নতুন উদ্দীপনা, স্বপ্ন সোনার বাংলার

শহীদ মিনারে জনতার ঢল বিজয় দিবস উদযাপন

আজাদী প্রতিবেদন | রবিবার , ১৮ ডিসেম্বর, ২০২২ at ৫:৪০ পূর্বাহ্ণ

বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস আর বিনম্র শ্রদ্ধায় স্বাধীনতার জন্য জীবনদানকারী বীর শহীদদের সম্মান জানিয়েছে বীর প্রসবিনী চট্টগ্রাম। রাজনৈতিক বিভেদের দেয়াল ভেঙে আবারো বাঙালি জেগেছিল প্রাণের তাগিদে; নতুন উদ্দীপনায় অবগাহন করে প্রকৃত অর্থেই এ দেশকে ‘সোনার বাংলা’ করে গড়ে তোলার শপথে বলীয়ান হতে। তাদের কারো হাতে ছিল লাল সবুজের পতাকা, কারো পতাকায় লাল বৃত্তটির মাঝখানে উঁকি দিচ্ছে বাংলাদেশের সোনালি মানচিত্র। কেউ চলেছে মিছিলযোগে, কেউবা দল বেঁধে। একাকীও এসেছে কেউ কেউ। কারো হাতে পুষ্পার্ঘ্য, কেউবা বজ্রমুষ্ঠি ঊর্ধ্বে তুলে স্লোগানে স্লোগানে মৃত্যুপরোয়ানা জারি করছে অবশিষ্ট যুদ্ধাপরাধীদের।

গন্তব্য তাদের এক; জনসমুদ্র উপচে পড়ছে শহীদ মিনারে। ফুলে ফুলে ছেয়ে গেছে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারসহ প্রতিটি স্মৃতিসৌধ। ভোরের আলো ফুটবার আগেই জনতার ঢল নামে, শ্রদ্ধা প্রদর্শনের গর্বিত অংশীদার হতে। আলো বাড়ে, পাল্লা দিয়ে জনতার মিছিল মিউনিসিপাল মডেল হাই স্কুলে নির্মিত অস্থায়ী শহীদ মিনার হতে রাইফেল ক্লাব, নিউ মার্কেট পেরিয়ে দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হতে থাকে। কারো মাঝে ক্লান্তি নেই, দৈনন্দিন ব্যস্ততা নেই। নগরীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা মানুষের স্রোত যেন মিশে গেছে একই মোহনায়। বিজয়ের দিনটায় ব্যস্ততাকে ছুটি দিয়ে সবাই ছুটেছে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাতে।

নয় মাসের ত্যাগ, শ্রম রক্ত আর ঘামে ভেজা আমাদের স্বাধীনতা। আমরা দাম দিয়ে কিনেছি এ বাংলা, কারো দানে পাইনি। শহীদদের শ্রদ্ধায় স্মরণ করার পাশাপাশি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, আলোকচিত্র প্রদর্শন, কুচকাওয়াজ, আলোচনা সভা, বিজয় শোভাযাত্রাসহ প্রতি বছরের মতো নানা আয়োজন চলেছে দিনটি ঘিরে।

বিজয়ের বার্তা দিয়ে প্রথম সূর্যোদয়ের পর নগরীর কোর্ট হিলে ৩১ বার তোপধ্বনি দেওয়া হয়। সকাল ৮টায় নগর পুলিশের একটি চৌকস দলের গার্ড অব অনারের মধ্য দিয়ে শ্রদ্ধা জানানোর আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। বিজয় দিবস উপলক্ষে চট্টগ্রামের সব সরকারি-বেসরকারি ভবনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়েছে। এছাড়া বর্ণিল আলোকসজ্জাও করা হয়েছে বিভিন্ন সরকারি ভবনে।

পুলিশ-র‌্যাবের কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে বেলা ১২টা পর্যন্ত শহীদ মিনারে চলে শ্রদ্ধা জানানো। সকালে শহীদ বেদিতে প্রথম শ্রদ্ধা জানান চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী। সঙ্গে ছিলেন কাউন্সিলর ও চসিকের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। মুক্তিযোদ্ধা সংসদ চট্টগ্রাম জেলা কমান্ডার মোজাফফর আহমেদের নেতৃত্বে বীর মুক্তিযোদ্ধারা ফুল দেন।

চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার আশরাফ উদ্দিন, সিএমপি কমিশনার কৃষ্ণপদ রায়, পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি আনোয়ার হোসেন, জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান, পুলিশ সুপার এস এম শফিউল্লাহসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। এরপর ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীনের নেতৃত্বে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগ ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানায়। শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে নগরীর থিয়েটার ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে নগর আওয়ামী লীগের উদ্যোগে বিজয় দিবসের আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।

চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপি সকালে নাসিমন ভবনের দলীয় কার্যালয় থেকে বিজয় শোভাযাত্রা নিয়ে শহীদ মিনারে গিয়ে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে। নগর বিএনপির সদস্য সচিব আবুল হাশেম বক্কর এই কর্মসূচিতে নেতৃত্ব দেন।

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি চট্টগ্রাম জেলা শাখার সভাপতি অশোক সাহার নেতৃত্বে নেতাকর্মীরা লাল পতাকার মিছিল নিয়ে শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানান। এছাড়া ওয়ার্কার্স পার্টি, জাতীয় পার্টি, জাসদ, বাসদ, ন্যাপসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়।

এদিকে ছাত্রলীগ, ছাত্র ইউনিয়ন, ছাত্র মৈত্রী, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টসহ বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকেও ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়। উদীচী, বোধন, প্রমা, খেলাঘরসহ বিভিন্ন সংগঠনও শ্রদ্ধা জানায়। বিভিন্ন স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের অংশগ্রহণে বেলা গড়াতেই ফুলে ফুলে ভরে ওঠে শহীদ মিনার। শ্রদ্ধা জানানোর পুরো সময় মিছিল-স্লোগানে মুখর ছিল শহীদ মিনার এলাকা।

বিজয় দিবস উপলক্ষে ১৬ ডিসেম্বর সকাল ৮টায় এমএ আজিজ স্টেডিয়ামে আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় পতাকা উত্তোলন, বাংলাদেশ পুলিশ, আনসার-ভিডিপি, বিএনসিসি, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স, কারারক্ষী, স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসাসহ বিভিন্ন শিক্ষা ও সামাজিক প্রতিষ্ঠান, বাংলাদেশ স্কাউট, রোভার স্কাউট, গার্লস গাইড এবং শিশু-কিশোর সংগঠনগুলোর অংশগ্রহণে বর্ণাঢ্য কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত হয়।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এল এ) মাসুদ কামাল, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সুমনী আখতার, চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের উপপরিচালক (স্থানীয় সরকার) বদিউল আলম, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মু. মাহমুদ উল্লাহ মারুফ, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মো. আবু রায়হান দোলন প্রমুখ।

পূর্ববর্তী নিবন্ধতৃতীয় স্থান মদ্রিচের ক্রোয়েশিয়ার
পরবর্তী নিবন্ধনৌকার বিদ্রোহী প্রার্থীরা ‘ক্ষমা পাচ্ছেন’