ্রি স্টার। সমর্থকদের ভিড়ের মধ্য দিয়ে ধীরে ধীরে এগিয়ে যায় বাসটি। ভিড়ের কারণে তিন কিলোমিটার পথ যেতে সময় লেগেছে ১ ঘণ্টার বেশি।
বিশ্বজয়ী ফুটবলারদের সবার গলায় সোনার মেডেল। একটু পরপর বিশ্বকাপ ট্রফিটা উঁচিয়ে ধরেন একেকজন। উল্লাসে ফেটে পড়ে চারপাশ। সে সময় জ্বলছিল হাজার হাজার মোবাইলের ফ্ল্যাশ লাইট। উড়ছিল পতাকা। যেন অন্যরকম এক জগত। শুধু তাই নয় এসময় আতশবাজির আলোয় আলোকিত হচ্ছিল চারদিক। ড্রামের তালে তালে গান গেয়ে পরিবেশটা মুখরিত করে রাখে হাজারো মানুষ।
বিমানবন্দরের পাশেই আর্জেন্টিনার ফুটবল অ্যাসোসিয়েশ কর্তৃক পূর্ব নির্ধারিত হোটেলে কয়েক ঘণ্টা কাটানোর পর শুরু হয় আসল শোভাযাত্রা। এরপর দুপুরের দিকে শহরের কেন্দ্রে বিশাল ওবেলিসো স্মৃতিস্তম্ভে যায় মেসি-ডি মারিয়ারা। যেখানে লাখো মানুষ জড়ো হয়েছিলেন আগে থেকেই। গতকাল মঙ্গলবার দেশটিতে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়। যাতে মানুষ আনন্দ করতে পারে। লাখো জনতা বিশ্বজয়ী বীরদের বরণ করতে কোনো ধরনের কার্পণ্য করেনি। আগের রাত থেকেই হাজার হাজার মানুষ অপেক্ষা করছিল সেই ওবেলিসো স্মৃতিস্তম্ভের আশেপাশে। হোটেল থেকে মেসিদের বহন করা ছাদ খোলা বাসটি যখন সে স্মৃতিস্তম্ভে এসে পৌঁছায় তখন অন্যরকম এক আবহের সৃষ্টি হয়। যা কখনোই কল্পনাও করতে পারেনি মেসিরা। অবশ্য দেশে ফেরার পর অবস্থা কেমন হতে পারে সেটা আগে থেকে কিছুটা হলেও আঁচ করতে পারার কথা তাদের। দিনভর চলেছে সে আনন্দ উৎসব।
১৯৮৬ সালের পর এবং এবারের আগে আরও দুইবার ফাইনাল খেলেছিল আর্জেন্টিনা। দুইবার খুব কাছে গিয়ে তাদের হৃদয় ভাঙে। ১৯৯০ সালের পর ২০১৪ আসরে তারা শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে হেরে যায় জার্মানদের কাছে। দুইবারই ১-০ গোলে। পুরনো সব হতাশা মুছে গত রোববার কাতার বিশ্বকাপের ফাইনালে বিশ্বকাপ জিতে নেয় আর্জেন্টিনা।