মানব দেহের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ দুই হাত, দুই পায়ের কোনোটিই নেই। পায়ের স্থানে আছে পা সদৃশ খাটো বিকল অঙ্গে দুটি আঙুল। শরীরের এই অক্ষমতাকে পেছনে ফেলে সেই দুটি আঙুল দিয়ে লিখে এসএসসি পাস করলেন অদম্য ইচ্ছা শক্তির প্রতিবন্ধী মহেশখালীর সালাহ উদ্দিন। উপজেলার কালারমার ছড়া ইউনিয়নের উত্তর নলবিলা গ্রামের দিনমজুর হতদরিদ্র মো. জালাল ও আয়েশা বেগম দম্পতির ২ ছেলে ও ৪ মেয়ের মধ্যে পঞ্চম সন্তান সালাহ উদ্দিন।
বিশেষ শরীর নিয়ে জন্ম নেওয়া সালাহ উদ্দিন গ্রামের অন্যান্য শিশুদের সাথে স্বাভাবিকভাবে শিক্ষা অর্জনের উদ্দেশ্যে ভর্তি হয়েছিলেন নিজ গ্রামের উত্তর নলবিলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। সফলভাবে প্রাথমিকের গণ্ডি পেরিয়ে ভর্তি হয় উত্তর নলবিলা উচ্চ বিদ্যালয়ে। প্রাইমারি থেকে মাধ্যমিকে যাওয়া পর্যন্ত মায়ের কোলই ছিল তার ভরসা। মা তাকে কোলে করে স্কুলে আনা নেওয়া করতেন। মায়ের বার্ধক্য শরীর এখন আর তাকে বহন করতে পারেন না। মায়ের সহায়তায় চালিত তিন চাকার একটি হুইল চেয়ারে সে দৈনন্দিন চলাফেরা ও স্কুলে যাতায়াত করে। বর্তমানে গাড়িটিও নষ্ট হয়ে গেছে। জেএসসিতে জিপিএ ৩.৪২ পেয়ে সফলতার সহিত উত্তীর্ণ হয়।
পড়ালেখার অদম্য স্পৃহা নিয়ে এগোতে থাকে। অবশেষে ২০২২ সালে অনুষ্ঠিত এসএসসি পরীক্ষায় মানবিক বিভাগ থেকে অংশগ্রহণ করে সে জিপিএ ২.০০ পেয়ে সফলতার সহিত উত্তীর্ণ হন। শুধু পড়ালেখা নয়, সালাউদ্দিন সাংস্কৃতিক চর্চাও চালিয়ে যাচ্ছে। স্কুল কলেজ ও প্রতিবন্ধীদের জন্য বিভিন্ন দিবসে আয়োজিত অনুষ্ঠানে গানও করে। হাত–পা না থাকলেও পিছিয়ে নেই। আধুনিক যুগের সাথে তাল মিলিয়ে অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল ফোনও চালাতে পারে। তবে হাতে নয় জিহ্বার টাচে। ফেসবুক আইডিও আছে তার।
এসএসসি উত্তীর্ণের পর প্রতিক্রিয়ায় সালাহ উদ্দিন দৈনিক আজাদীকে জানান, তার বৃদ্ধ বাবা কিডনি রোগে অসুস্থ। তিনি তেমন আয় রোজগার করতে পারে না। দুই ভাই, চার বোনের মধ্যে সে পঞ্চম। তিন বোনের বিয়ে হয়ে গেছে। ছোট এক বোনও তার সাথে এবার এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে। সেও পাস করেছে। মূলত ভগ্নিপতি মা–বাবা এবং তাদের পড়ালেখার খরচ যোগায়। সালাউদ্দিনের একমাত্র বড় ভাই বিয়ে করে স্বপরিবারে চলে গেছেন শ্বশুরবাড়ি এলাকায়। মূলত মানুষের দান ও ভালোবাসায় তাদের জীবন চলে।
আশেক উল্লাহ রফিক এমপি তাকে একটি গাড়ি দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছিলেন। কিন্তু গাড়িটি এখনো পাওয়া যায়নি। সে জানায় লেখাপড়া করে ব্যাংকার হবে। জায়গা জমি সহায় সম্বল বলতে কিছুই নেই। নেই কোন আয় রোজগারের পন্থা। মাথা গোঁজার ঠাঁই বসতবাড়িটিও সরকারি খাস জায়গায়। তাই নিজের ও ছোট বোনের পড়ালেখা কিভাবে চালিয়ে যাবে তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেন। সরকারি সংস্থা ও দানবীর ব্যক্তিদের কাছে সালাউদ্দিন সহায়তা কামনা করেন। তারা যদি একটু সহায়তার হাত বাড়ায় তারাও সমাজে অন্য দশ জন মানুষের মতো বাঁচতে পারবে।