বাংলাদেশে মাদকের বিস্তার ঘটে আশির দশকে। নব্বইয়ের দশকে ফেনসিডিলের জন্য মাদক সর্বগ্রাসী রূপ নেয়। শুধুমাত্র ঢাকাতেই প্রতিদিন ১৪ লাখ পিস ইয়াবার চাহিদা রয়েছে। রাজধানীর বিভিন্ন অভিজাত এলাকায় খোলা হয়েছে সিসা বার। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কেন্দ্রীয় রাসায়নিক পরীক্ষাগারে কয়েকটি সীসাবার থেকে আটটি নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর পাঁচটিতে গাঁজার উপস্থিতি পাওয়া যায়। বাজারে প্রবেশ করেছে নতুন ভয়ংকর মাদক আইস। আইস বা ক্রিস্টাল মেথ ইয়াবার চেয়েও ৫০ গুণ বেশি ক্ষতি করে। এর দাম এবং মৃত্যুর ঝুঁকি দুই-ই বেশি। ইয়াবার বিকল্প হিসেবে বাজারে খাট বা এনপিএসের পর আবির্ভাব ঘটলো আইস বা ক্রিস্টাল মেথ নামক নতুন এই মাদকের।
বিশ্ব জুড়ে আজ মাদক পাচার গভীর সংকটে রূপ নিয়েছে, আইন প্রয়োগকারী সংস্থার তথ্যানুযায়ী প্রতিবছর মাদকের পেছনে বিদেশে পাচার হচ্ছে দশ হাজার কোটি টাকার অধিক। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, মাদক আসক্তদের ৯০ ভাগ কিশোর, তরুণ, তরুণী। তাদের ৪৫ ভাগ বেকার, ৬৫ ভাগ আন্ডারগ্র্যাজুয়েট। মাদকাসক্তির থাবায় ঝরে যাচ্ছে অনেক সম্ভাবনা। ২০১৬ সালের জাতিসংঘের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে মাদকাসক্ত প্রায় ৬৮,০০,০০০। শতকরা ৮৪ ভাগ পুরুষ এবং ১৬ ভাগ নারী। ৩,৫০,০০০ লোক মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। ইংলিশ মিডিয়ামে পড়া একটি অংশকেও গিলে খাচ্ছে মাদক। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র, চাকরিজীবী, গৃহবধূ, ব্যবসায়ী, চিকিৎসক, আইনশৃঙখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যসহ সবাইকে সার্কেলে অন্তর্ভুক্ত করেছে মাদক ব্যবসায়ীরা।
মাদক গ্রহণের বড় কারণ হলো মাদকের সহজলভ্যতা। বন্ধু- সহপাঠীদের চাপে পড়ে অনেকে মাদক নিয়ে থাকে। বাবা-মায়ের আচরণ ও দৃষ্টিভঙ্গির কারণে অনেকে মাদক গ্রহণ করে। অনেকের মাঝে মাদক নিয়ে স্মার্ট হওয়ার প্রবণতা থাকে, যা তাকে ঠেলে দেয় মাদকের জগতে। মানসিক সমস্যা যেমন : হতাশা, একাকীত্ববোধ, বিষণ্নতার কারণে এসব থেকে রেহাই পেতে মাদককে বেছে নেয়। এন্টি সোশ্যাল পার্সোনালিটি, শৈশবে বিকাশে সমস্যা থাকলেও অনেকে মাদকাসক্ত হয়ে পড়ে।
ভালোবাসার সম্পর্ক ভেঙে যাওয়ায় মানসিক কষ্ট থেকে মুক্তি পেতে মাদক গ্রহণ করে। কৌতুহলের বশবর্তী হয়ে অনেকে মাদক নেয়ার পর এর প্রতি ঝুঁকে পড়ে।
মাদকাসক্তি বাংলাদেশের একটি অন্যতম সামাজিক সমস্যা। মাদকাসক্তির থাবায় ঝরে যাচ্ছে অনেক সম্ভাবনা। মাদকাসক্তির পরিণতি অকাল মৃত্যু। দৈহিক ক্ষতি, পরিপাকতন্ত্র, প্রজনন ও যৌন ক্ষমতা হ্রাস, মানসিক ক্ষতি। মাদক একজন মানুষের সকল সম্ভাবনাকে শেষ করে দেয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা মাদকাসক্তিকে মানসিক রোগ বলে চিহ্নিত করেছে। মাদকাসক্তি ঠেকাতে পরিবার থেকেই প্রথম প্রতিরোধ আসতে হবে। সামাজিক সচেতনতা বাড়াতে হবে। যুবসমাজের উল্লেখযোগ্য অংশ যদি মাদকাসক্ত থাকে, তবে জাতির পক্ষে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছুনো সম্ভব না।
বাংলাদেশের প্রয়োজন মাদকের বিরুদ্ধে সামাজিক ও আইনি যুদ্ধে অবতীর্ণ হওয়া। মাদকের বিরুদ্ধে বর্তমান সরকার জিরো টলারেন্স গ্রহণ করেছে। সরকারকে সবরকমের সহযোগিতা দিচ্ছে জাতিসংঘ। তবে মাদক পাপের আগ্রাসন ঠেকানোর জন্য আজ জরুরি হয়ে পড়েছে সবার সম্মিলিত উদ্যোগের, মাদকের বিরূপ প্রভাব সম্পর্কে সবার মধ্যে সচেতনতা তৈরির।