৫১তম বিজয়ের মাসে সরকারের প্রধান চ্যালেঞ্জ : বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পতন থামানো এবং লাইনচ্যুত গণতন্ত্রকে পুনরুদ্ধার
২০২১ সালে আমরা স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন করেছি। তখন প্রায় সকল গুরুত্বপূর্ণ সূচক বিশ্বকে জানান দিয়ে চলেছিল যে বাংলাদেশ একটি আত্ম-নির্ভরশীল এবং দ্রুত-বর্ধনশীল অর্থনীতিতে পরিণত হতে চলেছে। কিন্তু, ২০২২ সালের ডিসেম্বর মাসের শুরুতে বাংলাদেশের অর্থনীতি একটি বিপজ্জনক সংকটে নিমজ্জমান, তাহলো দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের অভূতপূর্ব পতনের ধারা। ২০২১ সালের আগস্টে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বেড়ে ৪৮ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়েছিল। ঐ ৪৮ বিলিয়ন ডলার থেকে এক বছর দুই মাসের মধ্যেই রিজার্ভ ২২ বিলিয়ন ডলার কমে নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের পাওনা পরিশোধের পর (আইএমএফ এর নির্দেশনা অনুযায়ী নূতন হিসাব পদ্ধতি অনুসরণের কারণে) ২৬ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে এসেছে। এহেন পতনের ধারা অত্যন্ত বিপজ্জনক।
রিজার্ভের পতনের এই ধারাকে আমি ২০২২ সালের এপ্রিলে বিপজ্জনক আখ্যায়িত করায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ইংগিত করে ‘অর্বাচীন’ বলে গালমন্দ করেছিলেন। এখন প্রমাণিত হয়ে গেছে আসলে কারা ‘অর্বাচীন’। ইতোমধ্যে দেশের আমদানি নিয়ন্ত্রণের নানাবিধ ব্যবস্থা গৃহীত হওয়ায় গত আগস্ট মাস থেকে এল/সি খোলা ক্রমান্বয়ে কমে এসেছে, কিন্তু হুন্ডি ব্যবস্থায় রেমিট্যান্স প্রেরণকে কোনমতেই নিরুৎসাহিত করা যাচ্ছে না। হুন্ডি ব্যবসার রমরমা অবস্থা দিনদিন বাড়তে থাকার প্রধান কারণ আন্তঃ-ব্যাংক লেনদেনের ক্ষেত্রে বিদ্যমান ডলারের দামের সাথে কার্ব মার্কেটের ডলারের দামের পার্থক্য ৭-৮ টাকায় স্থির থাকা। এই পার্থক্য বজায় থাকলে ডলারের দামের ক্রম-বাজারিকরণের সিদ্ধান্ত তেমন সুফল দেবে না, হুন্ডি ব্যবসা চাঙাই থেকে যাবে শক্তিশালী চাহিদার কারণে।
২০২০ সালে করোনা ভাইরাস মহামারি শুরু হওয়ার পর চাহিদা এবং সরবরাহ উভয় দিক্ থেকে হুন্ডি ব্যবসা অনেকখানি গুটিয়ে গিয়েছিল, যার সুফল হিসেবে বাংলাদেশ ২০১৯-২০ এবং ২০২০-২১ অর্থ-বছরে ফর্মাল চ্যানেলে রেমিট্যান্সের উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধি অর্জনে সমর্থ হয়েছিল। এই প্রবৃদ্ধির কারণেই বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ দ্রুত বেড়ে গিয়ে ২০২১ সালের আগস্টে ৪৮ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করেছিল।
২০২১ সালের দ্বিতীয়ার্ধে যখন করোনা ভাইরাস মহামারির তান্ডব কমে আসে তখন আবার চাঙা হয়ে উঠে হুন্ডি ব্যবসা। ১১ সেপ্টেম্বর ২০২২ তারিখে সরকারের ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্ট (সিআইডি) এর বরাত দিয়ে দেশের পত্র-পত্রিকায় খবর বেরিয়েছে যে শুধু হুন্ডি প্রক্রিয়ায় দেশ থেকে বর্তমানে বছরে ৭৫ হাজার কোটি টাকা পাচার হয়ে যাচ্ছে। এর সাথে আমদানির ওভারইনভয়েসিং, রফতানির আন্ডারইনভয়েসিং এবং রফতানি আয় দেশে ফেরত না আনার মত মূল সমস্যাগুলো যোগ করলে দেখা যাবে প্রত্যেক বছর এখন কমপক্ষে দেড় লাখ কোটি টাকার সম-পরিমাণের বৈদেশিক মুদ্রা থেকে বাংলাদেশ বঞ্চিত হচ্ছে।
