পাহাড়ে নারীদের স্বাবলম্বী করতে নিজ উদ্যোগে এগিয়ে এসেছেন এক শিক্ষক। পাহাড়ের প্রত্যন্ত গ্রামে গ্রামে থামি, পিনন বুননের জন্য বিনামূল্যে উপকরণ, সেলাই মেশিন দিচ্ছেন তিনি। এরই মধ্যে অনেকেই সফল হয়েছেন। সহায়তা পেয়েছে ঘুরে দাঁড়াচ্ছেন অন্তত দেড়শ নারী। পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি নারীদের একটা অংশ এ সব কাজের সাথে জড়িত। কিন্তু পুঁজির অভাবে অনেকেই উদ্যোক্তা হয়ে উঠতে পারছে না। থামি-পিননসহ বিভিন্ন ঐতিহ্যবাহী পোশাক প্রস্তুত করতে জানলেও পুঁজি বা উপকরণের অভাবে তারা তা প্রস্তুত করতে পারছে না। এতে অনেকের উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন ফিকে হয়ে যায়। সে সব পাহাড়ি নারীদের পাশে দাঁড়িয়েছেন গাজীপুর সরকারি মহিলা কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ প্রফেসর ফেরদৌসি পারভীন। তাঁর বাড়ি ঢাকার উত্তরায়।
তিনি পাহাড়ের গ্রামে গ্রামে ঘুরে এসব অসহায় নারীদের নিজ উদ্যোগে থামি-পিনন বুননের জন্য প্রয়োজনীয় সুতা, সেলাই মেশিন তুলে দিচ্ছেন। একই সাথে মোড়া বানানোর জন্যও উপকরণ তুলে দিচ্ছেন তিনি। উপকরণ পেয়ে অনেকেই এখন উদ্যোক্তা হয়ে উঠেছেন। এরই মধ্যে অনেকে থামি বিক্রি করে ৩০ থেকে ৪০ হাজার পর্যন্ত আয় করেছে।
খাগড়াছড়ি সদর উপজেলার চ্যালাছড়া গ্রামের রূপা ত্রিপুরা বলেন, আমাকে প্রাথমিকভাবে ৫ হাজার টাকা দিয়েছেন ম্যাডাম। এ সুতা দিয়ে আমি থামি-পিনন বানিয়ে ইতোমধ্যে ১৫ হাজার টাকায় বিক্রি করেছি। সব মিলিয়ে ৪০ হাজার টাকার মতো বিক্রি করতে পারব। একই গ্রামের কন্যা রানী ত্রিপুরা বলেন, অর্থাভাবে আমরা সুতা কিনতে না পারায় থামি, পিনন বুনন করতে পারিনি।
তবে ম্যাডাম আমাদের সুতা দিয়ে সহযোগিতা করেছে। থামি বিক্রি করে এর মধ্যে আমরা ৩৫ হাজার টাকা পণ্য বিক্রি করেছি। আমাদের ব্যবসা সফল হয়েছে। সংসারের খরচ মেটাতে পারছি। প্রথম পর্যায়ে নারীদের সাফল্যের পর নতুন করে আরো ৫০ জনকে সুতা ও মোড়া তৈরির উপকরণ দিয়েছেন তিনি। এসব উপকরণ পেয়ে খুশি প্রান্তিক এলাকার এসব নারী।
খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা পৌরসভার কাজীপাড়ার বাসিন্দা মরিয়ম বিবি স্বামীকে হারিয়েছেন বেশ ক’বছর আগে। ছেলেরা বিয়ে করে নিজের মতো করে বসবাস করছেন। স্বামীর ঘরেই একাকীত্ব জীবন কাটাচ্ছেন এ বিধবা নারী। স্বামীর মৃত্যুর পরে তার জীবনে নেমে আসে অমানিশার ঘোর অন্ধকার। মোড়া তৈরি করে নিজের রুটি রুজির সংস্থান করেন। মরিয়ম বিবির মতোই মোড়া বিক্রি করে সংসার চলে বিধবা বিবি ফাতেমা ও আনোয়ারা বেগমের। কিন্তু অর্থ সঙ্কটে মোড়া তৈরির উপকরণ কিনতে হিমশিম খেতে হয় তাদেরকে। খাগড়াছড়ির সুবিধাবঞ্চিত এসব বিধবা, স্বামী পরিত্যক্তা ও অসহায় কর্মজীবী নারীদের প্রতি মানবিক সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন এই শিক্ষক। সহায়তার অংশ হিসেবে সুবিধাবঞ্চিত নারীদের প্রতিজনকে দশ জোড়া মোড়া তৈরির উপকরণ হিসেবে প্লাস্টিকের বেত (রগ) ও টায়ার প্রদান করেছেন।
মোড়া তৈরির উপকরণ পেয়ে স্বস্তির হাসি হেসে মরিয়ম বিবি বলেন, স্বামীর মৃত্যুর পরে মোড়া তৈরি করে বিক্রি করেই নিজের ভরণ-পোষণসহ সংসারের হাল ধরেছেন। কিন্তু আর্থিক সংকটে মোড়া তৈরির উপকরণ কিনতে পারেন না। তিনি বলেন, ম্যাডাম দশ জোড়া মোড় তৈরির উপকরণ দিয়েছেন। যার ফলে আমার একটা পুঁজি তৈরি হলো।
পাহাড়ে মানুষের প্রতি ভালোবাসা থেকে সম্পূর্ণ নিজ উদ্যোগে এসব নারীদের পাশে দাঁড়িয়েছেন বলে জানান প্রফেসর ফেরদৌসী পারভীন। ভবিষ্যতে এ কার্যক্রম অব্যাহত রাখা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, আমি চাই নারীরা সফল হোক। নিজেদের পায়ে দাঁড়াক। তাই পাহাড়ি নারীদের পাশে দাঁড়িয়েছি। এই নিয়ে শতাধিক নারীকে সাবলম্বী করেছি। ভবিষ্যতেও আমার সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে।