চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) মালিকানাধীন ১০০ কোটি টাকা দামের ৮৬ কাঠা ভূমি অবশেষে উদ্ধার করা হয়েছে। নগরীর হালিশহর সল্টগোলা এলাকার বিমানবন্দর সড়কের পাশের মূল্যবান এই ভূমি তিন যুগের বেশি সময় ধরে স্থানীয় একটি প্রভাবশালী চক্র দখল করে রেখেছিল। জায়গাটিতে তিনতলা এবং দোতলা ভবনের পাশাপাশি অফিস, দোকান ও গ্যারেজ মিলে শতাধিক ঘর তৈরি করা হয়েছিল। দীর্ঘদিন ধরে উচ্ছেদের চেষ্টা করা হলেও মামলাসহ নানা জটিলতায় জায়গাটি অবৈধ দখলদারদের নিয়ন্ত্রণে ছিল। গতকাল দিনভর অভিযান চালিয়ে ভবনগুলো গুঁড়িয়ে দিয়ে ৮৬ কাঠা জায়গা দখলমুক্ত করে সিডিএ।
আজ মঙ্গলবারও উচ্ছেদ অভিযান চলবে। সিডিএ সূত্র জানায়, হালিশহর সল্টগোলা এলাকায় সল্টগোলা শপিং কমপ্লেঙের বিপরীত পাশে বিমানবন্দর সড়কের লাগোয়া ৮৬ কাঠা জায়গা ১৯৬৬ সালে অধিগ্রহণ করে সিডিএ। সল্টগোলা পতেঙ্গা বাজার রাস্তার জন্য এই ভূমি হুকুম দখল করা হয়েছিল। দীর্ঘদিন এই ভূমি নিজেদের মতো করে ব্যবহার করলেও ১৯৮৫ সালে স্থানীয় প্রভাবশালী একটি গোষ্ঠী জায়গাটি অস্থায়ী বরাদ্দ চেয়ে সিডিএতে আবেদন করে।
সিডিএ নির্দিষ্ট ফি’র বিনিময়ে উক্ত ভূমি বরাদ্দ দেয়। বরাদ্দ গ্রহীতাদের টাকা জমা দেয়ার মাধ্যমে জায়গার দখল বুঝে নেয়ার নির্দেশনা প্রদান করা হয়। কিন্তু আবেদনকারীরা টাকা জমা না দিয়ে জায়গাটি দখল করে নেয়। পরে ওই জায়গায় তিনতলা ও দোতলা ভবন নির্মাণ করা হয়। একই সাথে ছোট ছোট অনেকগুলো অফিস এবং দোকান নির্মাণ করে। এছাড়া পাথর ও বালি জমা করে বিক্রি করা হয়। তৈরি করা হয় ট্যাংক লরিসহ ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান রাখার গ্যারেজ।
সিডিএ বিভিন্ন সময় জায়গাটির অবৈধ দখল ছেড়ে দেয়ার জন্য তাগাদা দিলেও প্রভাবশালী চক্রটি সাড়া দেয়নি। সিডিএ ২০০৪ সালে উচ্ছেদ মামলা দায়ের করে। ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের এই উচ্ছেদ মামলা বছরের পর বছর ধরে চলে। হাই কোর্ট পর্যন্ত গড়ায়। হাই কোর্ট অবৈধ দখলদারদের আবেদন খারিজ করে দিলে সিডিএ গতকাল উচ্ছেদ অভিযান শুরু করে। বিপুল সংখ্যক পুলিশ নিয়ে গতকাল সকাল থেকে সিডিএ স্থানটিতে অভিযান চালায়। এ সময় ভবনগুলো গুঁড়িয়ে দেয়া হয়। ভেঙে দেয়া হয় ছোট ছোট অফিস ও দোকান। শতাধিক ঘর উচ্ছেদ করে ১শ কোটি টাকার ৮৬ কাঠা জায়গা দখলমুক্ত করা হয়।
সিডিএর শীর্ষ একজন কর্মকর্তা জানান, দীর্ঘদিন ধরে চেষ্টা করেও স্থানীয় একটি কন্টেনার ইয়ার্ডের মালিকদের দখলে থাকা জায়গাটি উদ্ধার করা সম্ভব হচ্ছিল না। এছাক ব্রাদার্স কন্টেনার ডিপোতে চলাচলকারী কন্টেনার ট্রেইলর ও কাভার্ড ভ্যানের গ্যারেজ গড়ে তোলা হয়েছিল ওই জায়গায়। দীর্ঘদিন ধরে জায়গাটি তারা ব্যবহার করলেও এক টাকা রাজস্ব দেয়নি সিডিএকে। সিডিএ তাদের দফায় দফায় তাগাদা দিয়েছে। কিন্তু প্রভাবশালী চক্রটি মূল্যবান এই ভূমি অবৈধভাবে দখল করে নিজেদের ব্যবসা পরিচালনা করেছে।
তিনি জানান, উচ্ছেদ অভিযান গতকাল পুরোপুরি শেষ করা সম্ভব হয়নি। আজ সকাল থেকে আবারো অভিযান শুরু হবে। উচ্ছেদ অভিযানে নেতৃত্ব দেন সিডিএর স্পেশাল মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট তাহমিনা আফরোজ চৌধুরী।
অভিযানকালে উপস্থিত ছিলেন সিডিএর নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ মঞ্জুর হাসান, প্রকৌশলী মোহাম্মদ ইলিয়াস আক্তার, মোহাম্মদ ওসমান, ভ্যালুয়েশন আফিসার মোহাম্মদ আলমগীর খান ও ফিল্ড অফিসার মোহাম্মদ নাসির খান।