২০০৮ সালে দেশে সাক্ষরতার হার কমে গিয়েছিল দাবি করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, “এটার কারণ আছে। খালেদা জিয়া একটা মেট্রিক পরীক্ষা দিয়েছিল। উর্দু আর অংক এই দুই সাবজেক্টে পাস করেছিল; আর কোনোটায় পাস করেনি, ফেল। উর্দু খুব প্রিয় সাবজেক্ট তার কারণ পাকিস্তান প্রীতি। আর টাকা গোনা, এজন্য অংকে পাস। এছাড়া আর সাবজেক্টে কিন্তু পাস করেনি। জিয়াউর রহমান ইন্টারমিডিয়েট পাশ। আর তারেক জিয়া যে কী পাস তারও কোনো ঠিকানা নাই। তাদের কথা হচ্ছে, ‘আমরা পড়ি নাই তো তোরা পড়বি ক্যান।’ তাই ৬৫ ভাগ থেকে আবার ৪৫ ভাগে নামিয়ে আনল সাক্ষরতার হার। আর আমরা নিরক্ষরতামুক্ত বাংলাদেশ করার জন্য বয়স্ক শিক্ষার জন্য যে প্রজেক্ট নিলাম, সেটাও বন্ধ করে দিল।”
আজ বৃহস্পতিবার (১৫ ডিসেম্বর) রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন যুব মহিলা লীগের সম্মেলনে এ বিষয়ে কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, “ব্যাংকে ‘টাকা নেই’ গুজব বিশ্বাস করে অনেকে টাকা তুলে ঘরে রেখেছে। আর ঘরে রাখতে গিয়ে দেখে টাকা চুরি হয়ে যায় অর্থাৎ চোরের সুযোগ হয়ে গেছে।”
তাই দেশের মানুষকে ‘গুজবে’ কান না দেওয়ার পাশাপাশি ব্যাংক থেকে টাকা তুলে ঘরে জমিয়ে না রাখার পরামর্শ দেন তিনি।
‘গুজব রটনাকারীদের’ উদ্দেশে তিনি বলেন, “যারা এই গুজব ছড়াচ্ছে তারা চোরদের এজেন্ট কি না সেটা আমি জানি না। মনে হয় তারা চোরদেরই এজেন্ট হবে। মানে চোরের সুযোগ করে দেওয়া। সেইক্ষেত্রে আমি বলব, গুজবে কেউ যেন কান না দেয়। গুজবে কান না দিয়ে দেশের মানুষের জন্য, দেশের কল্যাণে আমরা যে কাজ করে যাচ্ছি সেখানে আমরা তাদের সমর্থন চাই।”
মহামারী আর ইউক্রেইন যুদ্ধের কারণে বিশ্বে ঘাদ্য ঘাটতি আর মন্দা তৈরি হয়েছে বলে মন্তব্য করেন শেখ হাসিনা। এজন্য দেশের মানুষকে অনাবাদি বা ফেলে রাখা জমি চাষ করার পরামর্শ দেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “পাশাপাশি বাড়ি-ঘরের ছাদে যেখানে যে পারবেন ছাদ বাগান করুন। নিজের ঘরে যা পারেন কিছু উৎপাদন করুন, সাশ্রয় করুন। নিজেরা কিছু সাশ্রয় করতে হবে এবং সঞ্চয় করতে হবে কারণ সারাবিশ্বে যে অর্থনৈতিক মন্দার ধাক্কা, এখান থেকে তো বাংলাদেশও বাইরে যাবে না; বাংলাদেশের ওপরও তো সেটা এসে পড়ে।”
আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলেই দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন হয় দাবি করে বিএনপির সমালোচনা করেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, “আমরা জনগণের সেবক হিসেবে কাজ করি। আর বিএনপি মানেই হচ্ছে অত্যাচার, নির্যাতন আর দেশে দুঃশাসন, লুটপাট, দুর্নীতি, জঙ্গিবাদ, বাংলা ভাই– এটাই। নারী নীতিমালা তো বিসর্জন দিলই। নারীর অধিকার পর্যন্ত কেড়ে নিল।”
বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শামসুন্নাহার হলে ছাত্রদলের কর্মকাণ্ড এবং বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) ছাত্রদলের দুই পক্ষের গোলাগুলিতে শিক্ষার্থী সাবিকুন নাহার সনির মৃত্যুর ঘটনাও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী ।
তিনি বলেন, “তাদের হাতে যেভাবে আমাদের নেতাকর্মী বা সাধারণ মানুষ নির্যাতিত, তারপর তাদের শোষণ অত্যাচার, নিরর্যাতন, মানিলন্ডারিং…। এছাড়া আর কী তারা দিতে পেরেছে দেশকে, কিছুই দিতে পারেনি।”
নির্বাচন প্রসঙ্গে বিএনপি নেতাদের সমালোচনার জবাবে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, “আজকে বিএনপি নির্বাচন নিয়ে কথা বলে। ২০০৮ এর নির্বাচন নিয়ে তো কেউ প্রশ্ন তুলতে পারেনি। জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে কোনোভাবেই কি ওই নির্বাচন নিয়ে কোনো প্রশ্ন উঠেছে? ওঠে নাই। কেউ কোনো প্রশ্ন করে নাই। তাহলে নির্বাচনের ফলাফলটা কী ছিল? নির্বাচনের ফলাফল অনেকে ভুলে গেছেন। তিনশ’ আসনের সেই নির্বাচনে বিএনপি তখন কয়টা আসন পেয়েছিল সেটা হয়ত বিএনপি নেতারাও ভুলে গেছেন। মাত্র ৩০টা আসন পেয়েছিল বিএনপি। মাত্র ৩০টা আসন ওই তিনশ’ আসনের মধ্যে তারা পায় ২০০৮ এর নির্বাচনে। আর জাতীয় পার্টি পায় ২৭টা আসন।ওই তিনটা আসন বেশি ছিল দেখে খালেদা জিয়া লিডার অভ দ্যা অপজিশনে আবার সুযোগ পেয়েছিল। জাতীয় পার্টি যদি আর ৩/৪টা আসন পায় তাহলে আর বিএনপির খালেদা জিয়া লিডার অভ দ্যা অপজিশনও তখনই হতে পারত না। এটা হলো বাস্তবতা।”
যুব মহিলা লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলনে সংগঠনটির সদ্য বিদায়ী সভাপতি নাজমা আক্তার, সাধারণ সম্পাদক অপু উকিল ও আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বক্তব্য দেন।