এর মানে, বাংলাদেশ থেকে বছরে কমপক্ষে ১৫/১৬ বিলিয়ন ডলার পুঁজি এখন বিদেশে পাচার হয়ে চলেছে (অথবা ডলার দেশে আসছে না), যার অর্ধেকের মত পাচার হচ্ছে হুন্ডি প্রক্রিয়ার বেলাগাম বিস্তারের মাধ্যমে। ২০২১-২২ অর্থ-বছরে প্রবাসী বাংলাদেশীদের প্রেরিত রেমিট্যান্স গত ২০২০-২১ অর্থ-বছরের ২৪.৭৭ বিলিয়ন ডলার থেকে ১৫ শতাংশ কমে ২১.০৩ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে, যার প্রধান কারণ হুন্ডি প্রক্রিয়ায় রেমিট্যান্স প্রেরণ আবার চাঙা হওয়া। ২০২২ সালের আগস্ট, সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসে ফর্মাল চ্যানেলে রেমিট্যান্স গত বছরের ঐ মাসগুলোর তুলনায় কমে গেছে, যাকে ‘অশনি সংকেত’ বলা চলে।
১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর মুক্তিযুদ্ধের বিজয়লগ্নে এই নব্য-স্বাধীন দেশটি অর্থনৈতিকভাবে আদৌ টিকবে কিনা তা নিয়ে বিশ্বের উন্নয়ন-অর্থনীতিবিদদের গভীর হতাশা ছিল। ১৯৭১ সালের ডিসেম্বরে জনসন নামের একজন মার্কিন কূটনীতিক যখন বাংলাদেশ ‘ইন্টারন্যাশনাল বাস্কেট কেস’ হবে বলে মন্তব্য করেছিলেন তখন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নিক্সনের তদানীন্তন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ও ১৯৭৩ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সেক্রেটারী অব স্টেট ডঃ হেনরী কিসিঞ্জার তাতে সায় দিয়েছিলেন।
বাংলাদেশের ওপর ১৯৭৫ সালে প্রকাশিত ফালান্ড ও পারকিনসনের বিশ্বখ্যাত গবেষণা-পুস্তকটির নামই ছিল বাংলাদেশ–এ টেস্ট কেস অব ডেভেলাপমেন্ট। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুর সরকার অনেক সাধ্য-সাধনা করে বাংলাদেশকে জাতিসংঘের ‘স্বল্পোন্নত দেশের’ ক্যাটেগরিতে অন্তর্ভুক্ত করাতে সক্ষম হয়েছিল, যাতে বাংলাদেশ বৈদেশিক অনুদান, খাদ্য সহায়তা এবং ‘সফট লোন’ পাওয়ার ব্যাপারে বিশেষ বিবেচনা পায়। বঙ্গবন্ধু স্বল্পোন্নত দেশের মর্যাদাহীন ইমেজের ব্যাপারে সজাগ ছিলেন বলেই ঘোষণা দিয়েছিলেন এক দশকের মধ্যেই বাংলাদেশকে ঐ অপমানজনক অবস্থান থেকে বের করে আনবেন। কিন্তু, বাংলাদেশের সমরপ্রভুদের অবৈধ সরকারগুলো বিভিন্ন দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থার বর্ধিত বৈদেশিক সহায়তার লোভে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণকে সযতনে এড়িয়ে চলেছিল।
ফলে, এক দশকের স্থলে বাংলাদেশের ৪৩ বছর লেগেছে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের সোপানে পৌঁছানোর জন্যে। ২০১৮ সাল থেকে বাংলাদেশ জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক কাউন্সিল নির্ধারিত ‘উন্নয়নশীল দেশের’ ক্যাটেগরিতে উত্তরণের প্রক্রিয়া শুরু করেছে। ঐ প্রক্রিয়ার সফল পরিসমাপ্তির পর ২০২৪ সালে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে পরিগণিত হবে। (অবশ্য, করোনা ভাইরাস মহামারির বিপর্যয়ের কারণে স্বল্পোন্নত দেশের প্রাপ্য সুবিধাগুলো ২০৩৩ সাল পর্যন্ত বহাল রাখার জন্য বাংলাদেশ জাতিসংঘের কাছে আবেদন করেছে। এর ফলে ২০২৬ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশের প্রাপ্য সুবিধাগুলো ভোগ করতে পারবে)। এর আগে ২০১৫ সালে বিশ্ব ব্যাংকের ‘নিম্ন আয়ের দেশ’ ক্যাটেগরি থেকে বাংলাদেশ ‘নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশ’ ক্যাটেগরিতে উত্তীর্ণ হয়েছে। গত দু’দশক ধরে বাংলাদেশের জিডিপি’র প্রবৃদ্ধির হার ৫.৫ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ২০১৮-১৯ অর্থ-বছরে ৮.২ শতাংশে পৌঁছে গিয়েছিল। করোনা ভাইরাস মহামারির আঘাতে ২০১৯-২০ অর্থ-বছরে প্রবৃদ্ধির হার ৫.২৪ শতাংশে নেমে গেলেও বাংলাদেশের মাথাপিছু জিএনআই ২০১৯ অর্থ-বছরের ১৯০৯ ডলার থেকে বেড়ে ২০২২ সালের ৩০ জুন তারিখে ২৮২৪ ডলারে পৌঁছেছে বলে সরকার দাবি করছে।
