বিশ্বকাপের ফাইনাল বলে কথা! বিশ্বের কোটি কোটি ফুটবল ভক্তের দ্বিগুণ চোখ গভীর মনোযোগ আর উত্তেজনায় দেখে ফাইনাল খেলা। কিন্তু বেশিরভাগ সময় ফাইনাল দেখে দর্শক তৃপ্ত হতে পারে না। কারণ, বেশিরভাগ সময় ফাইনাল খেলা অনেকটা একতরফা হয়ে থাকে।
প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ বা স্নায়ুক্ষয়ী বিশ্বকাপ ফাইনাল বিশ্ব কমই দেখেছে। বিশ্বকাপের ফাইনাল মানে ফুটবলের সব রং, রস, রূপ পরিপূর্ণরূপে আস্বাদন করা। বিশ্বকাপের ফাইনাল মানে বিশ্বব্যাপী তৃপ্তি। কিন্তু প্রায় সময় সে রকম হয় না। গতকালের ফাইনালেরও একই পরিণতি হতে যাচ্ছিল। পরাক্রমশালী ফ্রান্স আর অপ্রতিরোধ্য আর্জেন্টিনার মধ্যে ফাইনালটা বিস্ফোরক হবে, তেমন অনুমান করেছিল সবাই। কিন্তু অন্তত ম্যাচের ৮০ মিনিট তেমনটি দেখা যায়নি। খেলার ৮০ মিনিট পর্যন্ত ২-০ গোলে এগিয়ে ছিল আর্জেন্টিনা। ম্যাচের বাকি মাত্র ১০ মিনিটের মতো। মেসিরা যেন বিশ্বকাপ জয়ের উৎসব করতে প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। কিন্তু ফুটবলের সেরা রূপটা দেখা গেল এর পরেই। মাত্র দুই মিনিটের ভেল্কিতে সবকিছু উলট পালট করে দিলেন কিলিয়ান এমবাপে নামে এক গতি মানব। এবারের বিশ্বকাপ ফাইনালের সব রোমাঞ্চ তখন থেকে শুরু।
কে জানত ম্যাচের বাকি সময়ে প্রতিটা মুহূর্ত জড়িয়ে থাকবে আনন্দ, উত্তেজনা, হৃদকম্পন আর অনিশ্চয়তা! কথায় বলে, সকালের সূর্য দেখে অনুমান করা যায় দিনটা কেমন যাবে। গতকালের ফাইনালে যেমন প্রথমার্ধ দেখে সবাই অনুমান করেছিল সহজ জয়ে বিশ্বকাপ জিতে নিচ্ছে আর্জেন্টিনা। কিন্তু ফুটবলের আসল চেহারাটা যে তখনো দেখার বাকি। ফটুবলের আসল চরিত্রটা তখনো ফুটে উঠেনি। এরপর ধীরে ধীরে সবকিছু প্রকাশিত হচ্ছিল। আর শেষটা হলো হৃদয় ভাঙা টাইব্রেকারে।
প্রথমার্ধে দুই গোলে এগিয়ে ছিল আর্জেন্টিনা। দ্বিতীয়ার্ধের শেষ দশ মিনিটের মধ্যে দুই মিনিটের ঝড়ে লণ্ডভণ্ড আর্জেন্টিনার স্বপ্ন। নির্ধারিত ৯০ মিনিটের নাটকীয়তা শেষে এল অতিরিক্ত ৩০ মিনিটের খেলা। সেখানে প্রথমার্ধে কেউই গোল করতে পারেনি। দ্বিতীয়ার্ধে এগিয়ে গেল আর্র্জন্টিনা। কিন্তু এবার দুই মিনিট বাকি থাকতে আবার ফ্রান্সের সমতা। লড়াইটা যতটা না আর্জেন্টিনা ও ফ্রান্সের মধ্যে তার চেয়ে বেশি ছিল মেসি ও এমবাপের মধ্যে। এই দুই ক্লাব বন্ধু গতকাল ছিল একে অপরের শত্রু। মেসি করলেন দুই গোল, যার একটি পেনাল্টি থেকে। এমবাপে করলেন হ্যাটট্রিক। তা-ও ১৯৬৬ সালের পর কোনো ফাইনালে। এমবাপের দুটি গোল পেনাল্টি থেকে।
১২০ মিনিটেও নিষ্পত্তি হলো না ম্যাচ। এরপর ভাগ্য পরীক্ষা; হার্টবিট বাড়িয়ে দেওয়া টাইব্রেকার। যেখানে আবার হিরো আর্জেন্টিনার গোলরক্ষক মার্তিনেস। তিনি রুখে দিলেন একটি শট। আর্জেন্টিনার কোনো খেলোয়াড়ও শট মিস করেননি। টাইব্রেকারে স্নায়ু শক্ত রাখতে পারাটই আসল কাজ। কিন্তু সে কাজটা করতে পারেননি ফ্রান্সের কোমেন ও থুসুমেনি। ফলে রং বদলানো কাতার বিশ্বকাপের ফাইনাল ম্যাচটি নিষ্পত্তি হলো টাইব্রেকারে। আর তাতেই সোনালি ট্রফি পেল আর্জেন্টিনা। বিশ্বকাপের ইতিহাসে নিঃসন্দেহে এটি সেরা ফাইনাল। এমন ফাইনালের আশাই করেন ফুটবলপ্রেমীরা।