কমরেড মুজফ্ফর আহমদ। বিশ্ববরেণ্য রাজনীতিবিদ, বিপ্লবী, ভারত উপমহাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি ও কমিউনিস্ট আন্দোলনের পুরোধা ব্যক্তিত্ব। তিনি ‘কাকাবাবু’ নামেই পরিচিত। ১৮৮৯ সালের ৫ আগস্ট কমরেড মুজফ্ফর আহমদ চট্টগ্রাম জেলার সন্দ্বীপের মুসাপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবার নাম মুন্সি মনসুর আলি। মা চুনা বিবি। ১৯১০ সালে মুজফফর আহমদ নোয়াখালি জেলা স্কুলে ভর্তি হন। ১৯১৩ সালে ২৩ বছর বয়সে তিনি এই স্কুল থেকে দ্বিতীয় বিভাগে ম্যাট্রিক পাস করেন। তিনি কলকাতার বঙ্গবাসী কলেজ থেকে আইএ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। আইএ পড়াশুনার সময় তিনি কলকাতায় মুসলমান সাহিত্য সমিতির সভ্য হন।
১৯১৫ সালে সমিতির সহ-সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯১৬ সালে এক বছর ধরে এখানে ওখানে চাকরি করেন। ১৯১৭ সালে যোগ দেন বেঙ্গল গভর্নমেন্ট প্রেসের সহকারী স্টোর কিপার পদে। এরপর গভর্নমেন্টের হোম ডিপার্টমেন্টে উর্দু থেকে বাংলা অনুবাদকের কাজ করেন। পরবর্তী সময়ে তিনি কলকাতায় স্কুল পরিদর্শকের অফিসে কাজ করেন। ১৯১৮ সালে তিনি বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য সমিতির সার্বক্ষণিক কর্মী হন। ১৯২০ সালের শুরুর দিকে ৪৯ নম্বর বেঙ্গল রেজিমেন্ট ভেঙ্গে দেওয়া হলে নজররুলর সৈনিক জীবনের অবসান ঘটে এবং তিনি কলকাতায় চলে আসেন।
তিনি কলকাতায় কমরেড মুজফ্ফর আহমদের সাথে সাহিত্য সমিতির অফিসে থাকতে শুরু করলেন। এসময় মুজফফর আহমদ ও কাজী নজরুল ইসলাম দীর্ঘদিন একসাথে বসবাস করেন। ওই সময় শেরে বাংলা এ. কে. ফজলুল হক ছিলেন কংগ্রেস ও খেলাফতের একজন অন্যতম নেতা। মুজফফর আহমদ তাঁর কাছে একটি পত্রিকা প্রকাশের প্রস্তাব দেন। তিনি সম্মতি প্রদান করেন। তারই ধারাবাহিকতায় ১৯২০ সালের ১২ জুলাই এ. কে. ফজলুল হক প্রতিষ্ঠিত সান্ধ্য দৈনিক ‘নবযুগ’-এর যুগ্ম সম্পাদক হন মুজফফর আহমদ। আর সম্পাদক ছিলেন কাজী নজরুল ইসলাম। ১৯২৬ সালের ১২ আগস্ট থেকে ‘গণবাণী’ সাপ্তাহিক প্রকাশিত হতে থাকে।
এই পত্রিকার সম্পাদনার দায়িত্ব পড়ে মুজফফর আহমদের উপর। ১৯৭১ সাল থেকে ১৯৭৩ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ ৫২ বছর কমরেড মুজফ্ফর আহমদ কর্মীদের মার্কসবাদী সাহিত্য অধ্যয়ন, প্রকাশ ও প্রচারের তাৎপর্য ব্যাখ্যা করেছেন। ১৯৩৬ সালে ‘গণশক্তি’ পুনঃপ্রকাশ করেন এবং এরপর ‘আগে চলো’ পত্রিকা প্রকাশ করেন। ১৯৪৫ সালের ডিসেম্বরে বাংলা ও হিন্দিতে দৈনিক ‘স্বাধীনতা’ এবং সাপ্তাহিক ‘মতামত প্রকাশ করেন। কথাসাহিত্যিক হিসেবেও তার খ্যাতি ছিলো। তিনি ১৯৭৩ সালের ১৮ ডিসেম্বর মৃত্যুবরণ করেন।