আইএমএফ এর প্রাক্কলন বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর চাইতে কম হলেও তারা বলেছে, ২০২০ সালে বাংলাদেশ একটি মাইলফলকে পৌঁছেছে। ২০২০ সালের অক্টোবরে আইএমএফ তাদের ওয়ার্ল্ড ইকনমিক আউটলুকে দাবি করেছে, করোনা ভাইরাস মহামারির আঘাতে ভারতীয় অর্থনীতি ১০.৩ শতাংশ সংকুচিত হয়ে ভারতের মাথাপিছু জিডিপি ২০১৯ সালের ২১০০ ডলার থেকে ২০২০ সালের ডিসেম্বরে ১৮৭৭ ডলারে নেমে গেছে। অন্যদিকে, বাংলাদেশের অর্থনীতি মহামারির ক্ষতি দ্রুত কাটিয়ে উঠে বাংলাদেশ ৩.৮ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন করার ফলে ২০২০ সালের ডিসেম্বরে বাংলাদেশের মাথাপিছু জিডিপি ১৮৮৮ ডলারে পৌঁছেছে। এর মানে, ২০২০ সালে বাংলাদেশের মাথাপিছু নমিনাল জিডিপি ভারতের মাথাপিছু জিডিপিকে ছাড়িয়ে গেছে। মাথাপিছু জিডিপি’র বিচারে বাংলাদেশ পাকিস্তানকে বহু আগেই ছাড়িয়ে গেছে, ২০২০ সালে ভারতকেও ছাড়িয়ে গেল।
কিন্তু, মাথাপিছু জিডিপি যেহেতু একটি গড় সূচক তাই মাথাপিছু জিডিপি প্রবৃদ্ধির সাথে সাথে যদি দেশে আয়বন্টনে বৈষম্যও বাড়তে থাকে তাহলে নিম্নবিত্ত ও নিম্ন-মধ্যবিত্ত সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ প্রবৃদ্ধির ন্যায্য হিস্যা থেকে বঞ্চিত থেকে যায়। অর্থনীতিতে আয়বৈষম্য বৃদ্ধি বা হ্রাস পরিমাপ করার জন্য জিনি সহগ সবচেয়ে বহুলব্যবহৃত পরিমাপক। কোন অর্থনীতির জিনি সহগ যখন বেড়ে ০.৫ এর কাছাকাছি পৌঁছে যায় বা ০.৫ অতিক্রম করে তখন ঐ দেশকে উচ্চ আয়বৈষম্যের দেশ অভিহিত করা হয়। ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশের জিনি সহগ ছিল মাত্র ০.৩৩, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর ২০১৬ সালের খানা আয় ও ব্যয় জরিপ মোতাবেক সেটা বেড়ে ০.৪৮৩ এ পৌঁছে গেছে। ধনাঢ্য ও উচ্চবিত্ত জনগোষ্ঠিগুলোর দখলে জিডিপি’র ক্রমবর্ধমান অংশ পুঞ্জীভবনের ফল কী হতে পারে তা নাটকীয়ভাবে ধরা পড়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র-ভিত্তিক গবেষণা সংস্থা ‘ওয়েলথ এক্স’ এর প্রতিবেদনে, ২০১২ সাল থেকে ২০১৭ এই পাঁচ বছরে অতি-ধনীর সংখ্যা-বৃদ্ধির বিচারে বাংলাদেশ বিশ্ব-চ্যাম্পিয়ন হয়ে গেছে। ঐ পাঁচ বছরে বাংলাদেশে ৩০ মিলিয়ন ডলারের বেশি সম্পদের মালিক অতি-ধনীর সংখ্যা বেড়েছে বার্ষিক ১৭.৩ শতাংশ হারে। দেশের আয় এবং সম্পদের এহেন পুঞ্জীভবন বাংলাদেশের রাজনীতিকে ‘ক্রোনি ক্যাপিটালিজমের’ নিকৃষ্ট নজির হিসেবে বিশ্বের কাছে তুলে ধরছে।
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ রাষ্ট্রের চারটি মূল নীতির মধ্যে ২০১০ সালে সুপ্রিম কোর্টের ঐতিহাসিক রায়ের মাধ্যমে সমাজতন্ত্র পুনঃস্থাপিত হয়েছে। ২০১১ সালে সংসদে পাশ হওয়া সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে ক্ষমতাসীন মহাজোট সে রায়কে সংবিধানে ফিরিয়ে আনলেও সরকার এখনো ‘মুক্ত বাজার অর্থনীতির’ অহিফেনের মৌতাতে মেতে রয়েছে।
২০০১-২০০৫–ঐ পাঁচ বছরে পাঁচবার বাংলাদেশ দুর্নীতিতে বিশ্ব-চ্যাম্পিয়নশীপ অর্জন করেছিল, এবার বিশ্ব-চ্যাম্পিয়নশীপ অর্জন করলো ধনকুবেরের সংখ্যাবৃদ্ধির দৌঁড়ে। এসব ‘রবার ব্যারন’ সৃষ্টির জন্যে কি বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে স্বাধীনতা ছিনিয়ে এনেছিলাম আমরা? একটি সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রে আয়বৈষম্য এভাবে বাড়তেই পারে না, যদি শাসকরা সমাজতন্ত্রকে ‘বাত্ কা বাত’্ বানিয়ে না ফেলে! এসব ধনাঢ্য ব্যক্তির কাছেই দেশের খেলাপি ব্যাংক ঋণের ৮০ শতাংশেরও বেশি আটকে রয়েছে, এবং খেলাপিঋণের সিংহভাগ বিদেশে পাচার হয়ে যাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র-ভিত্তিক গবেষণা সংস্থা গ্লোবাল ফাইনেন্সিয়াল ইন্টেগ্রিটির হিসাব মোতাবেক এক দশক ধরে প্রতি বছর বাংলাদেশ থেকে বিদেশে পুঁজি পাচার হয়ে চলেছে গড়ে ৭-৯ বিলিয়ন ডলার, এখন সরকারের অঙ্গ-প্রতিষ্ঠান সিআইডি বলছে শুধু হুন্ডি প্রক্রিয়াতেই প্রতি বছর পুঁজিপাচার হচ্ছে ৭৫ হাজার কোটি টাকা।
দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে ২০২১ সালের দুর্নীতির র্যাংকিং অনুযায়ী বাংলাদেশ আফগানিস্তানের পর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ। এখনো এদেশের জনগণের জীবনের সবচেয়ে বেশি দুর্দশা, যাতনা ও হয়রানি ঘটিয়ে চলেছে সর্বব্যাপ্ত দুর্নীতি। ২০১৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে আওয়ামী লীগ দুর্নীতির ব্যাপারে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি গ্রহণের অঙ্গীকার করেছিল, কিন্তু গত চার বছরে সরকার এই অঙ্গীকার পূরণকে সত্যিকার অগ্রাধিকার দিচ্ছে না। হুন্ডি ডলারের চাহিদার দিক্ বিবেচনা করলে হুন্ডি প্রক্রিয়ায় বিদেশে পুঁজিপাচারের সাথে দুর্নীতির ওতপ্রোত সম্পর্ক রয়েছে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে সত্যিকারভাবে কঠোর না হলে পুঁজিপাচার দমন করা অসম্ভব। পুঁজিপাচার দমন না করলে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পতন থামানো যাবে না। তাই, আবারো মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে প্রতিজ্ঞাটি স্মরণ করিয়ে দিলাম।
সবশেষে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে আরেকটি মিনতি করছি, ২০১৮ সালের নির্বাচনে লাইনচ্যুত গণতন্ত্রকে আবারো লাইনে পুনঃস্থাপন করুন। আপনারা জনগণের নাড়িস্পন্দন ধরতে পারেননি, ঐ নির্বাচনে ব্যালট জবরদখলের মোটেও প্রয়োজন ছিল না। বিএনপিও বিলেত থেকে আমদানি করা চাণক্য-চাল চালছে প্রতিটি নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য। এদেশে অদূর ভবিষ্যতে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ফেরত আসবে না। অতএব, বর্তমান নির্বাচন ব্যবস্থার ত্রুটি সংশোধনে তাদেরকেও মনোনিবেশ করতেই হবে। দেশে অদূর ভবিষ্যতে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার পরিবর্তন হবে কিনা সে সম্পর্কে জনমনে সর্বনাশা আস্থার সংকট সৃষ্টি হয়েছে। আমার মতে, ভবিষ্যতে অবাধ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হলে সরকারী দলের পুনর্নির্বাচিত হওয়ার চাবিকাঠি ধারণ করছে দুর্নীতি, পুঁজি লুন্ঠন ও পুঁজি পাচারের বিরুদ্ধে তাদের অঙ্গীকারকে জনগণের কাছে বিশ্বাসযোগ্য করে তোলা। নির্বাচনে জেতার জন্য তাহলে ব্যালট জবরদখলের প্রয়োজন হবে না।
লেখক : সাবেক সভাপতি, বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি, একুশে পদকপ্রাপ্ত অর্থনীতিবিদ ও অবসরপ্রাপ্ত প্রফেসর, অর্থনীতি বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়











